যেভাবে হয় যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন
ট্রাম্প ও বাইডেন - ছবি : সংগৃহীত
সামনেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। সেই নির্বাচনে কী হতে চলেছে তা নিয়েই সরগরম গোটা আমেরিকা। ট্রাম্প আবার ক্ষমতায় ফিরবেন নাকি বাইডেন হবেন দেশের নতুন প্রেসিডেন্ট তা নিয়ে চলছে জোর আলোচনা ৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট যে শুধুমাত্র আমেরিকার সব থেকে শক্তিশালী মানুষ, এমনটা নয় ৷ বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তিনি গোটা বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী ব্যক্তি ৷ আগামী মাসেই অনুষ্ঠিত হতে চলেছে আমেরিকার নির্বাচন ৷ সুযোগ রয়েছে পালাবদলের ৷ তবে কীভাবে হয় এই নির্বাচন ৷ কোন নিয়মেই বা প্রার্থীকে জয়ী ঘোষণা করা হয় ? ভোটগ্রহণ থেকে শুরু করে হার-জিত নির্ধারন ৷ কেমন হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ৷ জেনে নিন খুঁটিনাটি ৷
কোন বছরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয় ?
আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয় লিপ ইয়ারে ৷ অর্থাৎ প্রতি চার বছর পরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই ধারা চলে আসছে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকেই ৷ সচরাচর নভেম্বর মাসের প্রথম মঙ্গলবারে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নিয়ম অনুযায়ী এবারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে ৩ নভেম্বর। এবং চার বছর পরপর, 'ইলেকটোরাল কলেজ সিস্টেম' বা 'ব্যাটলগ্রাউন্ড স্টেট'-এর মতো শব্দগুলির সঙ্গে সব মানুষের পরিচিতি ঘটে।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট কীভাবে নির্বাচিত হন ?
মার্কিন নির্বাচন অনেকটাই অন্য রকমের হয় ৷ সাধারণত আমরা সব দেশের নির্বাচনেই দেখে থাকি, যে প্রার্থী সব থেকে বেশি ভোট পেয়েছেন, তিনি জিতেছেন। তবে আমেরিকার ক্ষেত্রে তেমনটা নাও হতে পারে। কারণ বৃহৎ ক্ষেত্রে প্রাপ্ত ভোটের উপর নির্ভর করে জয়-পরাজয় নির্ধারণ হয় না। নির্ভর করে ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতির উপর। এবং যে রাজ্যে জনসংখ্যা বেশি, তার ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যাও বেশি। আমেরিকার মানুষ সরাসরি ভোট দিয়ে তাদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে পারেন না ৷ ইলেকটোরাল কলেজের জন্য নাগরিকরা ভোট দিয়ে থাকেন ৷ ইলেকটোরাল কলেজ এবং আমেরিকান কংগ্রেসের সদস্যসংখ্যা এক ৷ আমেরিকান কংগ্রেস হলো আমেরিকান পার্লামেন্ট যার দুটি কক্ষ- ‘দ্য সেনেট’ এবং ‘হাউজ অফ রিপ্রেসেনটেটিভস’ ৷ এক্ষেত্রে দ্য সেনেট হলো উচ্চকক্ষ এবং হাউজ অফ রিপ্রেসেনটেটিভস হল নিম্নকক্ষ ৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে দুটি দল ৷ রিপাব্লিকান ও ডেমোক্র্যাট ৷ বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একজন রিপাবলিকান। এই দলটিকে সেদেশে 'গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টি' বলেও ডাকা হয়। রিপাবলিকানরা আদতে একটি রক্ষণশীল রাজনৈতিক দল। ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টি, করের হার কমানো, বন্দুক রাখার অধিকার এবং অভিবাসনের উপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের পক্ষে। অপর দিকে জো বাইডেন হলেন ডেমোক্র্যাটদের পক্ষের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী। ডেমোক্র্যাট দলটি উদারপন্থী মনোভাবের জন্য পরিচিত। নাগরিক অধিকার, অভিবাসন, এবং জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয়ে তাদের উদারপন্থার জন্যে দলটি পরিচিত।
ঐতিহাসিকভাবে দেখা গেছে যে, আমেরিকার শহরাঞ্চলে ডেমোক্র্যাটদের সমর্থন তুলনামূলকভাবে বেশি।
লিস্ট সিস্টেম কী ?
