পর্দা না করার কঠিন শাস্তি
পর্দা না করার কঠিন শাস্তি - ছবি সংগৃহীত
পর্দা শব্দটি ইসলামের বিধিবিধানের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ইসলাম মানুষের জন্য এমন কিছু ফরজ নিয়মকানুন করে দিয়েছে যা পালনে বেহেশতি সুখ পৃথিবীতেই অনুভূত হয়। আর এর লঙ্ঘনের ফল হয় অশান্তি আর চিরস্থায়ী জাহান্নাম। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন : ‘হে বনি আদম! আমি তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করার ও বেশভূষার জন্য তোমাদের পোশাক পরিচ্ছদের উপকরণ অবতীর্ণ করেছি। (বেশ-ভূষার তুলনায়) আল্লাহভীতির পরিচ্ছদই হচ্ছে সর্বোত্তম পরিচ্ছদ। এটা আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্যতম নিদর্শন, সম্ভবত মানুষ এটা থেকে উপদেশ গ্রহণ করবে।’ (সূরা আল আরাফ ২৬)। আল্লাহ আমাদের পর্দা ফরজ করার সাথে সাথে তাকওয়াও অর্জন করতেও বলেছেন, যেটা হলো মনের পর্দা।
পর্দা ফরজ হওয়া সম্পর্কে এত বেশি কুরআন ও হাদিসে উল্লেখিত হয়েছে যে এ নিয়ে নতুন করে কিছু ভাবার অবকাশ নেই। আল্লাহ মুসলিম নারীর সম্মানে এবং দুষ্ট লোকের অশিষ্ট আচরণ থেকে তার মর্যাদা রক্ষায় পর্দা ফরজ করেছেন। পর্দা যেমন পুরুষদের রক্ষা করে নারীর ফিতনা থেকে, তেমনি নারীকেও নানা কষ্ট থেকে রক্ষা করে। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আর মুমিন নারীদেরকে বলো, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাজত করবে। আর যা সাধারণভাবে দৃশ্যমান হয় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাই এর ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে, অধীনস্থ যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর নিকট তাওবা করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো। (সূরা আন-নূর, আয়াত : ৩১)।
কুরআনে আরো নির্দেশ আছে যে, কোনো ব্যক্তিকে সালাম ব্যতীত কোনো রকম সাক্ষাৎও করা যাবে না। এতে পর্দা রক্ষা করা সহজ হয়। আর অন্যের ঘরে প্রবেশের সময় যদি অনুমতি নেয়া হয়, তবে দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা কম থাকে। আল্লাহ বলেন, ‘হে মু’মিনগণ! তোমরা নিজেদের গৃহ ব্যতীত অন্য কারো গৃহে গৃহবাসীদের অনুমতি না নিয়ে এবং তাদেরকে সালাম না করে প্রবেশ করো না; এটাই তোমাদের জন্য শ্রেয়, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো।’ (সূরা আন নূর ২৭)। কুরআনে আরো বলা হয়েছে, কোনো দুর্বল মনের অধিকারী ব্যক্তি যেন সুযোগ না খোঁজে তাই অবশ্যই মহিলাদের কণ্ঠ উচ্চ এবং কোমল হবে না।
পর্দার মূল হচ্ছে বাহ্যিক আবরণ। আর এই আবরণ যেন এমন হয় যাতে মহিলাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না পায়। আর সম্মানিত মহিলাদের আলাদাভাবে চিহ্নিত করা যায় এবং কোনো অপমানের কারণ যেন না হয়। কুরআনে এসেছে; ‘হে নবী! তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মু’মিনা নারীদেরকে বলো, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজতর হবে, ফলে তাদেরকে উত্ত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আল আহযাব ৫৯)।
রাসূল সা: এরশাদ করেন; ‘যে নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বে এবং রমজানের রোজা রাখবে স্বীয় গুপ্তস্থানকে হেফাজত করবে আর স্বামীর আনুগত্য করবে। এমন নারীর জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেয়া হবে, যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা মতো জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। (তিরমিজি ও তাবরানি)। অন্য এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আবু সাঈদ খুদরি রা: বলেন, একবার ঈদুল ফিতরের দিন রাসূল ঈদগাহে গিয়ে উপস্থিত মহিলাদেরকে লক্ষ্য করে বললেন; হে নারী সম্প্রদায়! দান খয়রাত কর কেননা, আমাকে অবগত করানো হয়েছে দোজখের অধিকাংশ অধিবাসী তোমাদের নারী সম্প্রদায়েরই হবে। (দীর্ঘ হাদিসের অংশ বিশেষ : বুখারি-মুসলিম)।
