কোলন ক্যান্সারের ৭ লক্ষণ
কোলন ক্যান্সারের ৭ লক্ষণ - ছবি সংগৃহীত
কোলোরেকটাল ক্যান্সার বলতে বৃহদান্ত্র থেকে মলদ্বার পর্যন্ত অংশের ক্যান্সারকে বুঝায়। আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির মতে প্রতি ২১ জন পুরুষের মধ্যে একজন এই ক্যান্সারের ঝুঁকিতে আছেন এবং ক্যান্সারে মৃত্যুর দ্বিতীয় কারণ এটি। উন্নত বিশ্বে কোলোরেকটাল ক্যান্সারের প্রকোপ বেশি হলেও বাংলাদেশেও এই ক্যান্সাার দিন দিন বাড়ছে। বৈচিত্র্যপূর্ণ লক্ষণ থাকায় এই রোগ প্রাথমিক অবস্থায় সহসা ধরা পড়ে না।
ঝুঁকিতে যারা
ষ বেশি বয়স, তবে কম বয়সেও হতে পারে
ষ যাদের পারিবারিক ইতিহাস আছে
ষ উচ্চ প্রাণিজ প্রোটিনযুক্ত খাবার গ্রহণ
ষ আঁশ জাতীয় খাবার কম খাওয়া
ষ ধূমপান ও মদ্যপান
ষ শারীরিক শ্রম কম করা
ষ যাদের কোলনে আলসারেটিভ কোলাইটিস বা ক্রন্স ডিজিজ অথবা পলিপ আছে।
এ ছাড়া ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি, সেলেনিয়াম ও ভিটামিন ই ঘাটতি এ ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
লক্ষণ
ষ মলত্যাগের অভ্যাসের পরিবর্তন, যেমন : পাতলা পায়খানা বা কোষ্ঠকাঠিন্য, বারবার বা অসম্পূর্ণ পায়খানা, পায়খানা পেন্সিলের মতো চিকন হওয়া।
ষ পায়খানার সাথে বা মলদ্বার থেকে রক্ত পড়া এবং রক্তশূন্যতা
ষ পেটে ব্যথা
ষ পেট ফেঁপে থাকা
ষ অবসাদ বা ক্লান্তি
ষ পেটে চাকা সৃষ্টি হওয়া
ষ ওজন কমে যাওয়া
রোগ নির্ণয়
ওপরের লক্ষণ থাকলে একজন সার্জনের পরামর্শ মতো প্রয়োজন অনুযায়ী মলদ্বার পরীক্ষা; আল্টাসনোগ্রাম, কোলোনোসকপি ও বায়োপসি, সিটি স্ক্যান বা এমআরআই, পিইটি-সিটি, রক্তের সিইএ এবং অন্যান্য পরীক্ষার মাধ্যমে এ রোগ শনাক্ত করা যায়।
চিকিৎসা
প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত হলে অপারেশনের মাধ্যমেই সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। রোগের অবস্থাভেদে সার্জারির আগে বা পরে কেমোথেরাপি, যুগপৎ কেমো-রেডিওথেরাপি, টার্গেটেড থেরাপি ইত্যাদি চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। সার্জারির পর কেমোথেরাপি লাগবে কি না, তা নির্ভর করে রোগের স্টেজ বা অবস্থার ওপর। অপারেশনের পর কেটে আনা সম্পূর্ণ অংশের হিস্টোপ্যাথলজি পরীক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিরোধ
রোগের ঝুঁকি কমানের জন্য খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার পরিবর্তন জরুরি। প্রাণিজ প্রোটিন কমানো, আঁশযুক্ত শাক সবজি ও ফলমূল বেশি খাওয়া প্রয়োজন। ধূমপান ও মদ্যপান বাদ দিতে হবে। শারীরিক শ্রম বাড়াতে হবে। সম্ভব হলে ব্যায়াম করতে হবে। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
প্রাথমিক অবস্থায় রোগ শনাক্তকরণের জন্য উপরোক্ত লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির নির্দেশনা হলো- বয়স ৫০ হলে চিকিৎসকের পরামর্শমতো এফওবিটি এবং কোলোনোসকপি বা অন্যান্য স্ক্রিনিং পরীক্ষা করা প্রয়োজন। পলিপ থাকলে বা পারিবারিক ইতিহাস থাকলে আরো আগেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত। দাবি করা হয় যে, এসপিরিন জাতীয় ওষুধ কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে। তবে তা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া খাওয়া উচিত নয়।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, রেডিওথেরাপি (ক্যান্সার চিকিৎসা) বিভাগ, শেরেবাংলা মেডিক্যাল কলেজ, বরিশাল