আর্মেনিয়া-আজারবাইজান লড়াই : রাশিয়াকে তুরস্কের হুঁশিয়ারি
আর্মেনিয়া-আজারবাইজান লড়াই : রাশিয়াকে তুরস্কের হুঁশিয়ারি - ছবি : সংগৃহীত
আজারজাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে টানা প্রায় দুই সপ্তাহের যুদ্ধের পর চলতি সপ্তাহের শনিবার যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত তা মানেনি কোনো দেশই। রোববারের পর সোমবারও থামেনি নাগার্নো-কারাবাখ নিয়ে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার যুদ্ধ। প্রতিদিনের মতো সোমবারও দুই দেশ যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের জন্য অপরের দিকে আঙুল তুলেছে।
শনিবার মস্কোয় আজারবাইজান এবং আর্মেনিয়া একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছেছিল। আপাতত যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। একই সঙ্গে দুই দেশই আটক যুদ্ধাপরাধীদের হস্তান্তর করবে বলে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু এখনো পর্যন্ত বাস্তবে তার প্রভাব দেখা যায়নি। আর এর মধ্যেই আর্মেনিয়াকে নিয়ে তারই মিত্রদেশ রাশিয়াকে কড়া বার্তা দিয়েছে তুরস্ক। শান্তি চাইলে আর্মেনিয়াকে অবশ্যই আজারবাইজানের জমি ছেড়ে দিতে হবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে আঙ্কারা।
সোমবার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সার্গেই শোইগু’র সাথে টেলিফোনে কথা বলেন তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হুলুসি আকার। সেখানে তিনি রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রীকে বলেন, আর্মেনিয়াকে এখনই আজারবাইজানের ভূমি ছেড়ে চলে যেতে হবে এবং বেসামরিক মানুষ-জনের উপর আক্রমণ বন্ধ করতে হবে।
তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, নিজের বেদখল হয়ে যাওয়া জমি ফেরত পেতে আজারবাইজান আরো ৩০ বছর অক্ষো করবে না। আর্মেনিয়ার উপর আজারবাইজানের এই হামলাকে তুরস্ক সমর্থন করছে জানিয়ে তিনি বলেন, নিজের বেদখল হয়ে যাওয়া জমি আবারো ফেরত পেতে নাগার্নো-কারাবাখে অভিযান চালাচ্ছে আজারবাইজান।
সূত্র : ইয়েনি শাফাক
তুরস্ককে কেন পাশে চায় আজারবাইজান
আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ বলেছেন, নাগার্নো-কারাবাখে চলমান যুদ্ধ নিয়ে আর্মেনিয়ার সাথে কখন আলোচনা শুরু হবে সেটা তার জানা নেই, কিন্তু আলোচনা যখনই হোক, সেই আলোচনায় অবশ্যই তুরস্ককে থাকতে হবে। যুদ্ধরত এই দুই দেশের মধ্যে ভঙ্গুর অস্ত্রবিরতির কারণে কার্যকর আলোচনার বিষয়ে ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যেই আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট এ কথা বলেন।
এদিকে সোমবারও নাগার্নো-কারাবাখ ও এর আশপাশের অঞ্চলে নতুন করে হামলার জন্য আজারবাইজান ও আর্মেনিয়া একে অপরকে দোষারোপ করেছে।
নাগার্নো-কারাবাখ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে দ্বন্দ্বের মধ্যস্থতা করার জন্য ফ্রান্স, রাশিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে গঠিত ‘মিনস্ক গ্রুপ’কে পক্ষপাতদুষ্ট বলে উল্লেখ করেন আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ। পাশাপাশি তুরস্ককে বৈশ্বিক পরাশক্তি উল্লেখ করে তিনি বলেন, তুরস্ক সিরিয়া সঙ্কট, লিবিয়া সঙ্কটসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সঙ্কট সমাধানের সাথে জড়িত আছে। আর তাই নাগার্নো-কারাবাখ সঙ্কট সমাধানের সাথেও তুরস্ককে সম্পৃক্ত থাকতে হবে।
তিনি আরো বলেন,‘তুরস্ক মিনস্ক গ্রুপেরও সদস্য। তাহলে পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে মিলে তুরস্ক এখানে মধ্যস্থতা করুক। কিন্তু অনেক পশ্চিমা দেশই এটা গ্রহণ করতে রাজি নয়। তুরস্ক পুরোপুরি স্বাধীন (মধ্যস্থতা করার ক্ষেত্রে) এবং আঙ্কারার কথার একটা আলাদা মূল্য আছে।’
সূত্র : ইয়েনি শাফাক
আর্মোনিয়ার হামলার কঠোর প্রতিশোধ নেয়ার হুঁশিয়ারি আজারবাইজানের
যুদ্ধবিরতির মধ্যেই আজারবাইজানের বেসামরিক এলাকায় আর্মেনিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বাকু। শনিবার রাতের ওই হামলায় অন্তত সাত আজেরি নাগরিক নিহত হয়। রোববার টুইটারে দেয়া পোস্টে ওই হামলার কঠোর প্রতিশোধ নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ।
টুইটে প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভ বলেন, ‘আর্মেনিয়ানদের লক্ষ্য ছিল মুক্ত অঞ্চলগুলো পুনরায় দখল করা। এই অপরাধের দায় দেশটির রাজনৈতিক-সামরিক নেতৃত্বকে নিতে হবে। আর্মেনিযার এই হামলার কঠোর প্রতিশোধ নেবে আজারবাইজান।’
মধ্যরাতে আবাসিক এলাকায় আর্মেনিয়ার এমন হামলাকে যুদ্ধাপরাধ এবং জেনেভা কনভেনশনের গুরুতর লঙ্ঘন হিসেবেও অভিহিত করেন আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট।
এদিকে কারাবাখ অঞ্চলে আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যকার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। সংস্থার পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান জোসেফ বোরেল এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমরা বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা ও হতাহতের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
নাগার্নো-কারাবাখ অঞ্চল নিয়ে আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের পুরনো সংঘাত গত ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে নতুন করে আবার শুরু হয়। প্রায় দুই সপ্তাহের সংঘাতে এখন পর্যন্ত ৩ শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে। শুক্রবার (৯ অক্টোবর) রুশ প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে দুই পক্ষ মস্কোতে এক আলোচনায় অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হয়। সেই আলোচনা শেষে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ শনিবার আজারবাইজান ও আর্মেনিয়ার মধ্যে অস্ত্রবিরতির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।
এদিকে রোববার এক টুইটার পোস্টে আজারবাইজানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় লিখেছে, ‘আর্মেনীয় বাহিনী রাতে নতুন করে গানজার আবাসিক এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। এতে সাত জন নিহত ও ৩৩ জন আহত হয়েছে। হতাহতদের মধ্যে শিশুও রয়েছে।’
সূত্র : ইয়েনি শাফাক