উক্ত হাদিস থেকে বুঝা যায় যে, জাহান্নামের অধিকাংশ অধিবাসি হবে নারী। অথচ প্রথমোক্ত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় মেয়েদের জন্য জান্নাত অর্জন খুবই সহজ, কিন্তু তবুও কেন নারীদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ জাহান্নামে যাবে? এই প্রশ্নের উত্তরে রাসূল সা: বিভিন্ন হাদিসে বলেছেন এবং তার প্রতিকার বর্ণনা করেছেন। কয়েকটি কারণ নিচে উল্লেখ করা হলো : হজরত আলী ও ফাতেমা রা: উভয়ে একদা রাসূল সা:-এর কাছে গিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে রাসূল সা:-কে ক্রন্দনরত অবস্থায় দেখতে পেলেন। ক্রন্দন তাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করল। অতঃপর হজরত আলী রা: রাসূল-এর কাছে কান্নার কারণ জানতে চাইলে রাসূল সা: বললেন : মি’রাজের রাতে আমি উম্মতের নারীদেরকে জাহান্নামে বিভিন্ন ধরনের ভয়ঙ্কর ও কঠিন আজাবে লিপ্ত দেখেছি যা স্মরণ করে আমি কাঁদছি।
মহানবী সা: নারীজাতির শাস্তির বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, ১. আমি জাহান্নামে একজন মহিলাকে তার মাথার চুল দ্বারা ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পেলাম ওই সময় তার মাথার মগজ ফুটন্ত পানির ন্যায় টগবগ করে ফুটছিল। ২. একজন মহিলাকে স্বীয় স্তনে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পেলাম অর্থাৎ সমস্ত শরীরের ওজন স্তনের উপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
নবী কন্যা ফাতিমা রা: এ শাস্তির কারণ জানতে চেয়ে আরজ করলেন আব্বাজান! মহিলাদের এই ভয়াবহ শাস্তি ভোগের কারণ কি?
উত্তরে মহানবী সা: এরশাদ করলেন : ‘নারীর শাস্তির প্রথম কারণ : যে মহিলা স্বীয় মাথার চুল দিয়ে ঝুলন্ত অবস্থায় সাজা ভোগ করতে দেখেছিলাম তার এই শাস্তির কারণ হলো, সে চলার পথে পরপুরুষ থেকে নিজের চুলকে ঢেকে রাখত না। নগ্ন মাথায় পর পুরুষকে দেখানোর জন্য চুল ঝুলিয়ে ঘুরে বেড়াত। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে মহিলাদেরকে মাথা ঘাড় ও বুক মোটা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। অবৈধ সম্পর্ক হচ্ছে নারী শাস্তির তৃতীয় কারণ। মহানবী সা: যে মহিলাকে স্তনে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পেয়েছিলেন তার কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন : ওই নারী ছিল বিবাহিতা, সে বিবাহিতা হওয়া সত্ত্বেও তার সম্পর্ক ছিল পরপুরুষের সাথে। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে লজ্জাস্থান হেফাজতকারী মহিলাকে জান্নাতি বলে ঘোষণা করেছেন। (সূরা মু’মিনূন : ৫)।
আজকের চলমান বিশ্বে নারী কেলেঙ্কারির নামে অনেক কিছুই ঘটে চলছে স্বামীর অনুপস্থিতিতে, দেবর ও অন্যের সাথে অসংকোচে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে লজ্জাকে বিসর্জন দিয়ে আস্তে আস্তে অবৈধ সম্পর্কের দিকে অগ্রসর হয়। এগুলো লজ্জাহীনতার ফসল। দেশে অহরহ ধর্ষণ আর যৌনতার ছড়াছড়ি নারীর অবাধ চলাচল এবং নিয়ন্ত্রণহীন স্বাধীনতারই ফল। ভ্রূণ হত্যার মতো জাহেলিয়াতে আমরা বসবাস করছি, যা মূলত পর্দা লঙ্ঘনের কারণেই বেড়ে চলছে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক জ্ঞান দান করুন। আমিন।
লেখিকা : ইসলামী গবেষক