এক ইঞ্চি ভূখণ্ডও ছাড় দেবে না চীন!
এক ইঞ্চি ভূখণ্ডও ছাড় দেবে না চীন! - ছবি : সংগৃহীত
ভারতের সাথে চলমান বিবাদে চীন এক ইঞ্চি জমিও ছাড় দেবে না বলে জানিয়েছেন সাউথওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি অব পলিটিক্যাল সায়েন্স অ্যাণ্ড ল’-এর অধ্যাপক, চীনের অন্যতম দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ প্রফেসর চেং শিঝোং। সাউথ এশিয়ান মনিটরকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে প্রফেসর চেং বৈশ্বিক বাণিজ্য সম্পর্ক, এ অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধি, চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক, বাণিজ্য ও সঙ্ঘাত মিলিয়ে ইন্দো-চীন সম্পর্ক, উন্নয়ন এবং দক্ষিণ এশিয়া ও বিআরআইসহ বেশ কিছু ইস্যুতে কথা বলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চীন-ভারত সীমান্তের পশ্চিমাংশে সামরিক অচলাবস্থা চার মাসের বেশি স্থায়ী হয়েছে। ভারতীয় সেনারা বারবার সীমান্ত অতিক্রম করে চীনা ভূখণ্ড দখলের চেষ্টা করার কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
সম্প্রতি চীন আর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন। একই সাথে এই পরিস্থিতির সমাধান খুঁজতে ভারত আর চীন সামরিক ও কূটনৈতিক পর্যায়েও আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে বোঝা যায় যে, কোনো পক্ষই চায় না যে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাক, এবং এভাবেই বিষয়টা দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতামূলক সম্পর্কের স্বাভাবিক ধারার উপর প্রভাব ফেলছে।
২১ সেপ্টেম্বর কর্পস কমান্ডার পর্যায়ে ষষ্ঠ দফা আলোচনা হয়েছে। দুই দেশই লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল (এলএসি) এলাকায় স্থিতিশীলতা আনতে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে খোলামেলা ও গভীর বিনিময় করেছে। দুই দেশের নেতারা যেসব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে একমত হয়েছেন, সেগুলো সততার সাথে বাস্তবায়নের ব্যাপারে তারা সম্মত হয়েছেন।
এগুলোর মধ্যে রয়েছে স্থানীয় পর্যায়ে যোগাযোগ ও সমন্বয় শক্তিশালী করা, ভুল বোঝাবুঝি এবং ভুল ধারণা এড়ানো, ফ্রন্টলাইনে সেনা সংখ্যা বাড়ানো থেকে বিরত থাকা, স্থানীয় পরিস্থিতিকে একতরফাভাবে পরিবর্তনের চেষ্টা না করা, এবং পরিস্থিতি জটিল করতে পারে, এ ধরনের কোন পদক্ষেপ না নেয়া।
যত দ্রুত সম্ভব সপ্তম দফা কর্পস কমান্ডার পর্যায়ের আলোচনায় বসা, স্থানীয় সমস্যা সমাধানে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নেয়া, এবং সীমান্ত এলাকাকে যৌথভাবে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ব্যাপারেও দুই পক্ষ সম্মত হয়েছে।
এই মুহূর্তে, প্রধান সমস্যা হলো ভারত তাদের ‘সামনে এগুলোর পরিকল্পনা’ ত্যাগ করছে না এবং সীমান্ত এলাকাতে তাদের সামরিক মোতায়েন এবং যুদ্ধ প্রস্তুতি আরও বাড়াচ্ছে। মনে হচ্ছে, ভারত একটা সুযোগের অপেক্ষায় রয়েছে, যেটা পেলেই তারা চীনা ভূখণ্ডে তাদের ‘লাদাখ ইউনিয়ন টেরিটরি’ স্থাপনের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চেষ্টা জারি রাখবে।
