করোনার প্রাথমিক লক্ষণ : প্রথমে মাথা ধরা, তারপর গা ব্যথা!
করোনার প্রাথমিক লক্ষণ : প্রথমে মাথা ধরা, তারপর গা ব্যথা! - ছবি : সংগৃহীত
• করোনাভাইরাসের লক্ষণ বা উপসর্গ ঠিক কী হতে পারে, তার তালিকা রয়েছে। কিন্তু আক্রান্তের শরীরে রোগ ধরার আগে সামান্য কয়েকটি উপসর্গ দেখতে পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। সেগুলোর তালিকা করেছেন কিংস কলেজ লন্ডনের গবেষকরা। সেখানে দেখা গেছে, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সামান্য আগে থেকে শরীরে কয়েকটি উপসর্গ ধরা পড়ছে।
• করোনার নির্দিষ্ট উপসর্গ দেখা দেয়ার আগেই এই উপসর্গ দেখা দিচ্ছে বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, একটি সিম্পটম চেকার অ্যাপের মাধ্যমে তারা দেখেছেন, যারা করোনা আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের মধ্যে ৮২ শতাংশের মাথা ব্যথা ধরা পড়েছে। আর ৭২ শতাংশের শরীরে দেখা গিয়েছে গা ব্যথা। কেবল মাত্র ৯ শতাংশ মানুষ জানিয়েছেন, তাদের মাথা ব্যথা হয়নি।
• মাত্র এক শতাংশ মানুষ বলেছেন, তাদের শরীরে মাথা ব্যথা বা গা ব্যথার মতো উপসর্গ দেখা দেয়নি। তাই মনে করা হচ্ছে করোনাভাইরাসের আসল উপসর্গ দেখা দেয়ার আগে মাথা ব্যথা, গা ব্যথা দেখা দেয়াটা স্বাভাবিক। গবেষকরা দেখেছেন, আক্রান্ত হওয়ার সাত দিনের মধ্যে ৪০ শতাংশের শরীরে জ্বর দেখা দিচ্ছে।
• তারা সতর্ক করে বলেছেন, স্বাদ ও গন্ধের ক্ষমতা চলে যাওয়া এখনো করোনা ভাইরাসের অন্যতম উপসর্গগুলোর একটি। তবে তারা বলছেন, ভিন্ন বয়সের মানুষের মধ্যে করোনার ভিন্ন ভিন্ন উপসর্গ ধরা পড়ছে। তবে, সর্দি কাশি করোনার উপসর্গ হিসাবে রয়েই যাচ্ছে।
• এছাড়া, ৯ শতাংশ মানুষ, যারা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের শরীরে র্যাশ দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা সংক্রমিতের মধ্যে স্কিন র্যাশ বিষয়টি এখনো অতিমাত্রায় দেখা দেয়নি। তবে করোনা ভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার আগে, পরে বা আক্রান্ত থাকালীন ত্বকে র্যাশ দেখা দিতে পারে।
কোভিড পজিটিভ রোগীদের হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা বেশি
বয়স যদি ৮০-র উপরে হয় এবং তার সঙ্গে থাকে কোভিড ১৯-এর উপসর্গ, তা হলে সেই সব রোগীর হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা প্রবল এবং জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনাও খুবই ক্ষীণ। এ কথা দাবি করছে বিএমজে বলে একটি পত্রিকায় সম্প্রতি প্রকাশিত হওয়া এক গবেষণা। অবশ্য শুধু সমীক্ষাটি তুলে ধরেই ক্ষান্ত থাকেননি গবেষকরা। কী ভাবে একজন কোভিড রোগী ও তার পরিবার এই বিষয়টির মোকাবিলা করবেন, তার বিস্তারিত বিবরণও লেখাটিতে উল্লেখ করেছেন তারা।
খবর অনুযায়ী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক দল ওই দেশের ৬৮টি হাসপাতালে এই সমীক্ষা চালিয়েছেন। কোভিড-১৯ আক্রান্ত প্রায় ৫,০১৯ জন মারাত্মক অসুস্থ রোগী, যাদের বয়স ১৮ বা তার উপরে, এদের উপরেই এই গবেষণা করা হয়েছে। গবেষণা বলছে এই রোগীদের মধ্যে ১৪% অর্থাৎ ৭০১ জনকে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করার ১৪ দিনের মাথাতেই হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। এদের মধ্যে ৪০০ জনকে অর্থাৎ ৫৭% রোগীকে সিপিআর বা কার্ডিওপালমোনারি রেজাসসাইটেশন দেয়া হয়েছে।
দলের একজন গবেষক জানিয়েছেন যে, যাদের হাসপাতালেই কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে, তাদের সবারই গড় বয়স ৬০ থেকে ৬৩ বছরের মধ্যে। এদের আগে থেকেই অনেক শারীরিক সমস্যা ছিল। তবে একই সঙ্গে হাসপাতাল কী ভাবে কাজ করছে অর্থাৎ কর্মীদের দক্ষতা ও রোগীদের সঙ্গে তাদের ব্যবহার কেমন, হাসপাতালে থাকার ধকলের মতো গৌণ বিষয়কেও গুরুত্ব দেয়ার কথা জানিয়েছেন গবেষকরা। কেন না এই বিষয়গুলোর উপর ভিত্তি করেও কেউ বেঁচে যেতে পারেন, আবার কারো মৃত্যু ত্বরাণ্বিত হতেই পারে!
গবেষকরা বার বার উল্লেখ করেছেন যে কোভিড-সহ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে বাঁচার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তবে যাঁরা এই পরিস্থিতিকে জয় করে বেরিয়ে এসেছেন তাদের মধ্যে ২১% রোগীরই বয়স ৪৫-এর নিচে। ৮০ বছরের কোঠায় ছিলেন যারা, জীবন ফিরে পেয়েছেন তাদের মধ্যে মাত্র ৩%। অবশ্য না বললেই নয় যে এই সমীক্ষা চালাতে গিয়ে গবেষকদের বেশ কিছু অসুবিধের মুখেও পড়তে হয়েছে। যেমন, সঠিক সময়ে সিপিআর না দেয়া ইত্যাদি। ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে ভর্তির প্রথম ১৪ দিনের মধ্যে ডেটা না পাওয়াও একটা প্রতিবন্ধকতা বলে মনে করছেন তারা। গবেষকরা জানিয়েছেন, এতে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের প্রকৃত হার বোঝা সম্ভব নয়।
তবে বেশির ভাগ রোগীকেই মৃত্যু বা হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়া পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে এবং সুষ্ঠুভাবে তার ডেটা নেয়া হয়েছে। সব শেষে গবেষকরা এই সিদ্ধান্তে এসেছেন যে কোভিড রোগীদের ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ হওয়া খুবই সাধারণ একটি বিষয় এবং সিপিআর দিলেও জীবন ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।
সূত্র : নিউজ ১৮