কী পরিণাম হবে যুদ্ধের?
কী পরিণাম হবে যুদ্ধের? - ছবি সংগৃহীত
চীনবিরোধী ‘কোয়াড’ জোট গড়তে (আমাদের সমতুল্য অর্থে) ট্রাম্পের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পম্পেও এই ৬ অক্টোবরও জাপানে কোয়াড পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মিটিং করে লড়ে যাচ্ছেন। অথচ ভেতরের কাহিনী হলো, এবারো তারা একসাথে পাঁচ রাষ্ট্র মিলে একটা বিবৃতি দিতে পারেননি। আলাদা আলাদা করে দিয়েছেন আর তাতে নিজ নিজ ইস্যু ঢুকিয়েছেন। এ থেকেই সন্দেহ ৩ নভেম্বরের পরে কোয়াডের কোনো মিটিং আদৌ আর হয় কিনা, হলে সেটা কেমন হয়, ভাষ্য কী থাকে তা দেখতে হবে আগে। আমেরিকান ইলেকশনের আগের মাসে কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী এর আগে এমন তৎপর ছিলেন জানা যায় না।
আমেরিকার বদলে চীন নতুন নেতা হতে যাচ্ছে, এটা কোনো মানুষ বা সাবজেক্ট দ্বারা নির্ধারিত ঘটনা নয়; অবজেক্টিভলি নির্ধারিত, আর এটা আমেরিকার পরপর তিনটা সরকারি সার্ভেরই একই মূল ফাইন্ডিং বা প্রাপ্ত ফলাফল। অবজেকটিভ বা বস্তুগত শর্ত বলতে এখানে প্রধান ফ্যাক্টর হয়ে হাজির হয়েছে চীনের পর্যায়ের বিপুল বিনিয়োগ সমতা বা চীনের হাতের বিপুল সারপ্লাস, সঞ্চিত সম্পদ। যা সম্ভবত সবাই মানবে তা হলো এই চীনা সমতা, এটা আনপ্যারালাল; মানে এই বস্তগত মতার তুলনা একমাত্র চীন নিজেই। কিন্তু সমস্যা হলো, কোনো দেশ নিজে পরাজিত হয়েছে জানলেও একেবারেই চলতে না পারা অবধি কে যেচে পরাজয় স্বীকার করতে চায়! জটিলতা সেখানেই। তবে বোকার স্বর্গে বাস করা কেউ কেউ তো থাকেনই। অথবা আমেরিকান ছোট এন্টারপ্রাইজের পরিচালক কেউ, যার পে আমেরিকার বাস্তবতা মেনে নেয়া তো আসলেই কঠিন, এদের কেউ কেউ এর পরেও সামরিক দিক থেকে আমেরিকা এখনো অনেক গুণ শক্তিশালী- এ দিয়ে আমেরিকার শক্তি মেপে চলতে চাইবে হয়তো। তাদের বুঝানো সম্ভব নয় যে, সামরিক শক্তি দিয়ে গ্লোবাল অর্থনৈতিক নেতৃত্ব কায়েম করা যায় না।
কিন্তু তবু এই নির্ধারিত ফাইন্ডিংসে যে মুখ্য অংশটা এখনো অমীমাংসিত তা হলো, এই পালাবদল কি একটা যুদ্ধের পরিণতিতে হবে, না আপসে টেবিলে বসে কথা বলে শেষ হবে? আমরা এখনো জানি না। গত পালাবদলের কথা মনে করে দেখুন।
অবশ্য এর আগেও যে পালাবদল হয়েছে তা অনেকে আমলই করেন নাই হয়তো। তাদের মন করিয়ে দেই, ৭৫ বছর আগে আমেরিকা গ্লোবাল পলিটিক্যাল নেতা হয়েছিল সব কলোনি-দখলদারদের পরাজিত করে অথবা তাদের উপরের নেতা হয়ে আর সেটাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। অর্থাৎ যুদ্ধের ফলাফল হিসাবেই আমেরিকা নেতা হয়েছিল ব্রিটিশদের উপরে। ওরা গর্ব করত যে, কলোনি সাম্রাজ্যের সূর্য নাকি কখনোই অস্ত যাবে না। সেই গর্ব ভেঙে চুরমার করে আমেরিকা। তবু এটা কোনো নিশ্চয়তা নয়। তাহলে এবারো যুদ্ধের পরেই কেবল চীন নেতা হবে।
এছাড়াও যুদ্ধ হলে সেটা ছোটখাটো যুদ্ধের সীমায় থাকবে তো? না বড় আত্মহত্যার কোনো কাণ্ড ঘটবে? ‘আত্মহত্যা’ বলছি এজন্য যে, বেশির ভাগ মন্তব্যকারী তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বলে একটা কথা প্রায়ই বলে ফেলে। কিন্তু তাতে এটা বুঝাই যায়, তারা কী নিয়ে কথা বলছে, এর কোনো কল্পনাও তাদের মাথায় কিছু নেই। তারা প্রায় সবাই গত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কল্পনাটাই মাথায় রেখে এবার তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা অবলীলায় বলে যায়। অথচ তারা আমলই করেনি যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সেটা কোনো পারমাণবিক বোমার যুদ্ধ ছিল না। তাই রাষ্ট্রনেতারা পকেটে সেকালে পারমাণবিক বোমার কোড নিয়ে ঘুরতেন না। একালে ঘোরেন!
তবু কেবল আমেরিকা ওই যুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও ওই যুদ্ধের পটভূমিকে উসিলা করে পারমাণবিক বোমা কেমন নৃশংসভাবে মানুষ মারতে পারে এর পরীক্ষা করে নিয়েছিল। ‘হারু পার্টি’ ছিল হিটলারের বন্ধু জাপানের সামরিক সরকার; অথচ বেচারা জাপানের জনগণের ওপর পারমানবিক বোমা প্রয়োগ করে এর পরীক্ষা করে নেয়া হয়েছিল। এর ফলাফল ছিল চরম ভয়াবহ, এটা বললেও কম বলা হবে। কিন্তু তবু একালে যারা অবলীলায় তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের কথা বলছেন মনে হয় না তারা আমল করেছেন যে, এবার হবু যুদ্ধে প্রধান তিন থেকে ছয়টা দেশ পারমাণবিক বোমাসমৃদ্ধ হবেই। সুতরাং এবার যদি (সীমিত নয় এমন) বড় যুদ্ধ হয় তাহলে দুনিয়াই শেষ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা। তাই নিজে বাঁচার তাগিদে হুঁশজ্ঞানটুকু অন্তত যদি থাকে তবে বড় যুদ্ধের কথা কেউ বলবে না বা সেদিকে যাবে না। কিন্তু যুদ্ধ লেগে গেলে কে নিশ্চয়তা দিতে পারে এটা কোথায় গিয়ে শেষ হবে! নাকি দুনিয়াই শেষ হবে?