বিন সালমান ও সৌদি আরবের বর্তমান সঙ্কট
প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান - ছবি : সংগৃহীত
মোহাম্মদ বিন সালমানের দুর্র্বিনীত অভিযান তার ক্ষমতাকে সুসংহত করার পরিবর্তে সৌদি কিংডমকে আরো দুর্বল করে তোলে। ইয়েমেনের পাঁচ বছরের যুদ্ধের প্রয়োজনে সৌদি আরবকে বিপুল অস্ত্র ক্রয় করতে হয়েছে। তা সত্ত্বেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মানবিক ধ্বংসযজ্ঞ চলছে অবাধে। আরো খারাপ দিক হচ্ছে, যুদ্ধের অভিঘাত সৌদি আরব এখন নিজে উপলব্ধি করছে। ইয়েমেনি হুতিরা এখন সৌদি আরবে তাদের ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত বাড়িয়েছে। এক সময়ের সৌদি আরবের অর্জন হিসেবে পরিচিত ‘গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল’ (জিসিসি) মোহাম্মদ বিন সালমানের অদূরদর্শী নীতি-অবস্থানের কারণে এখন ভঙ্গুর। সৌদি আরব একসময় নিজেকে গর্বের সাথে ভাবত আঞ্চলিক প্র্যাগমেটিজম ও স্ট্যাবিলিটির একটি স্তম্ভ হিসেবে, আজ তা পরিণত হয়েছে একটি যুদ্ধবাজ অস্থিতিশীল রাষ্ট্রে।
অর্থনৈতিক রূপান্তরের লক্ষ্যে বড় ধরনের রাজনৈতিক সংস্কারের পথ উন্মুক্ত করার পরিবর্তে তরুণ যুবরাজ আরব আমিরাতের পদাঙ্ক অনুসরণ করে কোনো ধরনের কৌশল অবলম্বন না করেই দেশটিকে পরিণত করেন নিপীড়নমূলক পুলিশি রাষ্ট্রে। বন্ধ হয়ে পড়ে দেশটিতে সামাজিক উদারবাদের চর্চা। উল্টো পরিণত হয় ঘাটতি বাজেটের দেশে, যা অভ্যন্তরিন জনঅসন্তোষের কারণ। প্রথম দিকে সামাজিক গতিময়তা ও নারীর ক্ষমতায়নের উদ্যোগ নিয়ে এক ধরনের প্রত্যাশা জন্মালেও, অল্প সময়েই রূপ নেয় নৈরাশ্যে। কারণ, সৌদি আরবের অর্থনৈতিক সংস্কার ও বহু- শতকোটি ডলারের প্রকল্পগুলো থেমে যায়, যুবসমাজে বেকারত্ব থেকে যায় ২৯ শতাংশে। সবচেয়ে বড় কথা, পুরো অঞ্চলজুড়ে সৌদি আরবের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধ কমে যায়।
এসব ব্যর্থতার মধ্যে যোগ হয়েছে ইরান-তুরস্ক নিয়ে অস্বস্তি। তারপরও মোহাম্মদ বিন সালমান বেপরোয়া। তিনি আবার আঞ্চলিক ক্ষমতায় ফিরে আসার চেষ্টা করতে পারেন আগামী জি-২০ শীর্র্ষ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে। সৌদি আরব আয়োজন করতে যাচ্ছে এ সম্মেলন। কিন্তু তাতেও কিছু হবে বলে মনে হয় না। কারণ, সৌদি আরবের পৃষ্ঠপোষক ট্রাম্প নির্বাচনে হারতে যাচ্ছেন বলে অনেকের ধারণা। তা হলে কি ইসরাইলই শেষ আশ্রয়?
ধ্বংসাত্মক নীতি অবলম্বন পাল্টানো, ইয়েমেনের যুদ্ধের অবসান ঘটানো, কাতারের সাথে পুনরায় সুসম্পর্ক গড়ে তোলা ও ইরানকে শান্ত করতে আরব ও উপসাগরীয় ঐক্য জোরদারের বদলে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স এখন গোপনে মিত্রতা গড়ে তোলায় ব্যস্ত আরব ভূমি দখলদার ইসরাইলের সাথে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন মতে, মোহাম্মদ বিন সালমান ইউএই ও বাহরাইনকে উৎসাহিত করছে ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে তুলতে। কিন্তু তার বাবা বাদশা সালমানের সম্মতি ছাড়া এ কাজ করছেন তিনি। খবরে প্রকাশ, বাদশাহ সালমান ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করা ছাড়া ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সম্পূর্ণ বিরোধী। ফিলিস্তিন সম্পর্কে এ কথা সত্য না মিথ্যা, কিংবা এটি বাপ-বেটার কোনো ‘গুড কপ, ব্যাড কপ’ খেলা কি না, তা বিবেচনায় না নিয়েই বলা যায়- উপসাগীয় অঞ্চলের নিরাপত্তায় ইসরাইল এগিয়ে আসবে- সে আশা সুদূর পরাহত।
কারণ, ইসরাইল ভালো করেই জানে, এ অঞ্চলে আমেরিকান, ফ্রান্স ও অন্য বৈশ্বিক ক্ষমতাধরদের সংশ্লিষ্টতা এরই মধ্যে অতিসিঞ্চিত তথা সেচ্যুরেটেড পর্যায়ে। তা ছাড়া এ অঞ্চলের মনার্কি রক্ষায় ইহুদি ইসরাইলি সেনারা আত্মোৎসর্গ করতে আসবে কোন দুঃখে।
প্রসঙ্গত, ‘গুড কপ, ব্যাড কপ’ হচ্ছে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের একটি কৌশল, যাতে জিজ্ঞাসাবাদের সময় কিছু কর্মকর্তা আসামির সাথে সহমর্মী ও কিছু কর্মকর্তা আগ্রাসী নিষ্ঠুর আচরণ করে সত্য বের করে আনার চেষ্টা চালায়।