হিন্দুকুশে প্রবল বাতাস : পাকিস্তান ওঠছে, ভারত নামছে
ইমরান খান ও নরেন্দ্র মোদি - ছবি : সংগৃহীত
হিন্দু কুশের বাতাস আবার প্রবল হয়ে ওঠছে। আফগানিস্তানে সঙ্ঘাতের অবসান ঘটিয়ে শান্তি ফিরিয়ে আনতে নানা দেশের নানা কুশীলবেরা এগিয়ে আসছে।
প্রধান মঞ্চ কাতারের দোহা। এখানেই আফগান সরকারি প্রতিনিধিদলের সাথে তালেবানের আলোচনা শুরু হয়েছে। ১২ সেপ্টেম্বর আলোচনা শুরু হলেও ২২ দিন ধরে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দুই পক্ষ এমনকি একে অপরের সাথে সরাসরি আলোচনা পর্যন্ত করছে না। তারা অভিন্ন এজেন্ডায় একমত হচ্ছে না : ইসলামি প্রজাতন্ত্র আফগানিস্তান কি সব নাগরিক সমান হবে, নাকি কিছু লোক অন্যদের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে?
বাস্তবে গত কয়েক দিনে কর্মপন্থা দোহা থেকে বের হয়ে ইসলামাবাদ, দিল্লি ও তাজিক রাজধানী দুশানবে চলে গেছে।
সোমবার বিকেলে আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানি দোহায় যান উচ্চপদস্থ একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে। তাদের মধ্যে ছিলেন প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট আমরুল্লাহ সালেহ, ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী হানিফ আতমার, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হামদুল্লাহ মুহিব।
তবে কর্মকর্তারা বলেন, সম্প্রতি আফগানিস্তানজুড়ে সন্ত্রাসী হামলার কারণে তালেবানের সাথে সরাসরি আলোচনা করবেন না গানি। শনিবার নাঙ্গাহারে এক গাড়ি বোমায় ১৬ জন নিহত হয়েছে, আত্মঘাতী হামলাটি থেকে গভর্নর রক্ষা পেলেও নিহত হয়েছেন আটজন।
দুশানবে হয়ে দোহা থেকে দিল্লি
সোমবার আফগানিস্তানবিষয়ক বিশেষ মার্কিন দূত জালমি খালিলজাদ দুশানবে গিয়েছিলেন তাজিক প্রেসিডেন্ট ইমোমালি রহমানের সাথে সাক্ষাত করতে। তার লক্অষ্য ছিল দোহার শান্তি আলোচনার প্রতি তার সমর্থন লাভ।
আর আফগানিস্তানের হাই কাউন্সিল ফর ন্যাশনাল রিকনসিলিয়েশনের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ দিল্লিতে পৌঁছেছেন। তিনি দোহা আলোচনার ব্যাপারে ভারতীয় নেতৃত্বকে অবহিত করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি আফগানিস্তানের শান্তির প্রতি দিল্লির সমর্থন অব্যাহত রাখতে বলবেন। তাছাড়া এখন পর্যন্ত তালেবানকে দূরে সরিয়ে রাখলেও এখন তাদের সাথে সমঝোতার দরকার আছে বলেও জানাবেন।
মূলত, আবদুল্লাহ চাইবেন, চলমান দোহা আলোচনা সম্পর্কে ভারতকে আরো একটু আশাবাদী হতে। এখন পর্যন্ত ভারত যেভাবে হাত গুটিয়ে থাকছে, তার অবসান ঘটানোর আশা করছেন আবদুল্লাহ। তবে কোনো পক্ষই যাতে মর্মাহত না হয়, সে দিকেও নজর রাখতে বলছেন।
তিনি ভারতকে লো প্রোফাইল বজায় রাখতে বলবেন। তবে আশা করছেন, ড্যাম, স্কুল ইত্যাদি নির্মাণে সহায়তাও অব্যাহত রাখবে।
পাকিস্তান সমীকরণ
তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, গত সপ্তাহে পাকিস্তান সফর করে সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সাথে বৈঠক করেছেন। নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, দোহায় স্থবির হয়ে থাকা আফগান শান্তিপ্রক্রিয়ায় ইতিবাচকভাবে হস্তক্ষেপ করার জন্য পাকিস্তান সরকারকে রাজি করানোর প্রয়াস ছিল এটি।
আবদুল্লাহ, সেইসাথে গানি ও বাকি আফগানিস্তানও জানে যে অনেক বছর পর তালেবান কিভাবে আলোচনার টেবিলে এসেছে। তারা বোঝে যে এর পেছনে পাকিস্তানের উদ্যোগ ছিল্ পাকিস্তানের হাতেই গুরুত্বপূর্ণ কার্ডটি রয়ে গেছে।
আফগানিস্তান যে কঠিন অবস্থায় আছে, তা বুঝতে হবে। কঠিন বাস্তবতা মেনেও নিতে হবে। ১৯ বছরের যুদ্ধ শেষ করে না চাইলেও তালেবানকে কাবুলের সিংহাসনে বসতে বলা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকছে না। আর যে নির্বাচন হলো কিছু দিন আগে, তা খড়কুটার মতো ভেসে যাবে। আর পাকিস্তানের হাতেই যুদ্ধ বা শান্তি সব ক্ষেত্রে চাবিকাঠি রয়ে গেছে।
তালেবানের দাবি
দোহায় আলোচনা কেন স্থবির হয়ে আছে? তোলো নিউজের মতে, উভয়পক্ষ ২০টির মধ্যে ১৮টি বিষয়ে একমত হয়েছে। কিন্তু দুটি বিষয়ই সমস্যা সৃষ্টি করছে। আর তা ভবিষ্যত রাষ্ট্রের জন্য মৌলিক বিষয়। একটি হলো এই আলোচনার ও সেইসূত্রে আফগান রাষ্ট্রের ধর্মীয় ব্যবস্থার ভিত্তি কী হবে। দ্বিতীয়টি হলো, যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানের মধ্যে ফেব্রুয়ারিতে হওয়া চুক্তিই কি আলোচনার ভিত্তি হবে?
মনে হচ্ছে, তালেবান চাচ্ছে, হানাফি মাজহাব বলে ধর্মীয় নির্দেশনার একমাত্র পথ। তোলো নিউজ জানাচ্ছে, আফগান সরকার এতে রাজি আছে, তবে তারা শিয়া আইন ও অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি সম্মান জানানোর নিশ্চয়তাও চাচ্ছে।
আর তালেবান দাবি করছে যে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে করা তাদের চুক্তিটিই হবে সব আলোচনার ভিত্তি। আফগান সরকার লয়া জিরগাসহ বিকল্প নানা প্রস্তাব দিচ্ছে।
বার্তাটি বুঝতে পেরেছে দিল্লি
নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, দোহা আলোচনা আবার শুরু হবে।আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে যে বার্তাটি দিয়েছেন তা হলো, পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবলভাবে লাইমলাইটে থাকবে। ভারত এই মুহূর্তে একটু আড়ালে থাকবে। তার এই বার্তাটি ভারত বুঝতে পেরেছে।
সূত্র : দি প্রিন্ট