মার্কিন গবেষকের চাঞ্চল্যকর তথ্য : ভারতের ডিফেন্স সার্ভিস স্টাফ কলেজ মানসম্মত নয়!

অ্যাডাম আব্দুল্লাহ | Oct 13, 2020 09:44 pm
জেনারেল বিপিন রাওয়াত

জেনারেল বিপিন রাওয়াত - ছবি : সংগৃহীত

 

দক্ষিণ ভারতের ওয়েলিংটনে অবস্থিত ‘ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ কলেজে’ সেনা কর্মকর্তাদেরকে যে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় তা বেশ কিছু মৌলিক ক্ষেত্রে সময়ের চেয়ে অনেক পিছিয়ে আছে বলে মন্তব্য করেছেন ওয়াশিংটন ডিসি’র নির্দলীয় নীতি-গবেষণা কেন্দ্র ‘স্টিমসন সেন্টার’-এর সাউথ এশিয়া প্রোগ্রামের ফেলো কর্নেল (অব) ডেভিড ও. স্মিথ।

কর্নেল স্মিথ তার ‘দ্য ওয়েলিংটন এক্সপেরিয়েন্স : অ্যা স্টাডি অব অ্যাটিটুডস অ্যাণ্ড ভ্যালুজ উইদিন দ্য ইন্ডিয়ান আর্মি’ বইয়ের বেশ কয়েক প্রজন্মের ভারতীয় ও আমেরিকান কর্মকর্তাদের সাক্ষাতকার নিয়েছেন, যারা ১৯৭৯ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ডিএসএসসিতে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে স্টিমসন সেন্টার বইটি প্রকাশ করেছে। বইটিকে প্রতিনিধিত্বশীল করার জন্য সিনিয়র (লে. কর্নেল ও ব্রিগেডিয়ার), মধ্যম পর্যায়ের (লে কর্নেল ও কর্নেল), এবং জুনিয়র পর্যায়ের (ক্যাপ্টেন ও মেজর) কর্মকর্তাদের সাক্ষাতকার নেয়া হয়েছে।

তার প্রাপ্ত তথ্যগুলো নিম্নরূপ : ইতিবাচক দিকে, ডিএসএসসির ভারতীয় শিক্ষার্থীরা খুবই জাতীয়তাবাদী হলেও তাদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টিকারী হিন্দু জাতীয়তাবাদী ‘হিন্দুত্ব’ আদর্শ নেই। ভারতীয় সামরিক বাহিনীর মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের সামাজিক সমন্বয় দৃশ্যমান, যেটা ডিএসএসসিতে ধর্ম, জাতি ও সামাজিক শ্রেণীর ভিত্তিতে বিভাজন সৃষ্টির পথ রুদ্ধ করেছে বলে মনে হয়। ভারতীয় শিক্ষার্থীদেরকে একই সাথে ধারাবাহিকভাবে ‘অরাজনৈতিক’ মনে হয়েছে, যদিও উচ্চ প্রতিরক্ষা সংস্থা (আমলাতন্ত্র) পুনর্গঠনের ব্যাপারে ধারাবাহিকভাবে সরকারগুলোর মধ্যে অনীহার কারণে বাহিনীর মধ্যে হতাশা বেড়েই চলেছে।

নেতিবাচক দিক

এর বিপরীতে নেতিবাচক দিকের তালিকা অনেক দীর্ঘ। ডিএসএসসির শিক্ষাগত পদ্ধতির বিধিনিষেধের কারণে দরকারি অনেক কিছু তারা শিখতে পারে না এবং এটা তাদের মধ্যে গভীরভাবে ভাবার চর্চা রুদ্ধ করে দিয়েছে। ডিএসএসসি’র কোর্সের বিষয়বস্তু সেকেলে এবং আধুনিককালে যুদ্ধের প্রয়োজন মেটানোর মতো যুগোপযোগী নয়। ১৯৭৯ সালের ব্যাচের এক শিক্ষার্থী স্মরণ করে বলেন যে, তাদেরকে যে সব আভিযানিক প্রক্রিয়া শেখানে হয়েছিল, তার অধিকাংশই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কৌশলগুলো মনে করিয়ে দেয়। এই কোর্সের উদ্দেশ্য যেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য সেনাদেরকে প্রস্তুত করে তোলা, যা ১৯৪৫ সালের দিকে ব্রিটিশ আর্মিকে সেখানো হয়েছিলো।

ডিএসএসসি কমব্যাট সহায়তা এবং কমব্যাট সার্ভিস সহায়তার দিকে পর্যাপ্ত মনোযোগ দেয়নি এবং সমন্বিত সশস্ত্র অভিযানের চাহিদা মেটাতে ব্যর্থ হয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, এটা কার্যকর আন্ত-সার্ভিস প্রশিক্ষণ দিতে ব্যর্থ হয়েছে, যদিও ডিএসএসসি তিন বাহিনীর প্রতিষ্ঠান।

স্মিথের মতে, এর একটা প্রধান কারণ হলো ভারতীয় সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালের পর কোন ‘উচ্চ তীব্রতার’ যুদ্ধে অংশ নেয়নি।

তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, “উচ্চ তীব্রতার যুদ্ধ বলতে আমি একই মাপের সুসজ্জিত ও সক্ষম প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে বড় ধরনের যুদ্ধমহড়ার কথা বলছি, যেটার জন্য সশস্ত্র বাহিনীগুলোর মধ্যে নিয়মিত সমন্বিত তৎপরতার দরকার পড়ে, এক বাহিনীকে অন্তত আরেকটি বাহিনীর সাথে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করতে হয় এবং ধারাবাহিকভাবে লজিস্টিক্স অপারেশানের দরকার পড়ে – ভবিষ্যতে পাকিস্তান বা চীনের বিরুদ্ধে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে ঠিক এই ধরনের যুদ্ধেই অংশ নিতে হবে”।

তিনি আরও বলেন, কনভেনশনাল যুদ্ধে কাশ্মীরে গেরিলাদের বুলেট মোকাবেলার বিষয়টি বিবেচনায় আসবে না। আমেরিকান পাঠকদের উদ্দেশে তিনি বলেন যে, মার্কিন কৌশলগত পরিকল্পনাকারীদের এই ঘাটতির বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হবে। স্মিথ বলেছেন, ভারতের ব্যাপারে ওয়াশিংটন যে কৌশলগত বাজি ধরেছে, সেখানে এই ধারণা উঠে এসেছে যে, বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা রক্ষা, এশিয়ায় চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক ও অর্থনৈতিক শক্তিকে মোকাবেলা এবং ভারত মহাসাগরের ভেতর দিয়ে চলে যাওয়া সমুদ্র রুটের সুরক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ভারতের উপর নির্ভর করছে। এর জন্য ভারতের একটা সক্ষম সামরিক কাঠামো দরকার। কিন্তু সেই সক্ষমতার কোন অস্তিত্বই নেই বলে স্মিথ মনে করেন।

ডিএসএসসি শিক্ষার্থীদের মূলত পাঞ্জাবে ট্রেঞ্চ খনন করে কীভাবে গতানুগতিক পদ্ধতিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে সেই কৌশল শেখানো হয়েছে। ভারতের অধিকাংশ শিক্ষার্থী ও ফ্যাকাল্টি পাকিস্তানকে এখনও তাদের প্রধান ও এমনকি একমাত্র শত্রু মনে করে। ডিএসএসসি সমন্বিত প্রশিক্ষণের দিকে মনোযোগ দেয়নি এবং কার্যকর আন্ত-সার্ভিস প্রশিক্ষণও দিতে পারেনি, যদিও ডিএসএসসি মূলত তিন বাহিনীর প্রতিষ্ঠান।

সার্বিক কৌশলগত পরিকল্পনা এবং উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়টি এড়িয়ে শুধু মাঠ পর্যায়ের কৌশলের উপর এখানে জোর দেয়া হয়েছে। কর্নেল স্মিথকে এমনকি এটাও বলা হয়েছে যে, ডিএসএসসিতে কর্পস বা রিজিওনাল কমান্ড প্রধানেরা এমনকি একটি কামান বসানোর বিষয় নিয়ে বা একটা পদাতিক স্কোয়াডের উত্তরে বা দক্ষিণের পর্বতমালার দিকে যাওয়া উচিত হবে কি না, সেটা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করেন। স্মিথ মন্তব্য করেন, “সিনিয়র কর্মকর্তারা তাদের বুদ্ধিমত্তার শক্তিকে বিস্তারিত ছক কষতেই খরচ করে ফেলেন। এ ধরনের সিদ্ধান্ত মার্কিন সামরিক বাহিনীতে সাধারণত নিচের পর্যায়ের কর্মকর্তারা নিয়ে থাকেন”।

