কেন নেপালে যাচ্ছেন ভারতীয় সেনাপ্রধান?
মনোজ মুকন্দ নারাভানে - ছবি : সংগৃহীত
কাঠমান্ডু ও নয়া দিল্লির কর্মকর্তারা ভারতীয় সেনাপ্রধান মনোজ মুকন্দ নারাভানের নেপাল সফরের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন।সীমান্ত বিরোধ নিয়ে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক সাম্প্রতিক ইতিহাসের সর্বনিম্ন পর্যায়ে উপনীত হওয়ার পর এই প্রথম উচ্চপর্যায়ের কোনো সফর অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
নভেম্বরের প্রথম দিকে এই সফর হওয়ার কথা। এই সফরের আনুষ্ঠানিক কারণ হিসেবে বলা হয়েছে যে দুই দেশের সেনাবাহিনরি মিত্রতার ঐতিহ্য হিসেবে নারাভানেকে নেপাল সেনাবাহিনীর সম্মানসূচক জেনারেল পদবিতে ভূষিত করা হবে। তবে মূল কারণ সম্ভবত নেপালের সাথে বিরোধের অবসানের চেষ্টা করা। বিশেষজ্ঞ ও দুজন সিনিয়র কর্মকর্তা পোস্টকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
গেজা শর্মা ওয়াগলে বলেন, বস্তুত এই সফর হলো দীর্ঘ দিন ধরে চলতে থাকা ভূখণ্ডগত বিরোধের পর সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য ভারতের পক্ষ থেকে শান্তির উদ্যোগ। আমি মনে করি, এই সফর দুই দেশের মধ্যকার অতি প্রয়োজনীয় সংলাপ আবার শুরু করার কাজে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।
তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক অচলাবস্থার মধ্যে এই সফর হওয়ায় এই সফর হবে অর্থপূর্ণ।
এই সফরের ব্যাপারে অবগত কর্মকর্তারা পোস্টকে বলেন, সেনাপ্রধানের সফরের এজেন্ডায় সীমান্ত বিরোধ নিয়ে আলোচনার বিষয়টি না থাকলেও দুই দেশ সর্বোচ্চ পর্যায়ে এ নিয়ে মত বিনিময় করতে পারে। আর তা স্বাভাবিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে।
নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রদীপ গায়ালি পোস্টকে বলেছেন, সরকার আশা করছে যে এ ধরনের উচ্চপর্যায়ের সফর সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে সহায়ক হবে। তিনি বরেন, আমরা নতুন মানচিত্র প্রকাশ করার পর ভারতীয় পক্ষ নিশ্চিতভাবেই কিছু সমস্যায় পড়েছে। তবে আলোচনার কোনো বিকল্প নেই। এ ধরনের সফর সীমান্ত বিরোধ নিয়ে আলোচনার পরিবেশ সৃষ্টি করবে।
ভারতে নিযুক্ত সাবেক রাষ্ট্রদূত দীপ কুমার উপাধ্যায় বলেন, এই সফর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আবার স্বাভাবিক পর্যায়ে ফিরিয়ে নিতে সহায়ক হবে। তিনি বলেন, তবে আমাদের উচিত হবে অপ্রয়োজনে অন্যদের সমালোচনা করা বন্ধ করা। কারণ প্রতিটি রাষ্ট্রেরই সার্বভৌমত্ব উপভোগ করার অধিকার আছে। অন্যদের সমালোচনা করার কোনো দরকার নেই।
নেপাল ও ভারতের মধ্যকার সীমান্ত বিরোধ নতুন করে শুরু হয় গত বছরের নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। ওই সময় ভারত তার সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে নতুন যে রাজনৈতিক মানচিত্র প্রকাশ করে তাতে বিরোধপূর্ণ কালাপানি, লিপুলেখ ও লিম্পিয়াধুরাকে ভারতীয় এলাকা হিসেবে গণ্য করেছিল।
এর পর মে মাসের প্রথম সপ্তাহে বিরোধপূর্ণ এলাকায় ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং একটি নতুন রাস্তা উদ্বোধন করেন। নেপাল তখন বিরোধপূর্ণ এলাকা নিয়ে বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে আলোচনায় বসার জন্য ভারতের কাছে চারটি কূটনৈতিক নোট পাঠায়। কিন্তু সীমান্ত বিরোধ নিয়ে ভারত আলোচনায় বসতে অনীহা প্রকাশ করলে নেপাল সরকার বিরোধপূর্ণ এলাকাকে তাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে নতুন মানচিত্র প্রকাশ করে।
৮ মে লিপুলেখে রাজনাথের ৮০ কিলোমিটার লম্বা রাস্তা উদ্বোধনের এক সপ্তাহ পর জেনারেল নারাভানে বলেছিলেন যে আসলে চীনই দিল্লি ও কাঠমান্ডুর মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করছে। তিনি মে মাসে এক অনলাইন সম্মেলনে বলেন, তারা কী নিয়ে ক্ষুব্ধ তা আসলে আমি জানি না। বিশ্বাস করার কারণ রয়েছে যে তারা হয়তো অন্য কারো হয়ে এই সমস্যাটি সৃষ্টি করছে। এই সম্ভাবনা খুবই বেশি।
তার বিবৃতি কাঠমান্ডুতে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করে।অনেক কর্মকর্তা বিশ্বাস করেন, নারাভানের বিবৃতির কারণেই মূলত নতুন মানচিত্র প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কাঠমান্ডু।
মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর বুধবার নেপাল সেনাবাহিনী ঘোষণা করে যে নভেম্বরে নারাভানে নেপাল সফর করবেন। মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সন্তোষ বল্লভ পদুয়াল পোস্টকে বলেন, সফরের জন্য আমরা ভারতীয় পক্ষকে দুটি তারিখ দিয়েছিলাম। খুবই সম্ভাবনা রয়েছে যে নারাভানে নভেম্বরের প্রথম দিকে নেপাল সফর করবেন।
নেপাল সরকার ৩ ফেব্রুয়ারি সফরের জন্য অনুমোদন করেছিল। কিন্তু উভয় দেশে কোভিড-১৯-এর কারণে লকডাউন হলে তা স্থগিত হয়ে যায়। সফরকালে রাষ্ট্রপতি বিদ্যা দেবী ভান্ডারি নারাভানেকে নেপাল সেনাবাহিনীর সম্মানসূচক জেনারেল পদবিতে ভূষিত করবেন।
এক সিনিয়র কর্মকর্তা পোস্টকে বলেছেন, নভেম্বরের ৩-৫ তারিখে সফরটি হবে। নারাভানে রাষ্ট্রপতি ভান্ডারি, উপরাষ্ট্রপতি নন্দ বাহাদুর পুন, প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি ও তার নেপালি প্রতিপক্ষ জেনারেল পূর্ণ চন্দ্র থাপার সাথে সৌজন্য সাক্ষাতকারে মিলিত হবেন। সূত্র জানায়, তার মুক্তিনাথ যাওয়ার সফরসূচিও তৈরী করা হচ্ছে। তবে তা নিশ্চিত নয়।
এই সফরটি প্রতীকী হলেও দুই দেশের সামরিক কূটনীতিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে শর্মা বলেন। তিনি বলেন, নেপাল ও ভারতীয় উভয় সেনাবাহিনীরই তাদের নিজ নিজ সরকারের ওপর কিছু পরিমাণে কূটনৈতিক প্রভাব রয়েছে। তিনি বলেন, ২০১৫ সালের ভারতীয় অবরোধ প্রত্যাহারে নেপাল সেনাবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।
সূত্র : কাঠমান্ডু পোস্ট