নাগার্নো-কারাবাগ নিয়ে বিপদে ভারত
নাগার্নো-কারাবাগ নিয়ে বিপদে ভারত - ছবি : সংগৃহীত
ভারত সরকার এখন পর্যন্ত আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের মধ্যকার নাগার্নো-কারাবাগ যুদ্ধে নিরপেক্ষতা বজায় রেখেছে এবং এর পেছনে ভালো যুক্তিও আছে। একদিকে রাশিয়ার সাথে সিএসটিও মিত্রের সাথে সাম্প্রতিক রাডার চুক্তি করার পর আর্মেনিয়ার সাথে সামরিক সম্পর্ক তৈরী করেছে (এই লেখক আর্মেনিয়ার রুশ অস্ত্র বাজারে ভারতের ৪০ মিলিয়ন ডলারের হানা শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে)। অন্যদিকে আজারবাইজানে আছে ভারতের সুস্পষ্ট কানেকটিভিটি স্বার্থ। দেশটির সাথে নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডোর (এনএসটিসি) বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। লেখক সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে লিখেছিলেন যে ইরান ও পাকিস্তানের সাথে আজাবারবাইজানের সম্পর্ক জোরদার করার মাধ্যমে রাশিয়া উপকৃত হতে পারে।
এসব অর্থনৈতিক স্বার্থের বিপরীতে বৈধতার বিষয়ও আছে। এই লেখক ‘হোয়াটস দি ডিফারেন্স বিটউইন নাগার্নো-কারাবাগ অ্যান্ড কাশ্মির’ শীর্ষক প্রতিবেদনে প্রশ্ন করেছেন, নাগার্নো-কারাবাগের ওপর আর্মেনিয়ার দখলদারিত্বের মতো কাশ্মিরের ওপর ভারতের দখলদারিত্বও একই রকম অবৈধ।এনএসটিসি সত্ত্বেও বাকুর পক্ষ নেয়া কেন নয়া দিল্লির স্বার্থের অনুকূল নয়, তার ব্যাখ্যা এটিই। ফলে ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে নিরপেক্ষ থাকার নীতিই অবলম্বন করেছে। তবে ভারতের অনেক সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী প্রবলভাবে আর্মেনিয়াকে সমর্থন করছে পাকিস্তানের আজারবাইজানকে সমর্থন করার প্রতিক্রিয়া হিসেবে।
এই আলোচনার সাথে সম্পর্কিত বৃহত্তর থিমটি হলো ভারতের সম্প্রসারণশীল স্বার্থহলো তার ঐতিহ্যবাহী প্রভাববলয়ের বাইরেও রয়েছে।ভারত তার অর্থনৈতিক ও সামরিক স্বার্থ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের বাইরে সম্প্রসারণ করেছে। ভারত চাচ্ছে নেতৃত্ব প্রদর্শনের মাধ্যমে উদীয়মান পরাশক্তি হিসেবে সক্ষম দেশ হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করতে। কিন্তু সঙ্ঘাতে জড়িত পক্ষগুলোর বিভিন্ন স্বার্থের সাথে থাকা স্পর্শকাতর বিষয়গুলো তাকে আস্থার সাথে এগিয়ে যাওয়ার পথে বাধার সৃষ্টি করছে। তাকে এখন সঙ্ঘাতময় পক্ষগুলোর কোনো একটিকে সমর্থন করে অন্যটিকে ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে তার কাঙ্ক্ষিত অবস্থানে যেতে হলে।
ভারত তার লাগায়ো অঞ্চলে এমন ধরনের ‘জিরো সাম’ সিদ্ধান্ত নিলেও দূর এলাকায় তা পারেনি। দক্ষিণ ককেশাসের মতো এলাকায় ভারতের নীতি চীনের উইন-উইন সমাধানের মতো। কিন্তু চীনা নীতি অনুসরণ করা হলে তা দেশটির নীতিনির্ধারণী মহলের মধ্যে থাকা অহংবোধকে ক্ষুণ্ন করতে পারে।
অবশ্য ভারত যদি কোনো একটি দেশকে ঘোষণা দিয়ে সমর্থন করে, তবে তাতেও খুব বেশি পার্থক্য সৃষ্টি হবে না। তবে ভারত যা করতে পারে তা হলো রাশিয়া থেকে আসা কিছু ভাষ্যকে সমর্থন করা। এই সঙ্ঘাত ক্রমবর্ধমান হারে ভাড়াটে যোদ্ধাদের গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। চলতি সপ্তাহে রয়টার্স খবর দিয়েছে যে রুশ গোয়েন্দাপ্রধান নারিশকিন জানিয়েছেন, সিরিয়ার নুসরা ফ্রন্টের সাথে সম্পর্কযুক্ত হায়াত আল-শামের অনেক সদস্য আজারবাইজানের হয়ে লড়াইয়ে যোগ দিয়েছে।
ভারত এ ধরনের দাবি করতে পারে। কিন্তু সেক্ষেত্রে তুরস্কের বিরুদ্ধে তার অভিযোগ করা হবে। কারণ ওই অভিযোগ করা মানে হলো তুরস্ক এসব সশস্ত্র সদস্যকে সিরিয়া থেকে নাগার্নো কারাবাগে নিয়ে আসছে। এদিকে তুরস্ক আবার কাশ্মির প্রশ্নে পাকিস্তানের অবস্থানকে সমর্থন করে। তা করা হলে ভারতের এই যুদ্ধে আজারবাইজানের বিপক্ষেই অবস্থান নিচ্ছে বলে প্রকাশ পাবে।আর তা ভারতের ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান ধরে রাখার জন্য কঠিন হয়ে পড়তে পারে। আবার তথ্যটি কোন দিতে আঘাত করে, তার ওপর নির্ভর করে ভারতের আজারজাইজানি অংশীদারদের কষ্টে ফেলে ভারতের জন্য হিতে বিপরীত ঘটনা ঘটাতে পারে। আর তা এই সঙ্ঘাতে ভারতের ভারসাম্যমূলক নীতিকে অস্থিতিশীল করে ফেলতে পারে এবং পরিণামে এনএসটিসির সাথে সম্পর্কিত তার বাণিজ্যিক স্বার্থকে ক্ষুণ্ন করতে পারে।
সূত্র : এক্সপ্রেস ট্রিবিউন