সালাত যেভাবে মানসিক শক্তি সৃষ্টি করে

এএসএম মারুফ বিল্লাহ | Oct 02, 2020 06:38 pm
সালাত যেভাবে মানসিক শক্তি সৃষ্টি করে

সালাত যেভাবে মানসিক শক্তি সৃষ্টি করে - ছবি : সংগৃহীত

 

সালাত মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে বড় নিয়ামত ও কল্যাণকর উপহার; যা একটি বড় নিয়ন্ত্রক শক্তিও। সালাত বান্দার প্রতিটি গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করে, ফলে প্রকৃত সালাত আদায়কারী কোনো অন্যায় কাজ করতে পারে না। দুর্বল মন কখনো শয়তানের প্রলোভনে আকৃষ্ট হয়ে পড়লে বিবেক তাকে স্মরণ করে দেয় যে কিছুক্ষণ পরেই প্রভুর দরবারে সিজদাহবনত হতে হবে। আর এভাবেই আল্লাহর দিকে ধাবিত হওয়ায় বান্দা মানসিকভাবে শক্তিশালী হয় এবং নৈতিকতার উন্নতি ঘটে।

সালাত মানুষের মনকে সব রকমের পাপাচার, অশ্লীলতা ও দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী ভোগ-বিলাসের অন্ধ মোহ থেকে মুক্ত ও পবিত্র রাখে। একজন মানুষের ভেতর যখন মানসিক উৎকর্ষতা অর্জিত হয়, তখন সে একজন নৈতিক এবং চরিত্রবান মানুষে পরিণত হয়। তার চরিত্রে শুধু ভালো দিকগুলোই প্রস্ফুটিত হয়। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘নিশ্চয় সালাত যাবতীয় অশ্লীল ও গর্হিত কাজ থেকে বিরত রাখে।’ (সূরা আনকাবুত : ৪৫) রাসূল সা: যেভাবে সালাত আদায় করেছেন ও মৌলিক শিক্ষা দান করেছেন সেভাবে সালাত আদায় করলে সবরকমের প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য অশ্লীল ও গর্হিত কাজ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব।

যে ব্যক্তি সালাত কায়েম করে সে আল্লাহর পক্ষ থেকে সৎকর্মের তাওফিকপ্রাপ্ত হয় এবং যাবতীয় গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার সুযোগ পায়। কিন্তু সালাত আদায় করা সত্ত্বেও যদি মন্দ কাজ করা থেকে মুক্তি না মেলে তাহলে বুঝতে হবে সে সালাত ত্রুটিপূর্ণ। ইমরান ইবনে হুসাইন রা: থেকে বর্ণিত, ‘রাসূল সা: বলেছেন, যে ব্যক্তিকে তার সালাত অশ্লীল ও গর্হিত কাজ থেকে বিরত রাখে না তার সালাত হয় না। (তিবরানি : ১১০২৫)

পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সালাতের অন্যতম একটি অনুষঙ্গ। পবিত্র থাকলে শরীর সুস্থ থাকে, মন প্রফুল্ল থাকে এবং কাজকর্মে মন বসে। পরিচ্ছন্ন থাকা মুমিনের বৈশিষ্ট্য। নোংরা, ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত থাকা কোনো মুসল্লির স্বভাব হতে পারে না। দৈনিক সালাত আদায়ের নিমিত্তে মানুষ পরিচ্ছন্ন থাকতে উদ্বুদ্ধ হয়। কর্মস্পৃহা সৃষ্টি হয় এবং অলসতা থেকে মুক্তি মেলে। কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘অতঃপর সালাত সমাপ্ত হলে তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ তালাশ করো।’ (সূরা জুমুআহ : ১০)

সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর প্রশংসা ও পবিত্রতা ঘোষণার পাশাপাশি আল্লাহর প্রতি বান্দার আনুগত্য ও দাসত্ব প্রদর্শিত হয়। আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন শুধু তার ইবাদত করার জন্য। সুতরাং সালাত আদায়ের ক্ষেত্রে অন্য কারো আনুগত্য কাম্য নয়। অহঙ্কার বা বড়ত্বের একমাত্র মালিক আল্লাহ। রাসূল সা: বলেছেন, ‘যার অন্তরে সামান্য পরিমাণ অহঙ্কার আছে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (আবু দাউদ : ৪০৯১) তাই সালাত আদায়কারীর আচরণ উত্তম হওয়া বাঞ্ছনীয়। রাগ, জেদ, ঔদ্ধত্যপূর্ণ স্বভাব, ঈর্ষা প্রদর্শন করা সালাত আদায়কারীর জন্য শোভনীয় নয়।

