আরব লীগের কাছে ইসরাইল এখন শত্রু নয়

মো: বজলুর রশীদ | Oct 15, 2020 04:50 pm
আরব লীগের কাছে ইসরাইল এখন শত্রু নয়

আরব লীগের কাছে ইসরাইল এখন শত্রু নয় - ছবি : সংগৃহীত

 

দেড় হাজার বছর আগে আরব লোকদের মনমস্তিস্ক পরিবর্তিত হয়েছিল ইসলামের আগমনের কারণে। এখন কি তার পরিবর্তন হচ্ছে? কিন্তু অনেক আরব শেখ এই পরিবর্তন চান না, যেখানে মুসলমানের পরিবর্তে ইহুদি অকৃত্রিম বন্ধু হবে। এটি নিয়ে ইসরাইলও শঙ্কিত। এজন্য ইসরাইলের পৃথক কর্মসূচি রয়েছে। জেরুসালেমের ব্যাপারে তো সবাই হাতপা ছেড়ে দিয়েছেন। শুধু এরদোগান বলেছেন, ‘জেরুসালেম আমার বাড়ি। আমি তাকে কিভাবে ভুলব?’

কিভাবে আরব শান্তি প্রচেষ্টা ভণ্ডুল হয়ে গিয়ে রাজ-জামাতা ইহুদি কুশনারের হাতে পড়ল এসব তো অল্প ক’দিন আগের কথা। আরব লীগের কাছে ইসরাইল এখন শত্রু নয়। এটি ফিলিস্তিনি আরবরা হৃদয়ঙ্গম করতে পেরে আরব লীগের সভাপতির পদ গ্রহণ করতে চায়নি। মিসর যখন আরব লীগ চালিয়েছিল তখন জামাল আবদুল নাসেরও ১৯৫০ ও ৬০-এর দশকে এরকম মনে করতেন না। যখনই কোনো বিরোধী কার্যক্রম নিতে চেয়েছে তখন ইসরাইলের সাথে পেরে ওঠেনি। তার পরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত সুয়েজ যুদ্ধ করেও ইসরাইলি আমন্ত্রণ নিয়ে সংসদে ভাষণ দিয়েছিলেন। আমিরাত-অক্ষ আরবদের কমন শত্রু ইসরাইলকে বন্ধু বানিয়েছে। সম্পর্কের কম্পাস-কাঁটা উল্টে গেছে। এখন এটাই বাস্তবতা।

এখন তুরস্কই কমন শত্রুতে পরিণত হয়েছে তুর্কি পণ্য বর্জনের ডাক দেয়া হয়েছে। তুরস্কের বিরুদ্ধে সবখানে অবস্থান নেয়া হচ্ছে। লিবিয়ায়, ভূমধ্যসাগরে, ব্ল্যাক সি-তে, সিরিয়ায়, পিকেকে ইস্যুতে, ইরান ইস্যুতে, ফেটো আন্দোলনে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে, কাশ্মির ইস্যুতে, কুয়ালালামপুর জোট ও সম্প্রতি আজারবাইজানে, এসব এক লম্বা তালিকা।

এখন তুরস্ককে আরবদের নিরপত্তার শত্রু হিসাবে বিবেচনার জন্য আরব রাষ্ট্রগুলোতে মত বিনিময় হচ্ছে। আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনোয়ার গারগাশ বলেছেন, ‘তুরস্ক আরব দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করছে।’ মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও একই ধরনের কথা বলেছেন। তিনি জানান, ‘তুরস্কের আকাশছোঁয়া উচ্চাকাক্সক্ষার কারণে মিসর চুপচাপ বসে থাকবে না।’ এ ধরনের কথাবার্তা একটি দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার মতো। তুরস্ক স্বাধীনচেতা, রয়েছে শক্তিশালী সেনাবাহিনী ও অস্ত্রভান্ডার। অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে প্রচন্ড পরিশ্রম করছে। পক্ষান্তরে আরব দেশগুলোর নিয়ন্ত্রক পশ্চিমারা, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, কানাডা। ইটালি ও রাশিয়ার কোম্পানিগুলো সব তেল কূপ পরিচালনা করছে। আরামকো সৌদি আরবের হলেও বোর্ড অব ডাইরেকটরের মধ্যে রয়েছে চারটি বিদেশী মেগা প্রতিষ্ঠান।