অন্ধ আনুগত্য

ইন্সট্রাকটররা এখানে সৃজনশীল চিন্তাকে উৎসাহিত করেন না, বরং তাদের চিরাচরিত আদেশ-নিষেধের অন্ধ আনুগত্য প্রত্যাশা করেন। ২০০৭ সালের ব্যাচের এক শিক্ষার্থী বিষয়টা এভাবে বলেছেন: উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীদেরকে একটা বাক্সের মধ্যে রেখে সেনাবাহিনীর ‘পার্টি লাইন’কে শক্তিশালী করা”। ভারতীয় পররাষ্ট্র দফতরের সাবেক কর্মকর্তা এবং হিন্দুত্ববাদের স্কলার পবন কে ভার্মা মনে করেন যে ভারতীয় সমাজের শ্রেণীবিভাজনের সংস্কৃতি থেকেই এই শ্রেণীবিন্যাসটা এসেছে, যেখানে স্ট্যাটাস ঠিক রাখাটা সমাজে টিকে থাকার প্রধান চাবিকাঠি। ভার্মার মতে, একজনকে তার সিনিয়রের কাছে নত হতে হবে এবং তাকে প্রশ্ন করা যাবে না। একই সাথে সিনিয়র তার জুনিয়রদেরকে নিম্ন পর্যায়ের মনে করবেন।

তবে ডিএসএসসির সব শিক্ষার্থী ইন্সট্রাকটরদের শিক্ষা চোখ বুজে গ্রহণ করেন না। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ‘চিন্তাবিদও’ রয়েছেন, যারা কথা বলেন, কিন্তু এদের সংখ্যা ১০ থেকে ২০ শতাংশ বলে শিক্ষার্থীরাই জানিয়েছে। ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী হলো ‘কোস্টার’, যাদের কাছে ডিএসএসতিতে পরবর্তী বাধাটা উৎরে যাওয়াটাই গুরুত্বপূর্ণ। তাদেরকে যে লাইনই বলা হবে, কোন প্রশ্ন ছাড়াই তারা সেটা তোতা পাখির মতো আওড়ে যাবে।

ঐতিহ্যগত সামাজিক শ্রেণীবিন্যাস

ডিএসএসসিতে যে সামাজিক কাঠামো রয়েছে, সেখানে কিছু শ্রেণী আর জাতিগত গোষ্ঠির সফল হওয়ার সুযোগ বেশি। এরা হলো ‘বাছাই হওয়া’ ব্যক্তি, যারা সুবিধাভোগী সামাজিক পরিবেশে বড় হয়েছে এবং যারা উচ্চবর্ণের সদস্য। যাদের ইংরেজিতে কথা বলার যোগ্যতা আছে, তারাও সুবিধা পান। একটা ভালো ব্রিফিং দেয়ার বিষয়টি ডিএসএসসিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের উচ্চ শ্রেণী ও বর্ণের মধ্যে যে ‘বাহাদুরি প্রদর্শনের সংস্কৃতি’ রয়েছে সেটাও এখানে যথেষ্ট প্রভাব ফেলে।

নগণ্য সংখ্যক মুসলিম

ডিএসএসসিতে মুসলিমদের চেয়ে হিন্দু আর শিখদের সুযোগ অনেক বেশি। মুসলিমরা কলেজে এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীতেও একটা ক্ষুদ্র সংখ্যালঘু গোষ্ঠী। “ভারতীয় সেনাবাহিনীতে, মুসলিমরা পুরো বাহিনীর ২ শতাংশের বেশি নয়। আর অফিসার কর্পসের মধ্যে তো এ বিষয়ে কোন পরিসংখ্যানই নেই। ডিএসএসসি আর্মি উইংয়ে সাধারণ এক শতাংশেরও কম (০.৭ শতাংশ) মুসলিম শিক্ষার্থী থাকে। জনসংখ্যার তুলনায় প্রতিনিধিত্ব এখানে ২০ ভাগের এক ভাগ”।

২০০৮ সালের এক শিক্ষার্থী বলেন, যে গুটি কয়েক মুসলিম অফিসারের সাথে তার সাক্ষাত হয়েছে তাদেরকে কর্নেল পদমর্যাদার উপরে কখনই পদোন্নতি দেয়া হবে না। কারণ রাষ্ট্রের প্রতি তাদের আনুগত্য নিয়ে সন্দেহ করা হয়। আর ‘শিখ ছাড়া অন্যদের ভারতীয় সেনাবাহিনীতে অগ্রগতি করতে হলে তাকে হিন্দু হতে হবে’।