ভূখণ্ডগত ইস্যুতে চীনের অবস্থান খুবই দৃঢ় : চীন এক ইঞ্চি ভূখণ্ডও হারাবে না, এবং চীনের পিপলস লিবারেশান আর্মি জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার ব্যাপারে পুরো দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, সক্ষম এবং আত্মবিশ্বাসী।
তিনি বলেন, ভারত প্রায়ই বুঝতে পারে না যে, কোনটা তার ও অন্যদের জন্য ভালো, আর কোনটা খারাপ। অন্যদের সমস্যা থেকে সুযোগ নিতে পছন্দ করে তারা। ভারতের বহু দশকের একজন বন্ধু হিসেবে, আমি তাদের ব্যাপারে প্রায়ই উদ্বিগ্ন হই এবং তাদের কর্মকাণ্ডের কারণে লজ্জিত হই।
যুক্তরাষ্ট্র এখন চীনের উপর জোরেশোরে চাপ দিচ্ছে। সে কারণে ভারত ভাবছে যে, একটা সুযোগ সামনে এসেছে। এবং তারা সীমান্ত এলাকাতে তৎপরতা চালিয়ে চীনা ভূখণ্ডের দখল নিতে চেয়েছে। সেখানে ব্যর্থতার পর, তারা যখন দেখেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের চীন থেকে বিচ্ছিন্ন করে নেয়ার দাবি করেছে, ভারত তাৎক্ষণিকভাবে তাদের অনুসরণ করে চীনের উপর অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য বেশ কতগুলো ধারাবাহিক পদক্ষেপ নিয়েছে।
চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে এবং চীনা অর্থনীতি থেকে নিজেদের সরিয়ে নেয়ার জন্য ভারত বেশ কতগুলো পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু এই সব পদক্ষেপের খুব সামান্যই প্রভাব পড়েছে চীনের উপর। শেষ বিচারে, ভারতই এখানে বেশি ভুক্তভোগী হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রথম মেয়াদে ভারতের অর্থনীতির গড় বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ৭% অতিক্রম করেছিল। এক দৃষ্টিতে দেখলে মোদির বাজার উন্মুক্ত করার নীতি, ভারতে চীনের দীর্ঘমেয়াদি দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রভাব, এবং ভারতে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর বড় ধরনের বিনিয়োগের কারণে এই অর্জনটা হয়েছিল।
এখন ভারত তাদের বাজারে চীনা পুঁজি এবং প্রযুক্তির প্রবেশ বন্ধ করার চেষ্টা করছে, যেটার ফল হবে উল্টা। সেই সাথে করোনাভাইরাস মহামারিও ভারতে দিন দিন আরও মারাত্মক হয়ে উঠছে। ফলে, তাদের জিডিপি বছরের দ্বিতীয় কোয়ার্টারে ২৩.৯% পড়ে গেছে এবং তাদের অর্থনীতি পতনের দ্বারপ্রান্তে চলে গেছে।
ভারতের সাথে চীনের দীর্ঘদিনের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত রয়েছে। ২০১৯ সালে ভারতে চীনের রফতানি ৭৪.৮৩ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে দাঁড়িয়েছে, ভারত থেকে চীনের আমদানি হয়েছে ১৭.৯৮ বিলিয়ন ডলার। ভারতের সাথে চীনের বাণিজ্য উদ্বৃত্ত ৫৬.৮৫ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে পৌঁছেছে। চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো ভারতে ১৯০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে এবং ভারত চীনে ২৫.৬৩ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। ভারতের চেয়ে চীনের বিনিয়োগ প্রায় সাত গুণ বেশি।
সে কারণে, অর্থনীতি আর বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারতের ধারাবাহিক ‘তুচ্ছ এই পদক্ষেপগুলো’ তেমন গুরুত্ব বহন করে না। চীনের সাথে প্রতিযোগিতা করার শক্তি ভারতের নেই, ভারত চীনের কাছে এতটা গুরুত্বপূর্ণ এখনও হয়নি যে, তার বিরুদ্ধে পাল্টা পদক্ষেপ নেবে চীন।