আফগানিস্তানে যে ক্ষতির মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র

লি ইয়ুন | Oct 08, 2020 08:32 am
আফগানিস্তানে যে ক্ষতির মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র

আফগানিস্তানে যে ক্ষতির মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র - ছবি : সংগৃহীত

 

যুক্তরাষ্ট্র ২০০১ সালের ৭ অক্টোবর সন্ত্রাস অবসানের নামে আফগানিস্তানে হামলা শুরু করেছিল। ১৯ বছর অতিবাহিত হয়ে গেছে।

বিভক্ত দেশ, দুই লাখের বেশি লোকের মৃত্যু, আরো বেশি সন্ত্রাসী সংগঠন, দারিদ্র্যের হার ছাড়িয়েছে ৫০ ভাগ, বেকারত্বের হার ছাড়িয়েছে ৩০ ভাগ : ১৯ বছরে আফগানিস্তানে এগুলোই নিয়ে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে এগুলোই সব নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে ২,৪০০-এর বেশি মার্কিন সৈন্য নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে ২০ হাজারের বেশি, দুই ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে।
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবান প্রতনিধিরা দোহায় একটি শান্তিচুক্তি করে। এই চুক্তির আলোকে সমঝোতা প্রতিষ্ঠার ১৩৫ দিনের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য কমিয়ে ৮৬০০ করবে এবং পরবর্তী ১৪ মাসে পুরোপুরি প্রত্যাহার করবে। তবে সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তান নীতি প্রশ্নে এক শুনানিতে প্রতিরক্ষঅ দফতরের কর্মকর্তারা বলেন যে ২০২১ সালের মে মাসের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সৈন্য প্রত্যহারের একটি বিচক্ষণ পরিকল্পনা করছেন তারা।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র কি সত্যিই ২০২১ সালের মে মাসের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করবে?
চলতি বছর (নির্বাচনী বছর) তালেবানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের শান্তিচুক্তি করার সবচেয়ে বড় কারণ হলো ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণা।

তবে আমেরিকান সৈন্য প্রত্যাহারের পেছনে একটি মৌলিক কারণও রয়েছে। চলতি শতকের শুরু থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের শক্তি হ্রাস পাচ্ছে।
মার্কিন রাজনৈতিক এলিটরা বিশ্বাস করে যে ৯/১১-এর হামলার পর যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তার শক্তি ব্যয় করতে থাকে। আর এটি অন্যান্য পরাশক্তিকে উত্থানের সুযোগ দেয়।
এর জের ধরে যুক্তরাষ্ট্র ‘রিটার্ন টু এশিয়া-প্যাসিফিক’ স্ট্র্যাটেজি এবং ‘ইন্দো-প্যাসিফিক’ স্ট্র্যাটেজি গ্রহণ করে। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে মনোযোগ দিতে থাকে।

মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়ার (আফগানিস্তান এখানেই অবস্থিত) গুরুত্ব তুলনামূলকভাবে হ্রাস পায়। বিশেষ করে আরব বসন্তের পর মধ্যপ্রাচ্যে ওই অঞ্চলে আমেরিকানবিরোধী শাসকদের হয় উৎখাত করা হয়, কিংবা ব্যাপকভাবে দুর্বল করা হয়। বেশির ভাগ আরব দেশ এখন ইসরাইলের সাথে সমন্বয় সাধনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে এই অঞ্চল থেকে যুক্তরাষ্ট্র তার উপস্থিতি আরো হ্রাস করতে পারে।

আফগানিস্তান থেকে মার্কিন প্রত্যহারের প্রভাবটি নির্ভর করছে মার্কিন প্রত্যাহার পরিকল্পনার ওপর।
প্রথম বিকল্পটি হলো, যুক্তরাষ্ট্রের তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সৈন্য প্রত্যাহার করা। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ১৯ বছরের অব্যাহত আক্রমণ চালিয়েও তালেবানকে নিশ্চিহ্ন করতে পারেনি, বরং শক্তিশালী হয়েছে। তারা কেবল আফগানিস্তানের বেশির ভাগ এলাকাই নিয়ন্ত্রণ করছে না, সেইসাথে যুক্তরাষ্ট্রকে আলোচনায় বসে তাদের সাথে সমঝোতা করতে বাধ্য করতে পেরেছে।

