ট্রাম্প এমন আচরণ কেন করেন?
ট্রাম্প - ছবি সংগৃহীত
আমেরিকার গণতান্ত্রিক শাসনের অবস্থা ভারতের চেয়ে খুব ভালো বলার সুযোগ নেই। ভারতীয় প্রশাসন ধর্ম ও বর্ণের ভিত্তিতে যেমন নিন্দনীয় আচরণ করছে, আমেরিকার প্রশাসনে এমন অধঃপতন এখনো হয়নি। তবে রাজনীতিতে এমন দানবীয় পরিবর্তন এসেছে এবং শ্বেতাঙ্গ জনগণের পর্যায় থেকে তা সমর্থনের যে নজির স্থাপিত হয়েছে, এতে অচিরেই দেশটির গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৮২৭ দিনে ১০ হাজার মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর দাবি করেছেন। দিনে তিনি গড়ে ১২টি মিথ্যা বলেছেন। তিনি এতটাই বাঁধনহারা যে, এক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ক্ষিপ্ত হয়ে বলতে গিয়ে একলাইন বক্তব্যে চারটি মিথ্যাও বলেছেন। যারা ট্রাম্পের মিথ্যা চাতুর্য ও প্রতারণা জানেন তারা ধারণা করছেন তিনি তার চার বছর টার্মের মধ্যে ২০ হাজারের বেশি মিথ্যা কথা বলতে পারেন।
এ ধরনের একজন ব্যক্তিকে অমেরিকার জনগণ প্রেসিডেন্ট বানাতে ভোট দিয়েছেন। এ ছাড়া নারীর প্রতি তার মনোভাব সবার জানা। কয়েক ডজন নারী ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও নির্যাতিত হওয়ার অভিযোগ এনেছেন। মুসলিমদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে তিনি কটুকাটব্য করেন। আফ্রিকান কালোদের বিরুদ্ধে তার বিদ্বেষ আরো নগ্ন। ট্রাম্পের এ ধরনের বিকৃত স্বভাবের ব্যাপারে আমেরিকার মানুষ জানে। তারা জেনে শুনেই ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়েছেন। হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। কোনো ধরনের কারচুপি করে তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হননি। তবে এবার তিনি কারচুপি করতে চাচ্ছেন। সেটি সবার কাছে স্পষ্ট হয়ে গেছে। কারচুপিতে সফল না হলে বিচার বিভাগের কাঁধে ভর করে হলেও নির্বাচনে জিততে চান। প্রধান বিচারপতি মারা যাওয়ার পর একজন বর্ণবাদী বিচারক তিনি নিয়োগ করতে চাইছেন। আর সে বিচারকের কাছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফায়সালা তিনি করাবেন। তার নিযুক্ত বিচারপতি এবার ভারতের বিচারপতির মতো রায় দেবেন বলে শঙ্কা জেগেছে। এ বিচারের রায়ে ‘তালগাছ আমার’ থাকলেও বিচার সঠিক হয়েছে বলেই হয়তো ধরা হবে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রথম বিতর্কে ট্রাম্প উন্মত্ত ষাঁড়ের মতো আচরণ করেছেন বলে অনেকে মন্তব্য করেছেন। সব ধরনের নিয়মকানুন, ভদ্রতা ও লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে তিনি নির্লজ্জ মিথ্যাচার করেছেন। জোর করে প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনকে থামিয়ে দিয়েছেন। এর আগে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীদের মধ্যে কেউ এমন অসৌজন্যমূলক ব্যবহার করেনি। তাই বাকি দু’টি বিতর্কের নিয়ম পরিবর্তন করা হচ্ছে। ট্রাম্পের শিবির নিয়ম পরিবর্তনের ঘোর বিরোধী। তবে দু’জনের মধ্যে আবার বিতর্ক হবে কি না কেউ জানেন না। করোনাকে নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা ট্রাম্প আপাতত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
ট্রাম্পের ব্যক্তিগত চরিত্র গণতন্ত্রের সম্পূর্ণ বিরোধী। আমেরিকার মানুষ এর পরও তাকে পছন্দ করছেন। নির্বাচনী জরিপে দেখা গেছে, তিনি বাইডেন থেকে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও প্রতিযোগিতা থেকে ছিটকে পড়েননি; অর্থাৎ বৃহৎ একটি জনগোষ্ঠী তাকে সমর্থন করছে। তা হলে আমেরিকার মানুষ কি প্রকৃতপক্ষে বর্ণবাদী? গণতন্ত্র টিকে থাকবে কি না, এটি তাদের সম্ভবত উদ্বেগের বিষয় নয়। তাদের পছন্দ হচ্ছে ‘শ্বেতাঙ্গ শ্রেষ্ঠত্ববাদ’। তাদের বক্তব্য হলো, আমেরিকা সাদাদের দেশ। এ দেশের সুযোগ সুবিধা সমৃদ্ধি কেবল সাদারা ভোগ করবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এমন কথা প্রকাশ্যে বলে থাকেন।
শুধু আমেরিকা ও ভারতে গণতন্ত্র দুস্থ হয়ে যাচ্ছে এমন নয়। পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশে গণতন্ত্র এখন রুগ্ণ আক্রান্ত এবং নানাভাবে পর্যুদস্ত হচ্ছে। এর ফল হিসেবে ভবিষ্যতের পৃথিবী কেমন হবে কারো সঠিক জানা নেই। তবে নানা ধরনের শোষণ নিপীড়ন থেকে বাঁচতে মানুষ যেমন প্রস্তুত গণতন্ত্রকে পেয়েছে, সে ধরনের প্রস্তুত কোনো ‘তন্ত্র’ মানুষের সামনে নেই। তাই বলে পৃথিবীর পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ নাও হতে পারে। পৃথিবীর বেশির ভাগ সময়ে আধুনিক গণতন্ত্র ছিল না। তাই বলে পৃথিবী একেবারে দুঃশাসনে ভরে যায়নি। অনেক প্রজাহিতৈষী শাসক পৃথিবীতে জন্মেছেন। তারা জনসাধারণের সর্বোচ্চ কল্যাণ সাধন করেছেন। সেজন্য জনগণ তাদের ভোটে নির্বাচিত করেছেন এমন নয়।
jjshim146@yahoo.com