নাগোর্নো-কারাবাখের সঙ্ঘাত এবং ভারতের ড্রোনের স্বপ্ন
নাগোর্নো-কারাবাখের সঙ্ঘাত এবং ভারতের ড্রোনের স্বপ্ন - ছবি : সংগৃহীত
নাগোর্নো-কারাবাখের সঙ্ঘাত আবারো যুদ্ধক্ষেত্রে আনম্যানড এরিয়াল কমব্যাট ভেহিকলের (ইউএসিভি) কার্যকারিতার প্রশ্নটি সশস্ত্র বাহিনীর সামনে এনেছে। আজারবাইজানের ড্রোনের আঘাতে আর্মেনিয়ান ট্যাঙ্ক ও কামানের অবস্থান ধ্বংসের ছবি আমরা দেখেছি। অনেকেই বলেছেন যে, যুদ্ধের চরিত্রই বদলে দিচ্ছে ড্রোন। এবং ড্রোনের কারণে প্রতিপক্ষের উপর চাপ বাড়ছে, বিশেষ করে যেখানে বিমান শক্তির ঘাটতি রয়েছে। দ্য ডিপ্লোম্যাটের নতুন প্রতিরক্ষা কনট্রিবিউটর জ্যাকব পারাকিলাস উল্লেখ করেছেন যে, ‘ট্যাঙ্ক বনাম ড্রোনের’ বিতর্ক যেভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, এটা তার চেয়ে অনেক বেশি জটিল। ভারতও আর্মেনিয়া-আজারবাইজান সঙ্ঘাতের উপর ঘনিষ্ঠ নজর রেখেছে। ভারতের সশস্ত্র বাহিনী বহরে ড্রোন যুক্ত করার চেষ্টা করছে এবং তারাও এখান থেকে শিক্ষা নিয়েছে।
নাগোর্নো-কারাবাখের সঙ্ঘর্ষে ড্রোনের ব্যাবহার নিয়ে ভারতের এয়ার চিফ মার্শাল আরকেএস ভাদুরিয়া বলেছেন, “ড্রোন নজরদারি আর গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সঙ্ঘাত শুরুর প্রাক্কালে তাদের ভূমিকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে সঙ্ঘাত একবার শুরু হয়ে গেলে ড্রোন শত্রুর হামলার টার্গেটে পরিণত হতে পারে”।
আজারবাইজানের মতো ভারতেরও এক দশকের বেশি সময় ধরে আত্মঘাতী ড্রোন রয়েছে বলেও জানান তিনি। আর্মেনিয়ার বিরুদ্ধে আজারবাইজান তুরস্কের ডিজাইনকৃত বায়রাকতার টিবি২ ড্রোন ব্যবহার করেছে।
ভাদুরিয়ার মন্তব্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণ হলো ভারত এ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সশস্ত্র ও নিরস্ত্র উভয় ধরনের ড্রোন কেনার জন্য আলোচনা চালাচ্ছে। চলতি বছরের জুলাইতে, ট্রাম্প প্রশাসন বিদ্যমান বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছে এবং সে কারণে ভারতের কাছে এখন ড্রোন বিক্রিতে তাদের কোনো বাধা নেই, যেগুলো ঘন্টায় ৮০০ কিলোমিটারের মতো গতিতে উড়তে পারে। যুক্তরাষ্ট্র যদিও ভারতের কাছে ৩০টি নিরস্ত্র সিগার্ডিয়ান ড্রোন বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে, তবে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র এখনও ভারতের কাছে প্রিডেটর-বি বিক্রির বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে রয়েছে, কারণ তাদের আশঙ্কা হলো তাদের এই ড্রোনের প্রযুক্তি রাশিয়ার হাতে চলে যেতে পারে, যেহেতু ভারত দুই দেশেরই অস্ত্র সিস্টেম ব্যবহার করে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে, ভারতীয় সেনাবাহিনী এখনও নৌবাহিনীর চাহিদা মেটানোর জন্য সশস্ত্র রিপার কেনার বিষয়টি বিবেচনায় রেখেছে। সিগার্ডিয়ান ড্রোন ভারতের সাবমেরিন বিরোধী যুদ্ধের সক্ষমতা বাড়ানোসহ গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও নজরদারি মিশনের সক্ষমতা আরো বাড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে।
২০১৮ সালের মার্কিন-ভারত কমিউনিকেশান্স কমপ্যাটিবিলিটি অ্যাণ্ড সিকিউরিটি এগ্রিমেন্ট দুই দেশের মধ্যে নিরাপদ সামরিক তথ্য বিনিময়ের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ভারত আর যুক্তরাষ্ট্র নীতিগতভাবে সিগার্ডিয়ান্সের মাধ্যমে নিজেদের নৌ তৎপরতার মধ্যে সমন্বয় করতে পারবে। তাছাড়া গত বছর দুই দেশ বেসিক এক্সচেঞ্জ অ্যাণ্ড কোঅপারেশান এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তির অধীনে গোয়েন্দা তথ্য পাবে ভারত যেটার মাধ্যমে তারা রিপার ড্রোনগুলোর টার্গেটিং এবং হত্যার ক্ষেত্রে আরও নিখুঁতভাবে প্রয়োগ করতে পারবে।
সাম্প্রতিক ভারতীয় মিডিয়া রিপোর্টে আরও ইঙ্গিত মিলেছে যে, ভারত লাদাখে চীনের সাথে অচলাবস্থার প্রেক্ষিতে ইসরাইলের কাছ থেকে আরো হেরন নজরদারি ড্রোন কেনার পরিকল্পনা করছে। এছাড়া বহরে থাকা ৯০টি নিরস্ত্র ড্রোনের সশস্ত্রীকরণের বিষয়টিও তারা বিবেচনায় রেখেছে। ভারতে নজরদারি ড্রোন সরবরাহকারীদের মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছে ইসরাইল। ভারত একইসাথে নিজস্বভাবে তৈরি রুস্তম-২ নজরদারি ড্রোনের পরীক্ষাও চালিয়েছে।
ভারতের ড্রোন কেনা নিয়ে নানা আলোচনা চললেও তাদের বৈশিষ্ট্য ও সংখ্যা নির্ধারিত হবে কোভিড-১৯ মহামারী আক্রান্ত বাজেট সীমাবদ্ধতার ভিত্তিতে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ভারতের প্রতিপক্ষের সক্ষমতা বিবেচনায় নিলে ভারতের এ ধরনের সশস্ত্র ড্রোন কেনার সিদ্ধান্ত কতটা কাজে লাগবে, সে প্রশ্ন রয়েই গেছে। যেখানে সাধারণত কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেই, এবং যেখানে খুবই সামান্য আকাশ সুরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে, সে রকম পরিবেশে সাধারণত ড্রোন বেশি কার্যকর হয়। কিন্তু পাকিস্তান আর চীনের সাথে ভারতের পরিস্থিতিটা মোটেই সে রকম নয়। সে কারণে ড্রোন ভারতের জন্য কতটা কার্যকর হবে, সে প্রশ্ন রয়েই গেছে।
সূত্র : দ্য ডিপ্লোম্যাট