তালেবান ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে। আফগানিস্তানের বর্তমান সরকার বিদ্যমান সেক্যুলার রাষ্ট্রব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছে।

চুক্তি অনুযায়ী, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হলে বর্তমান শক্তির ভারসাম্যের আলোকে বলা যায, আফগানিস্তান পুরোপুরি তালেবান নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। এটি ভিয়েতনাম যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থতার সমপরিমাণ এবং যুক্তরাষ্ট্রের পতন নিশ্চিত করবে। আর বিশ্বের একমাত্র পরাশক্তিটি এখন তা কামনা করবে না।
দ্বিতীয় বিকল্প হলো সিরিয়া মডেল। এতে যুক্তরাষ্ট্র মাত্র কয়েকটি এলাকার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। ভূরাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আফগানিস্তানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হলো আফগানিস্তান ও চীনকে সংযোগকারী ওয়াখান করিডোর। এটি খুবই ছোট এবং চীন, পাকিস্তান ও তাজিকিস্তান পরিবেষ্টিত।
প্রাকৃতিক সম্পদের দিক থেকে আফগানিস্তান খুবই সমৃদ্ধ। দেশটিতে জ্বালানি ও খনিজসম্পদের পরিমাণ তিন ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি। পরিবহন জটিলতা ও তহবিলের অভাবে এসব সম্পদের বেশির ভাগই ব্যবহার করা হচ্ছে না। তাছাড়া এগুলো পুরো আফগানিস্তান ছড়িয়ে আছে। যুক্তরাষ্ট্র যদি পুরো আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করতে না পারে, তবে এসব সম্পদের বেশির ভাগের ওপর কার্যত কোনো নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না।

তৃতীয় বিকল্প হলো, সীমিত প্রত্যাহার করে আমেরিকানপন্থী একটি সরকারকে টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করা। কোনো অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্রের সেখানে সৈন্য বাড়ানো অসম্ভব কোনো কাজ নয়। এই পরিকল্পনা কার্যকর করা হলে আফগানিস্তানকে বিভক্ত করে ফেলবে, গোলযোগ অব্যাহত থাকবে। আর এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র তার কৌশলগত লক্ষ্য হাসিল করার জন্য দেশটির ওপর নিয়ন্ত্রণ বহাল রাখতে পারবে। তবে এর ফলে আফগানিস্তানে তাকে বিপুল বিনিয়োগ অব্যাহত রাখতে হবে। জরিপে দেখা যাচ্ছে, বেশির ভাগ আমেরিকান আফগানিস্তানিস্তানে সৈন্য রাখার পক্ষপাতী নয়।

তবে তুলনা করলে দেখা যাবে, যুক্তরাষ্ট্র এই তৃতীয় বিকল্পই গ্রহণ করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র একইসাথে চাচ্ছে যে তার আফগানিস্তান নীতি যাতে নির্বাচনী ফলাফলে কোনো প্রভাব বিস্তার না করে। কারণ, আফগানিস্তানে কৌশলগত সঙ্কোচন আমেরিকার শক্তি ও জাতীয় স্বার্থের মাধ্যমে নির্ধারিত। এটি উভয় দলেরই প্রতিষ্ঠিত নীতি।

আফগানিস্তান থেকে সৈন্য হ্রাস করার পুরো কৃতিত্ব ট্রাম্প নিজের দিকে টানতে চান। কিন্তু বাস্তবে ওবামা যখন দায়িত্ব ছেড়েছিলেন, তখন আমেরিকান সৈন্য কমে দাঁড়িয়েছিল ৮,৪০০। আর ওবামা আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
লেখক : গবেষক, ইনস্টিটিউট অব ফরেন মিলিটারি রিসার্চ অব দি ডিপার্টমেন্ট অব ওয়ার রিসার্চ, চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি একাডেমি অব মিলিটারি সায়েন্সেস।

সূত্র : সিজিটিএন


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us