চীন-পাকিস্তান দুই সীমান্তে যুদ্ধের মুখে ভারতীয় বিমানবাহিনী
চীন-পাকিস্তান দুই সীমান্তে যুদ্ধের মুখে ভারতীয় বিমানবাহিনী - ছবি সংগৃহীত
গত এক বছরে তিন হাজারেরও বেশি বার ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘিত হয়েছে। সেপ্টেম্বরে জম্মু-কাশ্মীর সীমান্তে সব চেয়ে বেশি গোলাবর্ষণ হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ভারতীয় সেনার। অন্য দিকে লাদাখে ভারত-চীন সংঘাত এখনো অব্যাহত। এই পরিস্থিতিতে কড়া মন্তব্য করলেন ভারতীয় বিমানবাহিনীর প্রধান রাকেশ কুমার সিং ভাদুরিয়া। জানিয়ে দিলেন, চীন ও পাকিস্তান দুটি ফ্রন্টে লড়াইয়ের জন্যই সম্পূর্ণ তৈরি ভারতীয় বিমানবাহিনী।
গত ৮ অক্টোবর ভারতীয় বিমানবাহিনী দিবস ছিল। ওই দিন বিমানবাহিনী নতুন নতুন অস্ত্র এবং বিমান প্রদর্শন করে। আগামী দিনে কী ভাবে বিমানবাহিনী আরো শক্তিশালী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, সে বিষয়েও দেশের নাগরিকদের জানানো হয়েছে। ওই অনুষ্ঠানের পরেই বিমানবাহিনী প্রধান জানিয়ে দেন, সীমান্তের দুটি ফ্রন্টে লড়াইয়ের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে বায়ুসেনা।
তা হলে কি যুদ্ধ আসন্ন?
গত জুন মাস থেকেই লাদাখে ভারত-চীন সীমান্তে যুদ্ধের আবহ তৈরি হয়ে আছে। বেশ কয়েকবার দুই দেশের সেনা হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েছে। ২০ জন ভারতীয় সেনার মৃত্যু হয়েছে। শুধু তাই নয়, গত কয়েক দশকের ঐতিহ্য এবং চুক্তি অস্বীকার করে দুই দেশের সেনা গুলি চালিয়েছে। ফলে সীমান্তে উত্তেজনা চরমে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত যুদ্ধ হয়নি। দুই দেশের সেনাই এলএসি বা লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোলের ধারে সেনা মোতায়েন করে রেখেছে।
একদিকে যখন যুদ্ধের প্রস্তুতি চলছে, অন্য দিকে কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক স্তরেও দুই দেশের মধ্যে লাগাতার আলোচনা চলছে। বিদেশ এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী স্তরেও বৈঠক হয়েছে। কিন্তু সমাধান সূত্র মেলেনি। একের পর এক সেনা স্তরের বৈঠক ভণ্ডুল হয়ে গেছে। উল্লেখ্য, সোমবারও দুই দেশের সেনার মধ্যে বৈঠক হওয়ার কথা। এই পরিস্থিতিতে সম্প্রতি জাপানে অনুষ্ঠিত চার দেশের বৈঠক পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে করে দিয়েছে।
গত সপ্তাহে জাপানে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, অ্যামেরিকা এবং জাপান বৈঠকে বসেছিল। দক্ষিণ চীন সমুদ্র এবং লাদাখ নিয়ে সেখানে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। চীন কী ভাবে আগ্রাসন চালাচ্ছে, তা নিয়ে দীর্ঘ বৈঠক হয়েছে দেশগুলোর মধ্যে। এই বৈঠকের কড়া নিন্দা করেছে চীন। তাদের বক্তব্য, এ ভাবে একটি দেশের সমালোচনা করার জন্য চারটি দেশ বৈঠকে বসতে পারে না। বৈঠকটিকে অবৈধ বলে দাবি করেছে চীন। চীন যত গলা চড়িয়েছে, পাল্টা গলা চড়িয়েছে অন্য পক্ষের দেশগুলোও। অ্যামেরিকার সচিব মাইক পম্পেও-র সঙ্গে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের দীর্ঘ বৈঠক হয়েছে। সেখানে চীন কীভাবে লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখাকে অস্বীকার করছে এবং সীমান্তে সৈন্য মজুত করেছে, তা নিয়ে নালিশ করা হয়েছে। বস্তুত সেই বৈঠকের পর একটি মার্কিন পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে পম্পেও বলেছেন, মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী সীমান্তে চীন ৬০ হাজার সৈন্য মজুত করেছে। এ ভাবেই ভারত-চীন সীমান্তে যুদ্ধের আবহ তৈরি করে রাখা হয়েছে।
শুধু চীন নয়, লাদাখে ভারত-চীন সীমান্তে ভারতও সমপরিমাণ সৈন্য মোতায়েন করে রেখেছে। সীমান্তের খুব কাছে যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্র মজুত করেছে ভারত। লে বিমানবন্দরে বিমানবাহিনী বিপুল পরিমাণ যুদ্ধ বিমান দাঁড় করিয়ে রেখেছে। প্রয়োজনে আট মিনিটের মধ্যে যা সীমান্তে পৌঁছে যেতে পারবে। অন্য দিকে, পাকিস্তান সীমান্তেও একই ভাবে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের একটি অংশের ধারণা, শীতে স্থানীয় আকারে যুদ্ধের আশঙ্কা রয়েছে। ভারতীয় সেনার এক অফিসারও ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, শীতে যুদ্ধের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। লাদাখের মতো উচ্চতায় শীতে যুদ্ধ খুব সহজ নয়। চীন তা জানে বলেই সময় গুণছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এবং সে কারণেই কোনো রকম সমাধানের রাস্তায় এত দিন ধরে বার করা যাচ্ছে না। যুদ্ধ যদি হয়, এমনকী, সংঘাতও যদি হয়, তা হলে ভারতকে অন্তত দুটি এলাকায় সীমান্ত সামলাতে হবে বলে মনে করা হচ্ছে। উত্তর পূর্বে অরুণাচল এবং সিকিম সীমান্ত অন্য। দিকে কাশ্মির ও লাদাখ সীমান্ত। কাজ সহজ নয়। কিন্তু ভারতীয় বিমানবাহিনী প্রধান দাবি করছেন, প্রতিটি সীমান্তেই যুদ্ধের প্রস্তুতি সেরে ফেলা হয়েছে। এখন দেখার, বাস্তবে তা কতটা কার্যকরী হয়।
সূত্র : ডয়চে ভেলে