রাসূল সা: বলেছেন, ‘প্রত্যেক বস্তুরই পরিশোধক যন্ত্র রয়েছে। আর অন্তর পরিষ্কারের যন্ত্র হলো আল্লাহর জিকির।’ (বায়হাকি) আর জিকির তথা আল্লাহকে স্মরণ করার উত্তম মাধ্যম হলো সালাত। সালাতের প্রতিটি পর্যায়ে আল্লাহকে স্মরণ করা হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘এবং আমার স্মরণার্থে সালাত কায়েম করো।’ (সূরা ত্বহা : ১৪। সালাতে আল্লাহর স্মরণের মাধ্যমে আত্মিক পরিশুদ্ধি অর্জিত হয় এবং পাপ-পঙ্কিলতা দূরীভুত হয়। দুনিয়াবি যাবতীয় দুশ্চিন্তা থেকে মানব মন প্রশান্তি লাভ করে। এ মর্মে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি লাভ করে।’ (সূরা রা‘দ : ২৮)

সালাত মানুষকে নিয়মানুবর্তিতা ও সময়নিষ্ঠা শিক্ষা দেয়। দৈনন্দিন সালাত নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করতে হয়, ফলে মুমিন ব্যক্তিগণ সময় সম্পর্কে সচেতন থাকেন। আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের অন্যতম উপায় হচ্ছে একাগ্রতার সাথে সালাত আদায় করা। সালাতের মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর কাছে তাঁর আবেদন পেশ করে তৃপ্তি লাভ করে। আর আল্লাহ তায়ালাও বান্দার আবেদন গ্রহণ করে থাকেন। সুতরাং বান্দাকে অবশ্যই বিনয়ের সাথে সালাতে দাঁড়াতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে বিনীতভাবে দাঁড়াবে।’ (সূরা বাকারা : ২৩৮)। সালাত অবস্থায় বান্দার মন বিভিন্ন দিকে ছোটাছুটি করে। মানব মন কল্পনার রাজ্যে বিচরণ করতে অভ্যস্ত। গভীর মনোযোগের সাথে কোনো কাজে নিয়োজিত না হলে মন স্থির থাকে না। শয়তান সবসময় সালাত নষ্ট করার জন্য মনের মধ্যে বিভিন্ন জিনিসের কল্পনা হাজির করে।

আর এ জন্যই সালাত আদায় করতে হবে একাগ্রতা ও বিনয়ের সাথে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘মুমিনগণ অবশ্যই সফলকাম হয়েছে, যারা নিজেদের সালাতে বিনয়ী।’ (সূরা মুমিনুন : ১-২) সালাতে বিনয়ের ফলে বান্দার মনোযোগ আল্লাহর দিকে স্থির হয়, চক্ষু অবনত থাকে এবং কোনো অঙ্গ নড়াচড়া করে না। রাসূল সা: এক ব্যক্তিকে সালাতরত অবস্থায় দাড়ি নিয়ে খেলতে দেখে বললেন, ‘যদি এ ব্যক্তির অন্তরে আল্লাহর ভয় থাকত, তবে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো স্থির থাকত।’ (বায়হাকি : ৩৩৬৫) হজরত আয়শা রা: থেকে বর্ণিত, ‘রাসূল সা: বলেন, তোমাদের কেউ সালাতে দাঁড়ালে যেন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো স্থির রাখে। কেননা সালাতে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের স্থিরতা সালাত পূর্ণ হওয়ার কারণ।’ (রুহুল মায়ানী)

ব্যক্তি সালাতে অভ্যস্ত হয়ে গেলে তার চরিত্রে সততা ও উদারতার বুনিয়াদ গড়ে ওঠে এবং আদর্শ মানুষে পরিণত হয়। এভাবে ব্যক্তিকেন্দ্রিক মানসিক উৎকর্ষতা অর্জিত হলে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে সবরকমের অন্যায়, অবিচার ও পাপচার দূরীভূত হবে। ইনশাআল্লাহ।

লেখক : শিক্ষক, ইসলামী শিক্ষা, কেসিমডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, দক্ষিণখান, ঢাকা।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us