বুধবার রাত থেকেই গোলাগুলির যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। বৃহস্পতিবার সেই গুলির আঘাতে তিনজন ভারতীয় সেনা নিহত হন। বৃহস্পতিবার রাতে ভারত-পাকিস্তানের জম্মু-কাশ্মীর সীমান্তে লড়াই চরমে পৌঁছেছে। গুলি, মর্টারের পাশাপাশি দূরপাল্লার কামানের ব্যবহারও শুরু হয়ে গিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, কার্গিল যুদ্ধের পরে এত বেশি সময় ধরে কামান বা আর্টিলারি ফায়ার ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে হয়নি।

ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার সকালে। ভারতীয় সেনা বাহিনীর অভিযোগ, বুধবার রাত থেকেই যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে পাকিস্তান প্রথম এলওসি বা লাইন অফ কন্ট্রোলে গুলি চালাতে শুরু করে। ছোড়া হয় মর্টার। ভারতও পাল্টা জবাব দিতে শুরু করে। বৃহস্পতিবার সকালে কাশ্মীরের কুপওয়ারা জেলার নওগাম সেক্টরে পাক মর্টারে নিহত হন দুই ভারতীয় সেনা। অন্য দিকে পুঞ্চ সেক্টরে আরো এক সেনার মৃত্যু হয়। পাঁচ জন ভারতীয় জওয়ান আহত হন। এর পরেই ভারত আক্রমণের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। পাল্টা আঘাত করে পাকিস্তানও।

সেনাবাহিনী সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার রাত থেকে কামান বা আর্টিলারি ফায়ার শুরু করে ভারত। ভারতীয় সেনার সাবেক লেফটন্যান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য আগেই ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছিলেন, ভারত-পাক সীমান্তে গুলিগোলা চলার কিছু নিয়ম আছে। প্রথমে মেশিনগান ফায়ার, তারপর মর্টার, এ ভাবে আক্রমণের তীব্রতা বাড়তে থাকে। তবে আর্টিলারি বা দূরপাল্লার কামান যখন ব্যবহার করা হয়, তখন বোঝা যায় পরিস্থিতি সঙ্কটজনক। বহু বছর পর কাশ্মীরে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে সেই ঘটনাই ঘটছে।

বৃহস্পতিবার বিকেলেই ভারত জানিয়েছিল, তিন সেনা সদস্যের প্রাণের জবাব দেয়া হবে পাকিস্তানকে। বস্তুত তার পর থেকেই গোলাগুলির পরিমাণ অনেক বেড়েছে। পাকিস্তানও একই ভাবে দূরপাল্লার কামান ব্যবহার করছে। তবে পাকিস্তানের দিকে এখনো কোনো হতাহতের খবর মেলেনি।

ভারতীয় সেনা সূত্রের বক্তব্য, শীতের ঠিক আগে প্রতিবছরই জম্মু-কাশ্মীরের ভারত-পাক সীমান্তে গোলাগুলি একটু বেশি চলে। কারণ এই সময় পাকিস্তানের সীমান্ত দিয়ে বহু উগ্রবাদী ভারতে ঢোকে। এ বারও সে কারণেই পাক ফৌজ গোলাবর্ষণ করে ভারতীয় সেনার দৃষ্টি অন্য দিকে ঘোরানোর চেষ্টা করছিল বলে অভিযোগ। ভারতও পাল্টা জবাব দিতে শুরু করে। যার জেরে তিনজনের মৃত্যুও হয়।

পাকিস্তান অবশ্য নতুন করে তৈরি হওয়া সীমান্ত সঙ্কট নিয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো বিবৃতি দেয়নি। লাদাখে চীনের সঙ্গে ভারতের সংঘাত এখনও মেটেনি। কোনও সমাধানসূত্র পাওয়া যায়নি। তারই মধ্যে পাকিস্তানের সঙ্গে নতুন করে তৈরি হওয়া এই সঙ্ঘাত নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, গত এক বছরে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে তিন হাজার বার যুদ্ধবিরতি চুক্তি লঙ্ঘিত হয়েছে। শুধু সেপ্টেম্বরেই লঙ্ঘন হয়েছে ৪৭ বার। তবে বৃহস্পতিবার রাত থেকে যে লড়াই শুরু হয়েছে, তা আগের ঘটনাগুলোর চেয়ে অনেকটাই আলাদা।

সূত্র : ডয়চে ভেলে