মধ্য এশিয়া নিয়ে চীন-রাশিয়ার চ্যালেঞ্জ
পুতিন ও শি - ছবি সংগৃহীত
চীনের পশ্চিমাঞ্চলীয় জিনজিয়াংয়ের আশেপাশে নিরাপত্তার একটি অঞ্চল তৈরি করার সময় তার বিশাল মহাদেশীয় গিরিখাতজুড়ে চীনের জন্য বাণিজ্যপথ উন্মুক্ত করার লক্ষ্য রয়েছে। প্রথম পর্যায়ে বহু বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের মধ্য দিয়ে মধ্য এশিয়া এবং এর ওপারে ইরান, রাশিয়া, ককেশাস, তুরস্ক ও ইউরোপের সাথে রেল ও সড়ক সংযোগ রয়েছে। চীন এই অঞ্চলজুড়ে একটি মুক্ত-বাণিজ্যচুক্তির দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য অনুসরণে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভূখণ্ড, প্রযুক্তিগত এবং রাজনৈতিক বাধা হ্রাস করার লক্ষ্য নিয়েছে। তাজিকিস্তান এবং কিরগিজস্তানের মতো দরিদ্র দেশগুলো তাদের অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি বাড়াতে কৃষি ও শিল্পে বিনিয়োগের প্রত্যাশা করে। এই পরিকল্পনার একটি কৌশলগত ও আদর্শিক দিকও রয়েছে, যা চীনা রাজনৈতিক প্রভাবকে প্রসারিত করে এবং একটি রাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন উন্নয়নের মডেলকে প্রচার করে থাকে। যদি এটি সফল হয় তবে এটি নতুন ধরনের আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলায় প্রথম পদক্ষেপ সৃষ্টি করতে পারে যেখানে চীন অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
চীনা পরিকল্পনা নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। মধ্য এশীয় অভিজাতরা অর্থায়নের আগমনকে স্বাগত জানালেও চীনা বিনিয়োগকারীরা প্রায়ই জনগণের সন্দেহ সংশয়ের মুখোমুখি। চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য জমি নিয়ে যাওয়ার গুজবে কাজাখস্তানে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল। ২০১৬ সালের আগস্টে বিশকেকের চীনা দূতাবাসে একটি আত্মঘাতী বোমা হামলা নিরাপত্তা সংক্রান্ত দুর্বলতার বিষয়ে বেইজিংয়ে আশঙ্কা জাগিয়ে তোলে। অনেক বিনিয়োগ সাধারণ জনগণের উপকার করে না এবং উচ্চ স্তরের দুর্নীতি হয় বলে অভিযোগও রয়েছে। জাতীয়তাবাদ, দুর্নীতি ও পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে ক্ষোভের এই সংমিশ্রণ মধ্য এশিয়ায় চীনবিরোধী এবং একই সাথে সরকারবিরোধী সংবেদনশীলতা জাগিয়ে তুলতে পারে বলেও আশঙ্কা রয়েছে।
এসআরইবি রাশিয়ার জন্যও এক ধরনের চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করে। ২০১৪ সালের মে মাসে, রাশিয়া, বেলারুস, কাজাখস্তান কিরগিজস্তান এবং আর্মেনিয়া নিয়ে যে ইইইউ গঠন করা হয় তার লক্ষ্য হচ্ছে আমদানিতে শুল্ক আরোপ করার সময় তার সীমান্তের মধ্যে পণ্য, শ্রম, পরিষেবা এবং মূলধনের অবাধ চলাচল নিশ্চিত করা।
তবে এর রাজনৈতিক সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। উজবেকিস্তান এবং তুর্কমেনিস্তান পরিষ্কার করে বলেছে যে, তারা রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন নিরাপত্তা ব্লক ‘সম্মিলিত সুরক্ষা চুক্তি সংস্থা’য় (সিএসটিও) যোগদান করবে না। আবার এর সদস্যপদ প্রত্যাখ্যানও করবে না। যদিও রাশিয়া মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর জন্য মূল অংশীদার হিসেবে রয়েছে, তবে মধ্য এশিয়ায় চীনের গভীর এবং বহু স্তরের রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব বর্তমানে মস্কোকে ছাড়িয়ে গেছে।
রাশিয়া এবং চীন ইইইউ এবং এসআরইবির মধ্যে সহযোগিতা করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছে। মস্কো ‘বৃহত্তর ইউরেশিয়া’ ধারণাটি প্রচার করেছে, যা একটি চূড়ান্ত প্রকল্প, যা চীন, রাশিয়া এবং মধ্য এশিয়াকে একটি নতুন অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ব্লকের সাথে যুক্ত করবে এবং চীনের সহযোগিতাকে এর অন্তর্নিহিত হিসাবে দেখছে। তবে মধ্য এশীয় রাষ্ট্রগুলোর প্রত্যেকের নিজস্ব অ্যাজেন্ডা রয়েছে এবং আঞ্চলিক বাণিজ্যে বাধা অতিক্রম করা কঠিন হবে। সুতরাং, কাজাখস্তান রাশিয়ান আর চীনা জড়িতদের ভারসাম্য রক্ষার জন্য পশ্চিমের সাথে শক্তিশালী যোগাযোগ বজায় রাখতে আগ্রহী এবং উজবেকিস্তান তার প্রতিবেশীদের সাথে আরো ভালো সম্পর্ক চাওয়ার লক্ষণ সত্ত্বেও তার সীমানা পেরিয়ে অবাধ বাণিজ্যকে সীমাবদ্ধ করেছে।
মধ্য এশিয়ার রাজনৈতিক অস্থিরতার পেছনে অর্থনৈতিক কারণ ছাড়াও বৈশ্বিক প্রভাব বিস্তারের একটি সমীকরণও থাকতে পারে। আন্তর্জাতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পাশ্চাত্য কোভিড-১৯ উত্তর বিশ্বে চীনা প্রভাবকে সীমিত করার নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। কিরগিজস্তানের রাজনৈতিক অস্থিরতার ব্যাপারে পাশ্চাত্য সংযোগের একটি সন্দেহ চীন এবং রাশিয়া দুই দেশেরই রয়েছে। এ কারণে রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ন্ত্রণ এবং শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে রাশিয়াকে নেপথ্যে বেশ উদ্যোগী দেখা গেছে। তবে কিরগিজ রাজনৈতিক সঙ্কটের দ্রুত অবসান ঘটে যাবে এমনটি মনে হয় না।
mrkmmb@gmail.com