ইসরাইলই শেষ আশ্রয়?

গোলাপ মুনীর | Oct 11, 2020 06:17 pm
প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান

প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান - ছবি সংগৃহীত

 

অর্থনৈতিক রূপান্তরের লক্ষ্যে বড় ধরনের রাজনৈতিক সংস্কারের পথ উন্মুক্ত করার পরিবর্তে সৌদি আরব তরুণ যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান আরব আমিরাতের পদাঙ্ক অনুসরণ করে কোনো ধরনের কৌশল অবলম্বন না করেই দেশটিকে পরিণত করেন নিপীড়নমূলক পুলিশি রাষ্ট্রে। বন্ধ হয়ে পড়ে দেশটিতে সামাজিক উদারবাদের চর্চা। উল্টো পরিণত হয় ঘাটতি বাজেটের দেশে, যা অভ্যন্তরিন জনঅসন্তোষের কারণ। প্রথম দিকে সামাজিক গতিময়তা ও নারীর ক্ষমতায়নের উদ্যোগ নিয়ে এক ধরনের প্রত্যাশা জন্মালেও, অল্প সময়েই রূপ নেয় নৈরাশ্যে। কারণ, সৌদি আরবের অর্থনৈতিক সংস্কার ও বহু- শতকোটি ডলারের প্রকল্পগুলো থেমে যায়, যুবসমাজে বেকারত্ব থেকে যায় ২৯ শতাংশে। সবচেয়ে বড় কথা, পুরো অঞ্চলজুড়ে সৌদি আরবের প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধ কমে যায়।

এসব ব্যর্থতার মধ্যে যোগ হয়েছে ইরান-তুরস্ক নিয়ে অস্বস্তি। তারপরও মোহাম্মদ বিন সালমান বেপরোয়া। তিনি আবার আঞ্চলিক ক্ষমতায় ফিরে আসার চেষ্টা করতে পারেন আগামী জি-২০ শীর্র্ষ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে। সৌদি আরব আয়োজন করতে যাচ্ছে এ সম্মেলন। কিন্তু তাতেও কিছু হবে বলে মনে হয় না। কারণ, সৌদি আরবের পৃষ্ঠপোষক ট্রাম্প নির্বাচনে হারতে যাচ্ছেন বলে অনেকের ধারণা। তা হলে কি ইসরাইলই শেষ আশ্রয়?

ধ্বংসাত্মক নীতি অবলম্বন পাল্টানো, ইয়েমেনের যুদ্ধের অবসান ঘটানো, কাতারের সাথে পুনরায় সুসম্পর্ক গড়ে তোলা ও ইরানকে শান্ত করতে আরব ও উপসাগরীয় ঐক্য জোরদারের বদলে সৌদি ক্রাউন প্রিন্স এখন গোপনে মিত্রতা গড়ে তোলায় ব্যস্ত আরব ভূমি দখলদার ইসরাইলের সাথে। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন মতে, মোহাম্মদ বিন সালমান ইউএই ও বাহরাইনকে উৎসাহিত করছে ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে তুলতে। কিন্তু তার বাবা বাদশা সালমানের সম্মতি ছাড়া এ কাজ করছেন তিনি। খবরে প্রকাশ, বাদশাহ সালমান ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন করা ছাড়া ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার সম্পূর্ণ বিরোধী। ফিলিস্তিন সম্পর্কে এ কথা সত্য না মিথ্যা, কিংবা এটি বাপ-বেটার কোনো ‘গুড কপ, ব্যাড কপ’ খেলা কি না, তা বিবেচনায় না নিয়েই বলা যায়- উপসাগীয় অঞ্চলের নিরাপত্তায় ইসরাইল এগিয়ে আসবে- সে আশা সুদূর পরাহত। কারণ, ইসরাইল ভালো করেই জানে, এ অঞ্চলে আমেরিকান, ফ্রান্স ও অন্য বৈশ্বিক ক্ষমতাধরদের সংশ্লিষ্টতা এরই মধ্যে অতিসিঞ্চিত তথা সেচ্যুরেটেড পর্যায়ে। তা ছাড়া এ অঞ্চলের মনার্কি রক্ষায় ইহুদি ইসরাইলি সেনারা আত্মোৎসর্গ করতে আসবে কোন দুঃখে। প্রসঙ্গত, ‘গুড কপ, ব্যাড কপ’ হচ্ছে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের একটি কৌশল, যাতে জিজ্ঞাসাবাদের সময় কিছু কর্মকর্তা আসামির সাথে সহমর্মী ও কিছু কর্মকর্তা আগ্রাসী নিষ্ঠুর আচরণ করে সত্য বের করে আনার চেষ্টা চালায়।

সে যা-ই হোক, বেশি হলে ইসরাইল সৌদি আরবকে প্রযুক্তিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও কিছু অস্ত্রশস্ত্র কেনার প্রস্তাব দিতে পারে। বিশ্বমোড়ল দেশগুলো ছাড়মূল্যে এসব দেয়ার প্রস্তাব দিয়েই রেখেছে। তার পরও ইসরাইল সুখবোধ করতে পারে সৌদি-আমিরাতি ‘গণতন্ত্রবিরোধী লিগে’ যোগ দিয়ে। তাতেও কোনো ভালো ফল বয়ে আনবে না সৌদি আরবের জন্য। দশকের পর দশক ধরে ফিলিস্তিনে দখল কায়েম রাখা ও ফিলিস্তিনিদের ওপর নিপীড়ন জারি রাখার জন্য দায়ী এ অঞ্চলের কিছু লোক। সংখ্যাগরিষ্ঠ আরব মনে করে ইসরাইল এ অঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষের শত্রু, ইসরাইল এ অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতায় চরম হুমকি। মোহাম্মদ বিন সালমানকে এসব সত্য জেনেই আমূল বদলে যেতে হবে। নইলে তার হাতেই হবে সৌদি মনার্কির পতন। যুক্তরাষ্ট্র, ট্রাম্প কিংবা ইসরাইল কেউই এ পতন ঠেকাতে পারবে না।

 

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us