‘আল্লাহ যাকে হেদায়েত দেন তাকে কেউ গোমরাহ করতে পারে না'

মো: আবদুল গনী শিব্বীর | Oct 10, 2020 03:05 pm
‘আল্লাহ যাকে হেদায়েত দেন তাকে কেউ গোমরাহ করতে পারে না'

‘আল্লাহ যাকে হেদায়েত দেন তাকে কেউ গোমরাহ করতে পারে না' - ছবি সংগৃহীত

 

হেদায়েত তথা সুপথপ্রাপ্তি মূলত মহান রাব্বুল আলামিনের বিশেষ অনুগ্রহ। হেদায়েতের দিশা পেতে মোমিন মুসলিম ব্যক্তি প্রত্যেক দিনই সালাত ও সালাতের বাহিরে পবিত্র কুরআনের ভাষায় বলে ‘আমাদের সরল সঠিক পথ প্রদর্শন করুন।’ (সূরা ফাতিহা : ৫) মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বান্দাদের সে ডাকে সাড়া দিয়ে তাদের মধ্যে যাকে চান তাকে হেদায়েত দান করেন। উল্লেখ্য যে, হেদায়েত শব্দটি আরবি হেদায়েতের বাংলা অর্থ পথপ্রদর্শন। সেটা যেমন পথ দেখিয়ে দেয়ার অর্থে হতে পারে, তেমনি গন্তব্যে পৌঁছে দেয়ার অর্থেও হতে পারে। তবে কুরআনে বর্ণিত হেদায়েত শব্দের অর্থ নির্ধারণে ইমাম কুরতুবি রহ: বলেন, ‘হেদায়েত অর্থ পথপ্রদর্শন, যে পথ রাসূল ও তাঁর অনুসারীদের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়েছে। ইমাম রাগেব ইস্পাহানি রহ: তাঁর ‘মুফরদাতুল কোরআন’ গ্রন্থে হেদায়েত শব্দের খুব সুন্দর ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাঁর ভাষ্য মতে, হেদায়েত হলো, ‘কাউকে গন্তব্যস্থানের দিকে অনুগ্রহের সাথে পথপ্রদর্শন করা।’ তাই ‘হেদায়েত করা’ প্রকৃত অর্থে একমাত্র আল্লাহ তায়ালারই কাজ।

আল্লাহ বলেন, ‘প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে পথপ্রদর্শক।’ (সূরা রাদ : ৭) হেদায়াত এমন একটি পবিত্র নিয়ামত যা না চাইলে কাউকে দেয়া হয় না। এ পবিত্র নিয়ামত একমাত্র তারাই পান, যাদেরকে আল্লাহ খাস মেহেরবানি করে দিয়ে থাকেন। এটি কায়মনোবাক্যে মহান আল্লাহর কাছে চাওয়া বা এজন্যে তার দরবারে ধরনা দেয়ার মতো জিনিস। মহান আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক ব্যক্তিসত্তার অভ্যন্তরে জন্মগতভাবে কিছু গ্রহণযন্ত্র স্থাপন করে রেখেছেন। যারা হেদায়াত আকাঙ্ক্ষী এবং যাদের এসব গ্রহণযন্ত্র সক্রিয় থাকে, তারা হেদায়াতের দাওয়াত কোনো নিদর্শন পাওয়ামাত্রই গ্রহণ করে ও হেদায়াত পেয়ে যায়। কারণ হেদায়াতের দাওয়াত এতটা সহজ-সরল, প্রাঞ্জল ও স্বচ্ছ থাকে যে, তা শোনা ও গ্রহণ করা যায়।

পক্ষান্তরে, আর একটি শ্রেণী যারা অভ্যন্তরীণভাবে নিষ্ক্রিয়, তাদের কলব বা অন্তর পাপাসিক্ত। তাই তারা শোনেও না, সাড়াও দেয় না, গ্রহণও করে না, সত্যের আহ্বানে প্রভাবিতও হয় না। তারা হেদায়াতের আকাক্সক্ষী নয় এবং এ সম্পর্কে বেখবর, গাফেল। তাই মহান জাতেপাক আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে হেদায়াত দান করেন না। কেননা তারা প্রথম থেকেই তাদের সহজাত গ্রহণযন্ত্রগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে রেখেছে। তাই আল্লাহ তায়ালা তাদের কলব ও হেদায়াতের মাঝখানে পর্দা ঝুলিয়ে রেখেছেন। আল্লাহ পাক বলেন, ‘এ কথা সত্য যে, এমন অনেক জিন ও মানুষ আছে যাদের আমি জাহান্নামের জন্যই সৃষ্টি করেছি। কারণ তাদের কলব বা অন্তর আছে, এ দ্বারা তারা আল্লাহর নিদর্শন সম্পর্কে চিন্তা করে না। তাদের চোখ আছে, কিন্তু তারা দেখে না। তাদের কান আছে, কিন্তু তারা শোনে না। তারা পশুর ন্যায়, বরং তার চেয়েও নিকৃষ্ট। এরাই ওইসব লোক যারা গাফিলতির মধ্যে পড়ে আছে।’ (সূরা আরাফ : ১৭৯)

আল্লাহর সিদ্ধান্ত এই যে, যে চেষ্টা সাধনা করবে, তাকে তিনি সুপথ দেখাবেন, যে নিজেকে পবিত্র করে ও সংশোধন করতে চায়, তাকে সফল করবেন। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তিনি যাকে চান বিপথগামী করেন এবং যাকে চান সঠিক ও সোজা পথে পরিচালিত করেন।’ (সূরা আল আনয়াম : ৩৯) তিনি আরো বলেন, ‘যারা আমার পথে সাধনায় আত্মনিয়োগ করবে, আমি তাদেরকে অবশ্যই আমার পথে হেদায়াতের পথে পরিচালিত করব।’ (সূরা আনকাবুত : ৬৯)

আল্লাহ তায়ালা মানুষকে হেদায়াত দান করার জন্য যুগে যুগে নবী রাসুল পাঠিয়েছেন। মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা:কেও মানবজাতির হেদায়েতের জন্যই পাঠিয়েছেন। আল্লাহ যদি কোনো বান্দার হেদায়েত না চান তবে আল্লাহর প্রিয়নবী মুহাম্মদ সা:ও কাউকে হেদায়েত দিতে পারবেন না। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ পাক বলেন, ‘আপনি যাকে ভালোবাসেন, ইচ্ছা করলেই তাকে সৎপথে আনতে পারবেন না। তবে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সৎপথে আনেন এবং তিনিই ভালো জানেন সৎপথ অনুসরণকারীদের।’ (সূরা কাসাস ৫৬)

তিনি আরো বলেন, ‘জ্ঞানীরা বলে, হে আমাদের প্রভু! আলোর সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে (সব ধরনের সংশয় ও বিভ্রান্তি থেকে মুক্ত রেখো, আর কখনো) ভুল পথে বাঁকিয়ে দিও না।’ (সূরা আল ইমরান, আয়াত : ৮) তিনি আরো বলেন, যারা ঈমান আনে এবং স্বীয় বিশ্বাসকে শিরকের সাথে মিশ্রিত করে না, তাদের জন্যেই শান্তি এবং তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত বা সুপথগামী। (সূরা আনআম : আয়াত ৮২) হিদায়াতপ্রাপ্ত বা সুপথগামীরা সর্বদা তিনটি বিষয়ের ওপর স্থির থাকে। কেউ যদি এর কোনো একটিকে সম্পূর্ণ বা অস্বীকার করে তবে তার তাওহিদ, রিসালাত ও আখিরাতের কোনো স্বীকৃতিই গণ্য হবে না।

আবু জর গিফারি রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম সা: তাঁর সুমহান রবের পক্ষ থেকে বর্ণনা করেন, ‘আল্লাহ বলেন, হে আমার বান্দারা, আমি জুলুমকে আমার জন্য হারাম করেছি, আর তা (জুলুম) তোমাদের পরস্পরের মধ্যেও হারাম করেছি। অতএব তোমরা একে অপরের ওপর জুলুম করো না। হে আমার বান্দারা! তোমরা সবাই পথভ্রষ্ট, শুধুমাত্র সে ছাড়া আমি যাকে পথপ্রদর্শন করি। সুতরাং আমার কাছে হেদায়েত চাও, আমি তোমাদের হেদায়েত দান করব। ...’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৭৩৭)

হজরত জাবির ইবনে আবদুল্লাহ রা: থেকে বর্ণিত, রাসূল সা: কোনো এক খুৎবায়, ভাষণে বলেছেন, ‘আল্লাহ যাকে হেদায়েত দেন তাকে কেউ গোমরাহ করতে পারে না। আর আল্লাহ যাকে গোমরাহ করে তাকে কেউ পথ দেখাতে পারে না। সর্বশ্রেষ্ঠ বাণী হলো আল্লাহর বাণী। আর সর্বশ্রেষ্ঠ হেদায়েত হলো মুহাম্মদ সা: প্রদর্শিত হেদায়েত।’ (মুসনাদে আহমাদ : ১৪৫৬৬)

পরিশেষে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সব মুসলিম উম্মাহকে হেদায়েতের ওপর অটল রেখে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিধান মোতাবেক জীবন পরিচালনার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : প্রভাষক, নোয়াখালী কারামাতিয়া কামিল মাদরাসা।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us