১৯৮৫ সালে এই ধারণাটা নিশ্চিত করেছিলেন সাবেক প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জর্জ ফার্নান্দেজ। তিনি স্বীকার করেছিলেন যে, “মুসলিমদেরকে সশস্ত্র বাহিনীকে প্রত্যাশা করা হয় না, কারণ তাদেরকে সব সময় সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখা হয় – সেটা আমরা স্বীকার করি বা না করি। একজন মুসলমানকে পাকিস্তানের পক্ষে পঞ্চম স্তম্ভ বলে মনে করে অধিকাংশ ভারতীয়”। স্মিথ দেখেছেন যে, কর্মকর্তা-শিক্ষার্থীরা হিন্দুত্ববাদী আদর্শের সমর্থন না করলেও, তারা পাকিস্তানের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শক্ত অবস্থানকে সমর্থন করেন।

কিন্তু স্মিথ সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীতে মুসলিমদের যে ক্ষুদ্র সংখ্যক প্রতিনিধিত্ব রয়েছে, সেটার কারণে একটা সুস্পষ্ট অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সমস্যা তৈরি হবে। তিনি উল্লেখ করেন, “বর্তমানে ভারতে দীর্ঘতম সময় ধরে যে দুটো গেরিলা তৎপরতা চলছে, সেটার একটা হচ্ছে ভারতের একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীরে, দ্বিতীয়টি হচ্ছে উত্তরপূর্ব ভারতে, যেখানে আসাম রাজ্যে জনসংখ্যার ৩১ শতাংশ হলো মুসলিম”।

তিনি আরও বলেন, মুসলিমদেরকে দীর্ঘ সময় অবজ্ঞা করা যাবে না, কারণ তাদের জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় বাড়বে। পিউ রিসার্চ সেন্টারের হিসেব মতে মুসলিম জনসংখ্যার দিক থেকে ভারত এই মুহূর্তে ইন্দোনেশিয়ার পরেই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ, যেখানে মুসলিমদের সংখ্যা হলো ১৭৬ মিলিয়ন। পাকিস্তানের তুলনায় যেটা সামান্য বেশি। পিউ আভাস দিয়েছে যে, ২০৫০ সাল নাগাদ ভারত বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল মুসলিম দেশে পরিণত হবে এবং মুসলিমদের সংখ্যা হবে ৩১০ মিলিয়নের বেশি।

স্মিথ হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন যে, মোদির শাসনামলে মুসলিমদেরকে আরো প্রান্তিক ও দুর্বল করার চেষ্টা চালনোর কারণে ভারতের জন্য এর ফল হবে সুদূর প্রসারী। তিনি বলেন, “২০১৯ সালে মোদি সরকার আবারো ক্ষমতায় আসার পর একের পর এক এমন অনেক বিতর্কিত পদক্ষেপ নিয়েছেন যা মুসলিম সম্প্রদায়কে ক্ষুদ্ধ করে তুলেছে। এর মধ্যে রয়েছে ভারতের সংবিধানে থাকা জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বিষয়ক অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল, জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) তৈরির কাজ শুরু ও নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) পাস, যা মুসলিমদের বাদ দিয়ে অন্য ধর্মের কাগজপত্রবিহীন অভিবাসীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ সুগম করেছে।”

“কি ঘটতে পারে সে ব্যাপারে সতর্ক হতে প্রতিবেশী পাকিস্তান হলো একটি উদাহরণ। সেখানে (পাকিস্তানে) পাঞ্জাবি-প্রাধান্যের শাসনামলে দুই দশক ধরে রাজনৈতিক অবদমন ও অর্থনৈতিক আধিপত্যবাদের শিকার হয়ে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙ্গালী জনগণ রাষ্ট্র থেকে এতটাই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে যে শেষ পর্যন্ত তারা রুখে দাঁড়ায় (ভারতের সহায়তায়) এবং নিপীড়কদের জোয়াল কাঁধ থেকে ছুঁড়ে ফেলে।”

চীনের চেয়ে পাকিস্তানকে অগ্রাধিকার

প্রশিক্ষণ মূলত হিমালয়ের দুর্গম এলাকায় চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার চেয়ে পাঞ্জাবের সমতল ভূমিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য। কারণ পাকিস্তানকেই আসল ‘শত্রু’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অন্যদিকে চীনকে (অন্তত ২০১৭ সাল পর্যন্ত) ‘শত্রু’ হিসেবে না দেখে ‘অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী’ ভাবা হয়।

বাকি ভারতের মতো ডিএসএসসি-তেও পাকিস্তানের ব্যাপার মোহ রয়েছে। ১৯৯২ ব্যাচের এক ছাত্র বলেছেন, তার সহপাঠীরা মনে করে যে পাকিস্তান হলো দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে সব নষ্টের গোড়া। তারা মনে করে সেনাবাহিনী না থাকলে পাকিস্তান হতো ভারতের বন্ধু। তাই পাকিস্তান সেনাবাহিনী যাতে রাজনৈতিক প্রাধান্য বিস্তার করতে না পারে এবং ভবিষ্যতে পাক-ভারত সংঘাত প্রতিরোধের জন্য ভারতের প্রধান লক্ষ্য হতে হবে ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে ধ্বংস’ করা।

