অবশেষে চীনের সাথে সমঝোতায় ভারত রাজি!
মোদি ও শি - অবশেষে চীনের সাথে সমঝোতায় ভারত রাজি!
সাম্প্রতিক খবরে মনে হচ্ছে, ভারত ও চীন লাদাখে তাদের ৫ মাসের সীমান্ত অচলাবস্থা নিরসনে সামরিক ও কূটনৈতিক আলোচনাকে ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করছে।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর ভারতের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক হিন্দুস্তান টাইমসে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিশেষ বার্তা প্রকাশ করা হয। এতে বলা হয়, ভারতের সাথে চীনা সীমান্ত বিরোধ ১৯৫৯ সালের ৭ নভেম্বর চীনের ওই সময়ের প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাইয়ের তার ভারতীয় প্রতিপক্ষ জওহের লাল নেহরুকে লেখা চিঠির বিষয়বস্তুর সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
ওই ঐতিহাসিক দলিলে চৌ প্রস্তাব করেছিলেন যে চীন ও ভারতের সশস্ত্র বাহিনী পূর্ব দিকে তথাকথিত ম্যাকমোহন লাইন (চীনের তিব্বত থেকে অরুচনাচল প্রদেশকে আলাদা করা) থেকে ২০ কিলোমিটার এবং পশ্চিম দিকে সত্যিকারের নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে দূরে থাকবে।
চিঠিতে আরো বলা হয়েছিল, দুই দেশ ওই এলাকায় তাদের সশস্ত্র বাহিনী পাঠানো থেকে বিরত থাকবে এবং টহলের জন্যও সশস্ত্র বাহিনী পাঠাবে না। প্রশাসনিক দায়িত্ব ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য দুই দেশ বেসামরিক প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও নিরস্ত্র পুলিশ পাঠাবে।
চৌয়ের চিঠিতে আরো গুরুত্বারোপ করা হয়, চীন ও ভারতের মধ্যকার সীমান্তে কোনো পক্ষই সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের পাঠাবে না।
এরপর ১৯৬০ সালের এপ্রিলে দিল্লি সফরকালে নেহরুর সাথে আলাপকালে চৌ তার অবস্থান আবারো ব্যক্ত করেন। কিন্তু নেহরু তা প্রত্যাখ্যান করায় তা বাস্তবায়িত হয়নি। এর দুই বছর পর ১৯৬২ সালে বিপর্যয়কর সীমান্ত যুদ্ধ হয়।
গত ছয় দশকে গঙ্গা নদী দিয়ে অনেক পানি প্রবাহিত হয়েছে। চীন বিশ্ব পর্যায়ে পরাশক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছ।আর ভারতের কাছে মনে হয়েছে, চৌয়ের সমন্বয়মূলক ফরমুলার প্রতি চীন আর আগ্রহী নয়।
এই প্রেক্ষঅপটে চীন এখনো ১৯৫৯ সালের এলএসি নিয় তাদের অবস্থানে অটল থাকার খবরটি বিস্ময় হিসেবে সামনে এসেছে। মজার ব্যাপার হলো, হিন্দুস্তান টাইমসে সাংহাই মিউনিসিপ্যাল সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের চীন বিশেষজ্ঞ ওয়াং দেহুয়া ও দিল্লি এস্টাবলিশমেন্টের পরিচিত বক্তব্যও স্থান পেয়েছে।
ওয়াং বলেন, সীমান্তের পশ্চিম সেক্টর এঁকেছিলেন ব্রিটিশ ভারতীয় সার্ভেয়ার জনসন। তিনি গোপনে চীনের আকসাই চিন অঞ্চলের ৩০ হাজার কিলোমিটার এলাকা ব্রিটিশ ভারতকে দিয়ে দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, পশ্চিম সীমান্তে চীন ও ভারতের মধ্যকার ভূখণ্ডগত বিরোধের ঐতিহাসিক কারণ এখানেই নিহিত রয়েছে। চীন আশা করে, ভারত লাদাখে তথা পশ্চিম সেক্টরে বেশি ছাড় দেবে এবং ভারতকে চীন পূর্ব সেক্টরে তথা ম্যাকমোহন লাইনে বেশি ছাড় দেবে।
ওয়াংয়ের দৃষ্টিভঙ্গিটি আধা সরকারি হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে। এটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতির পরিপূরক হিসেবে মনে করা যায়।
নীতিগতভাবে ভারত এখনো চীনের ১৯৫৯ এলএসি প্রত্যাখ্যান করছে।এ কারণেই দিল্লি হিন্দুস্তান টাইমসকে বলেছে, ভঅরত কখনো একতরফাভাবে প্রণীত ১৯৫৯ সালের লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল মেনে নেবে না। ভারতের এই অবস্থান চীনসহ সবার কাছে জানা রয়েছে।
মজার ব্যাপার হলো, ভারতীয় বক্তব্যে এমন কথাও বলা হয়েছে যে দুই দেশ এলএসি নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর। কিন্তু চীন তাতে রাজি না হওয়ায় অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়ে আছে।
ভারতীয় এই প্রতিক্রিয়া বোঝা যাচ্ছে, তারাও চীনের সাথে আলোচনায় আগ্রহী।
গত ২১ সেপ্টেম্বর দুই দেশের সিনিয়র কমান্ডারদের মধ্যে বৈঠকের এক সপ্তাহের মধ্যে এই স্পর্শকাতর বিনিময় হয়। আর সিনিয়র কমান্ডারদের বৈঠকটি হয় ৪ সেপ্টেম্বর মস্কোতে প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের ও ১০ সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের প্রেক্ষাপটে।
কূটনীতিকরা একমত হয়েছিলেন যে দুই দেশের সংলাপ অব্যাহত রাখা এবং সব বিরোধপূর্ণ এলাকায় ব্যাপকভিত্তিক প্রত্যাহার অব্যাহত রাখা উচিত।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর হওয়া সিনিয়র কমান্ডারদের বৈঠক আরো দুটি কারণে গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, আলোচনায় সেনাবাহিনী প্রতিনিধিদলের সাথে এক ভারতীয় কূটনীতিকও যোগ দিয়েছিলেন। দ্বিতীয়ত, জুনে সীমান্ত বৈঠক হওয়ার পর থেকে এই প্রথম ফলাফল নিয়ে এক যৌথ প্রেস রিলিস ইস্যু করা হয়।
আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কমান্ডারদের বৈঠকের ব্যাপারে ইতিবাচক মূল্যায়ন করে।
ভারতীয় এক মুখপাত্র পরে বলেছেন, দুই পক্ষ ভুল বুঝাবুঝি এড়ানোর জন্য যোগাযোগ বাড়াতে, সীমান্তে আর সৈন্য পাঠানো বন্ধ করতে সম্মত হয়েছে।
এসব ঘটনায় মনে হচ্ছে, ভারত ও চীন সম্ভবত সীমান্ত উত্তেজনা অবসানের দিকে এগুচ্ছে।
সিনিয়র কমান্ডারদের পরবর্তী বৈঠক হবে ১২ অক্টোবর। সেটির প্রতি বেশ নজর থাকবে। প্রধানমন্ত্রী মোদি রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে হিসেবে সামনে অগ্রসর হন, তা দেখার বিষয়। সামনে রয়েছে সুযোগ, তবে যে চ্যালেঞ্জ আছে, সেটিও কঠিন।
সূত্র : এশিয়া টাইমস