আমেরিকার ইলেকটোরাল কলেজের নির্বাচনে লিস্ট সিস্টেম ব্যবহৃত হয় ৷ অর্থাৎ জয়-পরাজয়ের লিস্ট ৷ সহজভাবে বললে ডেমোক্র্যাটিক ও রিপাবলিকান দুই দলই ধরা যাক, ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যে ৫৫ জনের লিস্ট তৈরি করে ৷ ভোটাররা এই ৫৫ জনের জন্য আলাদাভাবে ভোট দেবেন না ৷ তারা ভোট দেবে ডেমোক্র্যাটিক ও রিপাবলিকান পার্টির দেয়া ৫৫ জনের সামগ্রিক লিস্টে ৷ এর অর্থ হলো, বা তো এই ৫৫ জন মানুষই জয়ী হবেন অথবা ৫৫ জনই হারবেন ৷ এর মাধ্যমেই গতবার নির্বাচনে ইলেকটোরাল কলেজ কম ভোট পেয়েও ডোনাল্ড ট্রাম্পকেই জয়ী ঘোষণা করা হয় ৷
মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ইলেকটোরাল কলেজ পদ্ধতি
আমেরিকার রাজ্যগুলোর জনসংখ্যার ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়ে থাকে এই ইলেকটোরাল কলেজ ভোটের সংখ্যা। যে রাজ্যে জনসংখ্যা বেশি, তার ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যাও বেশি। আমেরিকায় মোট ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা হচ্ছে ৫৩৮। জিততে গেলে ২৭০টি বা তার বেশি ইলেকটোরাল ভোট পেতে হবে। প্রতিটি রাজ্যে বরাদ্দকৃত ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা সেই রাজ্যে জনপ্রতিনিধি ও সিনেটরের সংখ্যার সমান থাকে। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়াতে রয়েছে সবচেয়ে বেশি ৫৫টি ইলেকটোরাল কলেজ।
ইলেকটোরাল কলেজকে মনোনীত করা কোনো নির্দিষ্ট প্রেসিডেন্ট পদ প্রার্থীকে ভোট দেয়ার অর্থ হলো তার দলের ইলেকটোরাল কলেজকে মনোনীত করা। পরে সেই ইলেকটোরাল কলেজ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন জনগণের পছন্দের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীকে। যে প্রার্থী একটি রাজ্যে অধিকাংশ ইলেকটোরাল কলেজ পাবেন তিনি ওই রাজ্যের সবগুলো ইলেকটোরাল ভোট পেয়ে যাবেন। যেমন, টেক্সাসে ৩৪টি ইলেকটোরাল কলেজ রয়েছে। ধরা যাক ট্রাম্পের রিপাবলিকান পার্টি আসন্ন নির্বাচনে তার মধ্যে ১৮টি পেল, তাহলে পুরো ৩৪টি কলেজ ভোটই ট্রাম্পের নামে যাবে। এভাবেই আমেরিকার এক একটি রাজ্য এক একটি দল পেয়ে যায়। এবং মোট ইলেকটোরাল সংখ্যা যোগ করে জিততে গেলে ২৭০ বা তার বেশি ইলেকটোরাল ভোট পেতে হয় জিততে গেলে।
কীভাবে নির্বাচনের প্রচার হয় আমেরিকায় ?
আমেরিকায় যেকোনো নির্বাচনের প্রচারে বিভিন্ন পার্টির বড় বড় র্যালি বেরোতে দেখা যায় না ৷ টিভিতে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটিক দুই দলের প্রার্থীরা বিভিন্ন ডিবেট বা বিতর্ক সভায় অংশ নেন ৷ সেখানেই নিজের পার্টির কাজকর্ম এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন তারা ৷ এরপর নভেম্বরের প্রথম মঙ্গলবার নির্বাচনের আয়োজন করা হয় ৷ যেটা এ বছর পড়েছে ৩ নভেম্বর ৷ আমেরিকার নাগরিকরা ইলেকটোরাল কলেজের মনোনীত প্রার্থীদের জন্য ভোট দেন ৷ একই দিনে আমেরিকায় গোটা দেশজুড়ে নির্বাচনের আয়োজন করা হয় ৷ নির্বাচন হয় প্রেসিডেন্ট, পার্লামেন্ট এবং গভর্নরের পদগুলোর জন্য ৷
সূত্র : নিউজ ১৮