২০১১ সালে ডিএসএসসির শিক্ষার্থীদের জন্য ইস্যু করা চীন সম্পর্কিত একটি রেফারেন্স বইয়ে দেখা যায় চীনের ব্যাপারে সেনাবাহিনীর মনোভাব দ্ব্যর্থবোধক। একদিকে তারা সীমান্ত সমস্যা, দালাই লামা ইস্যু, পাকিস্তানের মিসাইল ও পারমাণবিক কর্ম সূচিতে চীনের সহায়তার মতো জ্বালাতনকে স্বীকার করছে। আবার অন্যদিকে বলা হচ্ছে, ২০০৭ সাল থেকে ভারত ও চীন যৌথ সামরিক মহড়া ও নিয়মিত প্রতিরক্ষা সংলাপে অংশ নিচ্ছে। সার্বিক বিশ্বাস হলো, চীন ও ভারত বাণিজ্যের বন্ধনে বাধা, যা সহজে ছিন্ন করা যাবে না। তাই দুই দেশের মধ্যে সমস্যাগুলো আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যাবে। কিন্তু পাকিস্তানের ক্ষেত্রে তেমনটা নয়, যার সঙ্গে ভারতের তেমন বাণিজ্য সম্পর্ক নেই। তারা বরং কাশ্মীর এবং ভারতের অন্যান্য অংশে ‘সন্ত্রাসী হামলা’ করে যাচ্ছে।

বিদ্রোহ-দমন

ভারত বহু দশক ধরে বিদ্রোহ-দমন চেষ্টায় ব্যর্থ হওয়ার পরও বিদ্রোহ-দমন কৌশল সংস্কার নিয়ে ডিএসএসসিতে তেমন কোন আলোচনা হয় না। স্মিথ উল্লেখ করেন, ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ডকট্রিন কার্যকর বলে গভীর প্রত্যয় থাকার পরও ভারতীয় সেনাবাহিনী দেশের সবচেয়ে দীর্ঘ চারটি বিদ্রোহের অবসান ঘটাতে পারেনি। মানবাধিকার লঙ্ঘনও একটি কালোদাগ। বিদ্রোহ-কবলিত এলাকাগুলোতে সেনাদেরকে প্রচণ্ডরকম সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে অযুহাত দেয়া হলেও সমালোচকরা এগুলোকে আমলে নেন না।

পারমাণবিক যুদ্ধ

পাকিস্তানের কাছে যুদ্ধক্ষেত্রে মোতায়েনের উপযোগী ট্যাকটিকাল পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। কিন্তু ডিএসএসসি কোর্সে পারমাণবিক যুদ্ধ সম্পর্কিত কোন বিষয়বস্ত নেই বা থাকলেও খুবই সামান্য। ধরে নেয়া হয় যে, ভারতের বিরুদ্ধে ভবিষ্যৎ যুদ্ধে পাকিস্তান পারমাণবিক ও রাসায়নিক অস্ত্র মোতায়েন করবে। অথচ ডিএসএসসি কারিকুলামে এসব অস্ত্রের প্রভাব নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। কীভাবে এসব অস্ত্রের মোকাবেলা করতে হবে সে বিষয়ে তেমন অর্থবহ কোন প্রশিক্ষণ দেয়া হয় না। অযুহাত দেয়া হয় যে, পাকিস্তান ও ভারত দুই দেশের কাছেই পারমাণবিক অস্ত্র আছে বিধায় তাদের মধ্যে পারমাণবিক যুদ্ধের সম্ভাবনা নেই। এসব অস্ত্র বরং প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করবে, মোতায়েন করা হবে না।

মার্কিন বিরোধিতা

স্মিথ উল্লেখ করেন, আমেরিকার দৃষ্টিকোণ থেকে সবচেয়ে বিরক্তিকর বিষয় হলো, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে দুই দশক ধরে রাজনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হলেও ভারতীয় সেনাবাহিনীর সিনিয়র, মধ্য ও জুনিয়র অফিসারদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে অত্যন্ত উচ্চ পর্যায়ের অবিশ্বাস (এবং কিছুটা প্রচ্ছন্ন শত্রুতা) রয়েছে।

সূত্র : এসএএম


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us