অনেক আরব মুসলমান মুসলিম উম্মার পুনরুত্থানের জন্য এরদোগানের দূরদর্শিতা ও কাজের প্রশংসা করেছেন। এটি আরব বিশ্বের মাথাব্যথার কারণ। ইহুদি লবি এই মুসলিম উম্মার জাগরণকে নাম দিয়েছে, ‘নব্য মুসলিম সাম্রাজ্যবাদ’। ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁ কারাবাখ যুদ্ধ বন্ধ করতে গিয়ে ইসলাম ও মুসলমানদের চেতনাকে এইভাবেই ব্যাখ্যা দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন। ব্রিটেন, ফ্রান্স একসময় আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে কলোনি বানিয়ে সেখানকার সম্পদ চুষে নিয়ে নিজের দেশকে সাজিয়েছে। সেটি আর হচ্ছে না বিধায় সাম্রাজ্যবাদীরাই শোষিতদের নব্য সাম্রাজ্যবাদী বলে তৃপ্তি পেতে চাইছে।

আসলে আরব লীগ অনেক বছর আগেই শেষ হয়ে গেছে। এটা নিয়ে কেউ মাথা ঘামাতে চায় না। কুয়েতও লীগের সভাপতি হতে অপারগতা জানিয়েছে। এবার ফিলিস্তিনের পরিবর্তে আরব লীগের পর্যায়ক্রমিক সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে লিবিয়া। এর আগে কাতার এবং কুয়েতও এই পদ প্রত্যাখ্যান করেছে। একটি শক্তিশালী সংস্থা কতটুকু অর্থব হয়েছে এসব তারই নমুনা। মনে হচ্ছে আরব লীগ ‘ক্লিনিক্যালি ডেড’। সাদ্দাম হোসেন যখন কুয়েত আক্রমণ করেছিল তখন জর্জ বুশ আরব রাষ্ট্রগুলোকে ডাকেন। রাতারাতি সব আরব নেতা হোয়াইট হাউসে জড়ো হয়েছিল। কিন্তু ইসরাইল যখন ১৯৮২ সালে এবং ২০০৬ সালে লেবানন আক্রমণ করল, আর যখন গাজায় অহরহ বোমা হামলা করা হচ্ছে, তখন আরব দেশগুলো কোথাও জড়ো হয়েছে? গত সপ্তাহে পূর্ব জেরুসালেমে ইসরাইলি বাহিনী ফিলিস্তিনির ঘর ভেঙে দিয়ে খরচস্বরূপ ৩০ হাজার ডলার দাবি করেছে! অবস্থা দেখে মনে হয় আরবদের গুলি করে মারলে এখন থেকে গুলির খরচও উসুল করা হবে। মুসলমানদের কোনো ঘরবাড়ি বানাতে পারমিট লাগছে। কিন্তু সে পারমিট তো আর পাওয়া যায় না। জেরুসালেমকে ইহুদিকরণ, আল আকসা মসজিদের নিচে টানেল তৈরি করা এসব নিয়ে আরব লীগের কোনো বক্তব্য নেই।

আরব লীগ ২০০৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র পরিচালিত ইরাক যুদ্ধ প্রতিরোধ করতে পারেনি, এমনকি যুদ্ধকে চ্যালেঞ্জও জানাতে পারেনি। তাদের চোখের সামনে ইরাক আস্তে আস্তে শেষ হয়ে গেল। আরব লীগ সুদানেও কোনো কাজ করতে পারেনি। সুদানি সমস্যায় কোনো প্রকার সহায়তা দিতে পারেনি। আজ সেই সুদান ইসরাইলি সহায়তা নিচ্ছে এবং রাষ্ট্রধর্ম থেকে ইসলাম বাদ দিয়েছে। আরব রাষ্ট্রগুলোকেই তো এর ফলাফল ভোগ করতে হবে। এসব করুণ ইতিহাস আরো আরব রাষ্ট্রগুলোকে গ্রাস করে নিঃশেষ করার উদ্যেগ অব্যাহত রয়েছে। আরব লীগের সদস্য দেশগুলোতে সমস্যার তালিকা অতি দীর্ঘ। ইয়েমেনে যুদ্ধ ও দুর্ভিক্ষের মহামারীতে অসহায় আরবদের মৃত্যুর জন্য সৌদি আরব ও আমিরাত কি দায়ী নয়?

এখন ইয়েমেনের সক্রোট্রা দ্বীপ দখল করে ইসরাইলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে সামরিক ঘাঁটি ও গোয়েন্দা নগর বানানোর জন্য। কাতারের অবরোধ এখনো শেষ হয়নি। দুদেশের আত্মীয়স্বজনরাও বহুদিন ধরে দেখা সাক্ষাৎ করতে পারছে না।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us