মোহরানা সম্পর্কে কী বলে ইসলাম
মোহরানা সম্পর্কে কী বলে ইসলাম - ছবি : সংগৃহীত
বিয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ মোহর।
মোহরের পরিমাণ : মোহরের পরিমাণ স্বামীর অবস্থানুযায়ী বেশি বা কম হতে পারে। উভয়পক্ষ একমত হয়ে এ ব্যাপারে যা নির্ধারণ করবে তাই ধার্য হবে। আবুল আজফা রা: হতে বর্ণিত তিনি বলেন, উমর ইবনুল খাত্তাব রা: বলেছেন, সাবধান, তোমরা নারীদের মোহর উচ্চ হারে বৃদ্ধি করবে না। কেননা তা যদি দুনিয়াতে সম্মানের বস্তু অথবা আল্লাহর কাছে তাকওয়ার বস্তু হতো তবে তোমাদের চেয়ে আল্লাহর নবী এ ব্যাপারে বেশি উদ্যোগী হতেন। কিন্তু রাসূল সা: বার উকিয়ার বেশি মোহরে তার কোনো স্ত্রীকে বিয়ে করেছেন অথবা কোনো কন্যাকে বিয়ে দিয়েছেন বলে আমার জানা নেই (তিরমিজি : ১০৫১)
উপরের হাদিস থেকে জানা যায়, মোহরের পরিমাণ একেবারে সামান্য হওয়া যেমন ঠিক নয় যদিও তাতে বিয়ে হয়ে যাবে, তেমনি খুব বেশি আকাশচুম্বী পরিমাণও যথার্থ নয়, বিশেষ করে তা আদায়ের কোনো বাধ্যবাধকতা যদি না থাকে। বরং তা আদায়ের নিয়ত না থাকলে তো বিয়েই বৈধ হবে না। আল্লাহর ভয় নিয়ে মোহর ধার্য করা উচিত এবং তা আদায়ের জন্য চেষ্টা করা। নতুবা কাল কিয়ামতের দিন যেনার কাতারে দাঁড়াতে হবে।
আমাদের সমাজে আজকাল ‘মোহর’ ফ্যাশনাবল হয়ে উঠেছে। এ যেন এক প্রতিযোগিতায় নেমেছে কার চেয়ে কে বেশি মোহর ধার্য করবে। এই মোহর যে স্ত্রীকে দিতে হবে এ ধারণা পর্যন্ত অনেক স্বামী রাখে না। অথচ মোহর ছাড়া বিয়েই হবে না। ইসলামের বিধান মতে বিয়েতে স্ত্রীর প্রাপ্য হলো ‘মোহর’, যা স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা আদায় করতে বলেছেন।
যৌতুক : স্বামীর প্রাপ্য হিসেবে কোনো কিছু রয়েছে বলে কোরআন ও হাদিসে উল্লেখ নেই। অথচ আমাদের সমাজে যৌতুককে একটি বাধ্যতামূলক অংশ ধরা হয়ে থাকে। যা কুরআন ও হাদিসের সম্পূর্ণ বিপরীত। এমনকি এই যৌতুকের জন্য স্ত্রীকে নানাভাবে নির্যাতন করা হয়, স্ত্রীকে তার বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়া হয়, তালাক দেয়া হয়।
তার আগে একটি কথা না বললেই হয় না। তা হলো অপরাধ যে করে আর অপরাধকে যে প্রশ্রয় দেয় দু’জনই সমান অপরাধী। যৌতুকের জন্য অনেক মা-বাবা তার আদরের মেয়েকে বিয়ে দিতে পারেন না। আর এ কারণে সমাজে অনেক ব্যভিচার বৃদ্ধি পায়। কাল কিয়ামতের দিন এই ব্যভিচারের দায়ভার কে নেবে? একটু চিন্তা করা উচিত- সমাজ থেকে এই যৌতুক প্রথাকে বিলুপ্ত করা না হলে কালক্রমে এই সমাজ ধ্বংসের দিকে পতিত হবে।
শেষ কথা হলো- রাষ্ট্র ও সমাজকে যৌন অনাচার থেকে রক্ষা করতে হলে পতিতালয় বন্ধ করতে হবে, যৌন উত্তেজনামূলক কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। বিয়েকে করতে হবে সহজ ও স্বাভাবিক। আর প্রত্যেক মা-বাবার উচিত অতি তাড়াতাড়ি তাদের উপযুক্ত ছেলে-মেয়েকে বিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা।
লেখক : প্রধান শিক্ষক, পিরামিড বর্ণমালা স্কুল, বিজয়নগর, পতেঙ্গা, চট্টগ্রাম।