কাকে বিয়ে করবেন : যা বলে ইসলাম
কাকে বিয়ে করবেন : যা বলে ইসলাম - ছবি : সংগৃহীত
কুরআন ও হাদিসে নারী-পুরুষের যে সম্পর্ক স্থাপন করেছে, নারীকে যে মর্যাদা দান করেছে, তা আজ সমাজে সেভাবে নেই। বরং সমাজে চলছে নারী নির্যাতন, নারী অপহরণ ও নারীকে নিয়ে দেহ ব্যবসা। নারী আজ পায় না স্ত্রী হিসেবে যথার্থ মর্যাদা, মা হিসেবে যথার্থ সম্মান, কন্যা হিসেবে যথার্থ শিক্ষা। অপর দিকে সমাজ ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক কারণে বিয়ে হয়ে গেছে কঠিন। এ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ইসলামের বিপরীত। নারী ও পুরুষের মধ্যে- বৈধ সম্পর্ক স্থাপনের জন্য ইসলাম চালু করেছে বিয়ে। মানব সমাজে পবিত্র যৌন জীবনযাপনের প্রধান মাধ্যম হলো বিয়ে।
কুরআন ও হাদিসে বিয়ের প্রতি উৎসাহ প্রদান ও নির্দেশ : নৈতিকতার উৎকর্ষতা সাধন ও সামাজিক সুশৃঙ্খলা আনার জন্য বিয়েকে সার্বিকভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিতদের বিবাহ করিয়ে দাও এবং তোমাদের সৎ ক্রীতদাস ও ক্রীতদাসীদেরও। যদি তারা দরিদ্র হয় তবে আল্লাহ তার অনুগ্রহে ধনী বানিয়ে দিবেন।’ (সূরা নূর ৩২)।
রাসূলুল্লাহ সা:-এর হাদিসে বিয়ের প্রতি উৎসাহ ও তাকিদের কথা : আবু আইয়ুব রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, চারটি জিনিস নবীদের চিরাচরিত সুন্নত। ১. লজ্জা-শরম ২. সুগন্ধি ব্যবহার করা ৩. মেসওয়াক করা ৪. বিয়ে করা (তিরমিজি-১০১৮)।
রাসূল সা:-এর আহ্বান : আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমরা রাসূলুল্লাহ সা:-এর সাথে বের হলাম। আমরা ছিলাম যুবক (বিবাহের ব্যয় বহনের) সামর্থ্য আমাদের ছিল না। তিনি বলেন, হে যুব সমাজ তোমাদের বিয়ে করা উচিত। কেননা এটি দৃষ্টিশক্তিকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থানকে রাখে সুরক্ষিত। আর তোমাদের মধ্যে যার বিবাহ করার সামর্থ্য নেই, সে যেন রোজা রাখে, কেননা রোজা তার যৌনশক্তিকে দমিয়ে রাখবে। (তিরমিজি : ১০১৯)
চিরকুমার হওয়া সম্পর্কে কঠোর হুশিয়ারি : ইবনে মাজাহ ‘হাদিস গ্রন্থে বলা হয়েছে- আয়েশা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, বিয়ে আমার সুন্নাত-নীতি। অতএব যে ব্যক্তি আমার নীতি অনুযায়ী কাজ করবে না সে আমার দলভুক্ত নয়।
কাকে বিয়ে করবেন : এ সম্পর্কে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে- জাবির রা: হতে বর্ণিত, নবী সা: বলেছেন, মহিলাদের তাদের দ্বীনি চেতনা, ধন-সম্পদ ও সৌন্দর্য দেখে বিয়ে করা হয়। তুমি দ্বীনদার পাত্রীকে অবশ্যই অগ্রাধিকার দেবে। তোমার হাত কল্যাণে পরিণত হবে। অপর হাদিসে চারটি কারণ বিবেচনা করা হয়েছে। আবু হুরায়রা রা: হতে বর্ণিত রাসূল সা: বলেছেন, চারটি কারণ বিবেচনা করে কোনো মহিলাকে বিয়ে করা হয়- ১. ধন-সম্পদ ২. বংশমর্যাদা ৩. সৌন্দর্য ৪. দ্বীনি চেতনা। অতএব, দ্বীনি চেতনাকে অগ্রাধিকার দাও, তোমার হাত কল্যাণে পূর্ণ হয়ে যাবে।
এই হাদিস দু’টিতেই দ্বীনদারি মহিলাদের বেশি অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে তোমার হাত কল্যাণে পূর্ণ হয়ে যাবে। অথচ আমাদের সমাজে এই হাদিসের কোনো শিক্ষাই গ্রহণ করেনি। দেখা যায় সুন্দরী, প্রভাবশালী ও ধন সম্পদকেই প্রথমে স্থান দেয়া হয়। আল্লাহর রাসূল সা: যেখানে বললেন, তোমরা দ্বীনি চেতনাকে বেশি অগ্রাধিকার দেবে; সেখানে আমরা তার বিপরীত সুন্দরী ও প্রভাবশালীকেই অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। তাই আমাদের সমাজে এত অশান্তি ও অকল্যাণ বিরাজ করছে।
