অশ্লীল অশালীন কথা : ইসলাম কী বলে
অশ্লীল অশালীন কথা : ইসলাম কী বলে - ছবি : সংগৃহীত
আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং সঠিক কথা বলো। আল্লাহ তোমাদের কার্যকলাপ ঠিকঠাক করে দেবেন এবং তোমাদের অপরাধসমূহ মাফ করে দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে সে বড় সাফল্য অর্জন করে।’ (সূরা আহজাব :৭০-৭১)
রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মহান আল্লাহ ও কিয়ামতের ওপর ঈমান আনে সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে।’
মুমিন কখনো অশ্লীল, অশালীন ও গালি-গালাজ করতে পারে না। কারণ তিনি এমন এক পূতপবিত্র ও সর্বোত্তম কথা বলে ঈমান এনেছেন যেটিকে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ‘কালিমাতুত তাইয়েবা’ বা ‘পবিত্র কথা’ বলে অভিহিত করেছেন। তাই মুমিন ব্যক্তির মুখ থেকে সর্বদা মধু বাক্য ঝরবে এবং অন্যের কান যেটিকে শ্রুতিমধু বা মধুরবাণী হিসাবে গ্রহণ করবে। মুমিন কখনো অশ্লীল, অশালীন কথা, গালি-গালাজ, অভিশাপ, তিরস্কার, ব্যঙ্গোক্তি, অবজ্ঞা, দাম্ভিকতা, গর্ব-অহঙ্কার, কটূক্তি, দম্ভোক্তি, কুৎসা রটনা, হিংসাবিদ্বেষ, ঘৃণা, তুচ্ছজ্ঞান করতে পারে না। এ গুলো কালিমা তাইয়েবার সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী আচরণ। আল্লাহ তায়ালা বলেন : ‘তুমি কি দেখছ না আল্লাহ কালিমা তাইয়েবার উপমা দিয়েছেন কোনো জিনিসের সাহায্যে? এর উপমা হচ্ছে যেমন একটি ভালো জাতের গাছ, যার শিকড় মাটির গভীরে প্রোথিত এবং শাখা-প্রশাখা আকাশে পৌঁছে গেছে। প্রতি মহূর্তে নিজের রবের হুকুমে সে ফলদান করে। এ উপমা আল্লাহ তায়ালা এ জন্য দেন যাতে লোকেরা এর সাহায্যে শিক্ষা লাভ করতে পারে। অন্য দিকে অসৎ বাক্যের উপমা হচ্ছে, একটি মন্দ গাছ, যাকে ভূপৃষ্ঠ থেকে উপড়ে দূরে নিক্ষেপ করা হয়, যার কোনো স্থায়িত্ব নেই।’ (সূরা ইবরাহিম : ২৪-২৫)
যিনি কালিমা তাইয়েবার ভিত্তিতে নিজের জীবন ব্যবস্থাকে গড়ে তুলেন, তার চিন্তাধারায় পরিচ্ছন্নতা, স্বভাবে প্রশান্তি, মেজাজে ভারসাম্য, চরিত্রে পবিত্রতা, আচরণে মাধুর্যতা, ব্যবহারে নম্রতা, লেনদেনে সততা, কথাবার্তায় সত্যবাদিতা, ওয়াদা ও অঙ্গীকারে দৃঢ়তা, সামাজিক জীবনযাপনে সদাচার, কথাবার্তায় চিন্তার ছাপ, চেহেরায় পবিত্রতার ভাব ফুটে উঠবে। মোট কথা সামগ্রিক জীবন ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক একটা পরিবর্তন সূচিত হবে। যে জীবনধারার কোথাও কোনো অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হবে না।
আনাস ইবনে মালেক রা: বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সা: অশালীন কথা উচ্চারণকারী, লানতকারী এবং গালি-গালাজকারী ছিলেন না। তিনি যখন নারাজ হতেন তখন কেবল এতটুকু বলতেন যে, তার কি হলো? তার কপাল ভূলুণ্ঠিত হোক। (বুখারি : ৫৬১১; কিতাবুল আদাব)
মাসরুক বর্ণনা করেছেন, মুআবিয়া রা: কুফা আগমন করলে আমরা আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা:-এর নিকট গেলাম। তিনি রাসূলুল্লাহ সা:-এর কথা উল্লেখ করলেন এবং বললেন, হুজুর সা:-এর কখনো অশালীন কথা বলার অভ্যাস ছিল না; আর ইচ্ছা করেও তিনি তা বলতেন না। তিনি আরো বর্ণনা করেছেন, নবী সা: বলেছেন, তোমাদের সবার চেয়ে উত্তম হলো সে ব্যক্তি, স্বভাব-চরিত্রে যে সবার চেয়ে ভালো। (বুখারি : ৫৫৯৪; কিতাবুল আদাব)
আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: বর্ণনা করেছেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, (মুসলমান) মুসলমানকে গালি দেয়া ফাসেকি এবং মুসলমানে মুসলমানে যুদ্ধ করা কুফরী। (বুখারি : ৫৬০৯; কিতাবুল আদাব)
মুখ মানুষের এমন একটি অঙ্গ যার শক্তি সীমাহীন। এটি ডানে-বাঁয়ে, সামনে-পেছনে, উপড়ে-নিচে সমানতালে চলতে পারে। একজন মানুষ যতটুকু বুদ্ধি ও অনুভূতি ধারণ করে মুখ ততটুকু বর্ণনা করতে পারে এবং মাঝে মাঝে বুদ্ধিকেও ছাড়িয়ে যায়। অর্থাৎ মুখ মানুষের অঙ্গরাজ্যের ওপর রাজত্ব কায়েম করে। মানুষের আরো একটি প্রভাবশালী অঙ্গ হলো মন। মুখ সেই মনের ওপরও প্রভাব বিস্তার করে। কারণ মন তার ভেতরকার সব কিছু প্রকাশ করতে হলে মুখের সাহায্য গ্রহণ করতেই হবে। আর মুখের ভেতর একটি অঙ্গ আছে যার নাম জিহ্বা। মনের ভাষা জিহ্বার দ্বারা প্রকাশ করে থাকে।
তাই জিহ্বার নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জরুরি। কারণ জিহ্বা মানুষের সামগ্রিক চরিত্রকে কলুষিত করে। এ জন্য রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি দু’রানের মাঝের অঙ্গ এবং দু’চোয়ালের মাঝের অঙ্গ অর্থাৎ লজ্জাস্থান ও জিহ্বার হিফাজতের জিম্মাদার হবে, আমি তাকে জান্নাতে প্রবেশের জিম্মাদার হবো।’ হজরত ওমর রা: বলেন, আমি একবার হজরত আবু বকর সিদ্দিককে রা: দেখতে পেলাম, তিনি নিজের হাত দ্বারা নিজের জিহ্বা টানছেন ও রগড়াচ্ছেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূলের প্রতিনিধি! আপনি এ কি করছেন? তিনি বললে, ‘এ হাড়বিহীন ক্ষুদ্র অঙ্গটি আমার ওপড় অনেক দায় চাপিয়ে দিচ্ছে।’ রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘জিহ্বা মানুষের অধিকাংশ পাপের মূল।’ হজরত মুয়াজ রা: একদিন রাসূলুল্লাহ সা:-এর কাছে জিজ্ঞেস করলেন, কোন কাজ সবচেয়ে উত্তম? রাসূলুল্লাহ সা: স্বীয় মুখের জিহ্বা বের করে আঙুল দিয়ে চেপে ধরলেন।’ অর্থাৎ তিনি ইঙ্গিত করলেন যে, জবানের হিফাজত করা সবচেয়ে উত্তম ও গুরুত্বপূর্ণ কাজ। রাসূলুল্লাহ সা: একবার সমবেত লোকদের উদ্দেশে বলেন, সহজতম ইবাদাত তোমাদের শিক্ষা দিচ্ছি। তা হচ্ছে, চুপ থাকা ও সৎ স্বভাব।’
মানুষের সাথে উত্তম ও শোভনীয় আচরণ করা আল্লাহর প্রিয়তম ইবাদাতসমূহের অন্যতম। আবু দারদা রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন : ‘কিয়ামতের দিন কর্মবিচারের পাল্লায় বান্দার সবচেয়ে ভারী ও মূল্যবান কর্ম হবে সুন্দর আচরণ এবং সুন্দর আচরণের অধিকারী মানুষ শুধু তার সুন্দর ব্যবহারের বিনিময়েই নফল সালাত ও নফল সিয়াম পালন করার সওয়াব অর্জন করবে।’ (তিরমিজি) জাবির রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন : ‘তোমাদের মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় ও কিয়ামতের দিন তোমাদের মধ্যে আমার সবচেয়ে নিকটবর্তী অবস্থান করবে যাদের আচরণ সবচেয়ে সুন্দর। আর তোমাদের মধ্যে আমার কাছে সবচেয়ে বেশি অপ্রিয় এবং কেয়ামতের দিন আমার থেকে সবচেয়ে দূরে অবস্থান করবে তারা যারা বেশি কথা বলে, যাদের কথায় বা আচরণে অহঙ্কার প্রকাশিত হয় এবং যারা কথাবার্তায় অন্যের প্রতি অবজ্ঞা বা অভদ্রতা প্রকাশ পায়।’ (তিরমিজি)
সুতরাং ভালো ও সৎ কথা বলুন। অশ্লীল, অশালীন ও অশোভন কথা পরিহার করন।