শত্রু না থাকলে যুক্তরাষ্ট্র টিকে থাকতে পারে না!
ডোনাল্ড ট্রাম্প - টিকে থাকার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু প্রয়োজন!
টিকে থাকার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু অপরিহার্য বলে মন্তব্য করেছেন সাউথওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি অব পলিটিক্যাল সায়েন্স অ্যাণ্ড ল’-এর অধ্যাপক, চীনের অন্যতম দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ প্রফেসর চেং শিঝোং। সম্প্রতি একটি মিডিয়াকে দেয়া সাক্ষাতকারে তিনি এ মন্তব্য করেন। প্রফেসর চেং বৈশ্বিক বাণিজ্য সম্পর্ক, এ অঞ্চলে উত্তেজনা বৃদ্ধি, চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক, বাণিজ্য ও সঙ্ঘাত মিলিয়ে ইন্দো-চীন সম্পর্ক, উন্নয়ন এবং দক্ষিণ এশিয়া ও বিআরআইসহ বেশ কিছু ইস্যুতে কথা বলেন।
প্রফেসর চেং বলেন, আমরা যদি যুক্তরাষ্ট্রের ২০০ বছরের ইতিহাস দেখি, তাহলে আমরা জানতে পারবো যে এই দেশটি ‘শত্রু’ ছাড়া এবং যুদ্ধ ছাড়া টিকে থাকতে পারে না। সামরিক যুদ্ধ, আর্থিক যুদ্ধ, বাণিজ্য যুদ্ধ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুদ্ধ, এবং আরও বিভিন্ন উপায়ে, আর্থিক সঙ্কট সৃষ্টি করে বিশ্বের সম্পদকে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে প্রবাহিত করা হচ্ছে, এবং এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ হয়ে উঠেছে।
কিছু মিডিয়া এবং স্কলার বলেছে যে, চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক একটা ‘নতুন শীতল যুদ্ধ’ পরিস্থিতির মধ্যে প্রবেশ করেছে। আমি বিশ্বাস করি যে, চীন আর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যেকার বর্তমান উত্তেজনাটা যুক্তরাষ্ট্র ইচ্ছা করেই সৃষ্টি করেছে। কৃত্রিমভাবে তথাকথিত ‘নতুন শীতল যুদ্ধ’ সৃষ্টির বিষয়টিকে প্রবলভাবে বিরোধিতা করে চীন, যেটা চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের মৌলিক স্বার্থকে পুরোপুরি লঙ্ঘন করে। বিশ্বের উন্নয়ন ও অগ্রগতির ধারা থেকে এটা পুরোপুরি একটা বিচ্যুতি।
চীন আশা করে, চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক স্বাভাবিক ধারায় ফিরে আসবে। একই সাথে, এখানে যে সব অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির উদ্ভব হতে পারে, সেগুলো মোকাবেলার জন্যও চীন পুরোপুরি প্রস্তুত। চীন আর যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুটো অর্থনীতি, এবং চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ধারাটা পুরো বিশ্বের উপরই প্রভাব ফেলে।
আমরা এটা বলতে পারি যে, চীন আর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য চীন তার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। কিন্তু একই সাথে আবার এই চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কটাকে ধ্বংস করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র তার সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
চীন একটি শান্তিকামী দেশ এবং অন্য কোনো দেশের উপর কখনও তারা হামলা করেনি। কিন্তু বিদেশী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের দৃঢ় ইচ্ছাশক্তি রয়েছে চীনা জনগণের। চীন যুদ্ধের বিরোধিতা করে কিন্তু যুদ্ধ করতে তারা ভয় পায় না। যুক্তরাষ্ট্র একটা দুর্বৃত্ত দেশ হয়ে উঠেছে এবং যে কোন ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে তারা ইচ্ছুক। যুক্তরাষ্ট্র যদি চীনের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ করে, চীনের সশস্ত্র বাহিনী তাহলে নিশ্চিতভাবে প্রবল শক্তি নিয়ে পাল্টা আঘাত করবে।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চীনের বিরুদ্ধে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছে এবং দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য তারা অব্যাহতভাবে যুদ্ধ জাহাজ আর বিমান পাঠাচ্ছে। তারা চীন-ভারত সম্পর্কে এবং চীন আর আসিয়ান দেশগুলোর সম্পর্কে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করছে। তারা সম্ভাব্য সবগুলো ক্ষেত্রেই চীনের বিরুদ্ধে সমস্যা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে, এবং এভাবেই চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ককে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে ফেলে রেখেছে।
আমার মতে, এই সমস্যাগুলোর প্রধান কারণ হলো চীনের উত্থানের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান ভয়। যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের কারণ হলো তারা চীনের শান্তিপূর্ণ উত্থান ও উদীয়মান বাজার অর্থনীতিতে চীনের শক্তি বেড়ে যাওয়ায় সেটা তাদের শতাব্দি পুরনো আধিপত্যের জন্য ‘হুমকি’ সৃষ্টি করেছে। সেটা হলে যুক্তরাষ্ট্র আর বিশ্ব ব্যবস্থার উপর কর্তৃত্ব করতে পারবে না।
বিশ্বের বহু-মেরুকরণ, অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন এবং সাংস্কৃতিক বৈচিত্র একটা অদম্য ঐতিহাসিক ধারা হয়ে উঠেছে। এটাকে কোন ব্যক্তি বা কোন শক্তি থামাতে পারবে না। ইতিহাসের স্রোতের বিপরীতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আরও বেশি করে বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়েছে।
বিদ্যমান বিশ্ব ব্যবস্থাকে খাটো করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ট্রান্স-প্যাসিফিক অংশীদারিত্ব থেকে, প্যারিস চুক্তি থেকে, ইউনেসকো, ইরান পারমাণবিক চুক্তি, ইউএনএইচআরসি, এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক ভিয়েনা কনভেনশান, ইউনিভার্সাল পোস্টাল ইউনিয়ন, এবং সম্প্রতি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা নীতি সারা বিশ্বেই ক্রমাগত অজনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
এই সবগুলো মিলিয়েই বর্তমান চীন-যুক্তরাষ্ট্র উত্তেজনাটা তৈরি হয়েছে।