বিয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ মোহর :
মোহরের পরিমাণ : মোহরের পরিমাণ স্বামীর অবস্থানুযায়ী বেশি বা কম হতে পারে। উভয়পক্ষ একমত হয়ে এ ব্যাপারে যা নির্ধারণ করবে তাই ধার্য হবে। আবুল আজফা রা: হতে বর্ণিত তিনি বলেন, উমর ইবনুল খাত্তাব রা: বলেছেন, সাবধান, তোমরা নারীদের মোহর উচ্চ হারে বৃদ্ধি করবে না। কেননা তা যদি দুনিয়াতে সম্মানের বস্তু অথবা আল্লাহর কাছে তাকওয়ার বস্তু হতো তবে তোমাদের চেয়ে আল্লাহর নবী এ ব্যাপারে বেশি উদ্যোগী হতেন। কিন্তু রাসূল সা: বার উকিয়ার বেশি মোহরে তার কোনো স্ত্রীকে বিয়ে করেছেন অথবা কোনো কন্যাকে বিয়ে দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই (তিরমিজি : ১০৫১)
উপরের হাদিস থেকে জানা যায়, মোহরের পরিমাণ একেবারে সামান্য হওয়া যেমন ঠিক নয় যদিও তাতে বিয়ে হয়ে যাবে, তেমনি খুব বেশি আকাশচুম্বী পরিমাণও যথার্থ নয়, বিশেষ করে তা আদায়ের কোনো বাধ্যবাধকতা যদি না থাকে। বরং তা আদায়ের নিয়ত না থাকলে তো বিয়েই বৈধ হবে না। আল্লাহর ভয় নিয়ে মোহর ধার্য করা উচিত এবং তা আদায়ের জন্য চেষ্টা করা। নতুবা কাল কিয়ামতের দিন যেনার কাতারে দাঁড়াতে হবে।
আমাদের সমাজে আজকাল ‘মোহর’ ফ্যাশনাবল হয়ে উঠেছে। এ যেন এক প্রতিযোগিতায় নেমেছে কার চেয়ে কে বেশি মোহর ধার্য করবে। এই মোহর যে স্ত্রীকে দিতে হবে এ ধারণা পর্যন্ত অনেক স্বামী রাখে না। অথচ মোহর ছাড়া বিয়েই হবে না। ইসলামের বিধান মতে বিয়েতে স্ত্রীর প্রাপ্য হলো ‘মোহর’, যা স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা আদায় করতে বলেছেন।
যৌতুক : স্বামীর প্রাপ্য হিসেবে কোনো কিছু রয়েছে বলে কোরআন ও হাদিসে উল্লেখ নেই। অথচ আমাদের সমাজে যৌতুককে একটি বাধ্যতামূলক অংশ ধরা হয়ে থাকে। যা কুরআন ও হাদিসের সম্পূর্ণ বিপরীত। এমনকি এই যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে নানাভাবে নির্যাতন করা হয়, স্ত্রীকে তার বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়, তালাক দেয়া হয়।
তার আগে একটি কথা না বললেই হয় না। তা হলো অপরাধ যে করে আর অপরাধকে যে প্রশ্রয় দেয় দু’জনই সমান অপরাধী। যৌতুকের জন্য অনেক মা-বাবা তার আদরের মেয়েকে বিয়ে দিতে পারেন না। আর এ কারণে সমাজে অনেক ব্যভিচার বৃদ্ধি পায়। কাল কিয়ামতের দিন এই ব্যভিচারের দায়ভার কে নেবে? একটু চিন্তা করা উচিত- সমাজ থেকে এই যৌতুক প্রথাকে বিলুপ্ত করা না হলে কালক্রমে এই সমাজ ধ্বংসের দিকে পতিত হবে।
শেষ কথা হলো- রাষ্ট্র ও সমাজকে যৌন অনাচার থেকে রক্ষা করতে হলে পতিতালয় বন্ধ করতে হবে, যৌন উত্তেজনামূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। বিয়েকে করতে হবে সহজ ও স্বাভাবিক। আর প্রত্যেক মা-বাবার উচিত অতি তাড়াতাড়ি তাদের উপযুক্ত ছেলে-মেয়েকে বিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা।
লেখক : প্রধান শিক্ষক, পিরামিড বর্ণমালা স্কুল, বিজয়নগর, পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম।