যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতির নির্দেশ : চীনের টার্গেটে কে?

অন্য এক দিগন্ত ডেস্ক | Oct 15, 2020 04:31 pm
যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতির নির্দেশ : চীনের টার্গেটে কে?

যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতির নির্দেশ : চীনের টার্গেটে কে? - ছবি : সংগৃহীত

 

ভারতের সাথে লাদাখে সীমান্ত সঙ্ঘাতের মধ্যেই দেশের সেনাবাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিলেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। বুধবার চীনের গুয়াংডং প্রদেশের একটি সামরিক ঘাঁটি পরিদর্শনে গিয়ে এ কথা বলেন জিনপিং।

চীনের সরকারি সংবাদমাধ্যম ‘সিনহুয়া’ জানাচ্ছে, গুয়াংডং প্রদেশের চাওঝাও শহরে অবস্থিত চীনের নৌবাহিনীর ঘাঁটি পরিদর্শনে যান প্রেসিডেন্ট জিনপিং। এসময় কোরের সদস্যদের ‘চূড়ান্ত সতর্ক’ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। বাহিনীর উদ্দেশে তার বার্তা,‘আপনাদের মন যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করে রাখুন।’

সামরিক বাহিনীর প্রতি জিনপিংয়ের এই বার্তা মুহূর্তেই সাড়া ফেলে দিয়েছে আন্তর্জাতিক মহলে। আসলে তিনি শত্রু দেশগুলোকে যে ঘুরিয়ে হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন সে কথাও স্পষ্ট। কিন্তু চীনের টার্গেটে কোন দেশ? সম্প্রতি তাইওয়ান প্রণালী (চীন এবং তাইওয়ানের মাঝে প্রণালী)-তে নজরে এসেছে মার্কিন যুদ্ধ জাহাজ। যদিও আমেরিকার তরফে বলা হচ্ছে এটা ‘রুটিন’ সফর। কিন্তু ওয়াশিংটনের এই কর্মকাণ্ডের পিছনে ভিন্ন উদ্দেশ্য দেখছে বেইজিং। আর তা নিয়েই দু’দেশের মধ্যে কূটনৈতিক পারদ নতুন করে উত্তপ্ত হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক মহলের একটা বড় অংশ মনে করছে।

তাদের ধারণা, সে কারণেই মেরিন কোরের সদস্যদের যুদ্ধের জন্য ‘প্রস্তুত’ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জিনপিং।

ইতোমধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ জাহাজ পাঠানোর সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বেইজিং। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিঝিয়ান বলেন,‘তাইওয়ানে সামরিক অভিযান বাতিল করুক আমেরিকা।’

আমেরিকা এবং তাইওয়ানের মধ্যে সামরিক চুক্তি বাতিলেরও দাবি তুলেছে বেইজিং। তবে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘আন্তর্জাতিক আইন মেনেই মার্কিন বিমান বাহিনীর জাহাজ চলবে এবং বিমান উড়বে।’

লাদাখ থেকে সৈন্য সরাতে নারাজ ভারত-চীন
নিষ্ফল সপ্তম বৈঠক
ডয়চে ভেলে

ভারত ও চীন কেউই সৈন্য সরাতে রাজি নয় লাদাখ থেকে। জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত গত চার মাসে সাতবার বৈঠকে বসেও লাদাখ সমস্যার সমাধানসূত্র বের করতে পারেনি দুই পক্ষ। সোমবার সর্বশেষ বৈঠকেও ভারত ও চীনের সেনা কমান্ডাররা একে অপরের দিকে শুধু আঙুলই তুললেন।

সোমবার লাদাখে ভারত-সীমান্তে চুসুলে বৈঠকে বসেছিলেন ভারত ও পিপলস রিপাবলিক আর্মির সেনা অফিসররা। ভারত ও চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ অফিসাররাও সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। উল্লেখ্য, এই প্রথম সেনা স্তরের বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অফিসার পাঠাল চীন।
ডয়চে ভেলেকে সেনা সূত্র জানিয়েছে, সোমবার সকালে বৈঠক শুরু হয়। সন্ধ্যা পর্যন্ত সেই বৈঠক চলে। দুই দেশই সমাধান সূত্র বের করার মরিয়া চেষ্টা করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেনা সরাতে রাজি হয়নি কোনো পক্ষই। সেনা সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে ভারত দাবি করেছে, এপ্রিল মাসের আগে সীমান্তের যে অবস্থা ছিল, সেই অবস্থায় ফিরে যেতে হবে। চীনকে সেনা সরিয়ে নিতে হবে। কিন্তু চীন সেনা সরাতে রাজি হয়নি। তাদের দাবি, গত কয়েক মাসে, বিশেষ করে আগস্টে ভারত প্যাংগং লেকের দক্ষিণে যে অঞ্চল দখল করেছে, সেখান থেকে প্রথমে ভারতকে সেনা সরাতে হবে। তারপরই চীন সেনা সরানোর কথা ভাববে।

কিন্তু চীনের এই প্রস্তাব ভারত মানতে রাজি হয়নি। কারণ, ভারতের দাবি, আগস্টে ভারত প্যাংগংয়ের দক্ষিণে যে পাহাড়ে পোস্ট তৈরি করেছে, তা ভারতেরই জায়গা। কিন্তু চীনের বক্তব্য, ওই পোস্ট থেকে প্রকৃত সীমান্ত রেখার অন্য প্রান্তে চীনের সেনার অবস্থান স্পষ্ট দেখা যায়। ফলে ভারতকে ওই স্ট্র্যাটেজিক এলাকা ছাড়তে হবে। ভারত কোনোভাবেই তাতে রাজি হয়নি। ফলে গত ছয়টি বৈঠকের মতো সোমবারের বৈঠকও নিষ্ফল হয়েছে।

ভারতীয় সেনার সাবেক লেফটন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্যের মতে, ভারত ও চীনের এলএসি বা প্রকৃত সীমান্ত রেখা স্পষ্ট নয়। দুই তরফই নিজেদের মতো করে এলাকা চিহ্নিত করে এবং সে কারণেই এ বারের সঙ্ঘাতের কোনো সমাধানসূত্র মিলছে না। বস্তুত, প্যাংগং লেক, গোগরা, হটস্প্রিং, ডেপসাংয়ে চীন প্রকৃত সীমান্ত রেখা উপেক্ষা করে সৈন্য মোতায়েন করেছে বলে ভারতের অভিযোগ এবং সে কারণেই ভারত বারবার এপ্রিলের আগের অবস্থানে ফিরে যাওয়ার কথা বলছে। চীন যা মানতে চাইছে না।

এই মুহূর্তে ভারত এবং চীন দুই পক্ষই প্রায় ৫০ হাজার সৈন্য সীমান্তে জড়ো করেছে। কোনো কোনো মহলের বক্তব্য চীনের সেনা রয়েছে ৬০ হাজার। একই সাথে এয়ার টু গ্রাউন্ড মিসাইল থেকে শুরু করে বিভিন্ন অস্ত্রও দুই পক্ষ সীমান্তে এনে রেখেছে। এখন যদি সেনা সরানোর প্রস্তাবে সায় দিতে হয়, তা হলে সীমান্ত থেকে অনেকখানি পিছিয়ে যেতে হবে। সরিয়ে নিতে হবে অস্ত্রও। কিন্তু তারপরেও সঙ্ঘাত বন্ধ না হলে শীতে সেই অস্ত্র এবং সেনার সরঞ্জাম ফের সীমান্তে নিয়ে যাওয়া অত্যন্ত কঠিন। কারো কারো মতে প্রায় অসম্ভব। কয়েক দিনের মধ্যেই লাদাখের বহু রাস্তা বরফে বন্ধ হয়ে যাবে। তখন আর বড় বড় সেনার গাড়ি সেখানে নিয়ে যেতে পারবে না। অস্ত্রও নেয়া যাবে না। ফলে কোনো পক্ষই সেনা সরাতে রাজি হচ্ছে না।

তা হলে কি লাদাখ সমস্যার সমাধান নেই? কোনো কোনো বিশেষজ্ঞের মতে, শীতে সমস্যা সমাধানের সম্ভাবনা কম। বরং উল্টোটা হতে পারে। সামান্য সমস্যাও এলাকাভিত্তিক লড়াইয়ের আগুন জ্বালিয়ে দিতে পারে। অতীতেও যা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে সঙ্ঘাত আরো বাড়বে। যদি তা না হয়, তা হলে শীতের পরে দুই পক্ষই সেনা সরানোর প্রস্তুতি শুরু করতে পারে। তবে একটি কথা স্পষ্ট। কূটনৈতিক স্তরে দুই দেশের মন্ত্রী বৈঠক করে যে সমাধানের রাস্তা তৈরি করেছিলেন, বাস্তবতা তার সাথে মিলছে না এবং সে কারণেই সেনা স্তরের বৈঠক আজ পর্যন্ত একটিও ফলপ্রসূ হয়নি।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us