করোনার কারণে শিশুর ডায়াবেটিস!
করোনার কারণে শিশুর ডায়াবেটিস! - ছবি : সংগৃহীত
ডায়াবেটিক শিশুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে কোভিড-১৯ রোগের যোগসূত্র থাকতে পারে। নতুন একটি গবেষণায় এমনই সতর্ক করেছেন চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা। সেখানে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ২৩ মার্চ থেকে ৪ জুন লন্ডনের হাসপাতালগুলোতে টাইপ ১ ডায়াবেটিস আক্রান্ত শিশুদের সংখ্যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, করোনা ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন বা এস-প্রোটিন ডায়াবেটিসের মতোই অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন তৈরির কোষকে আক্রমণ ও ধ্বংস করতে পারে।
গবেষণাপত্রটির লেখক ইম্পেরিয়াল কলেজ হেল্থকেয়ার এনএইচএস ট্রাস্টের ডাঃ ক্যারেন লোগান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত মনে করা হয় যে, কোভিড ১৯ রোগে শিশুদের গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি কম। কিন্তু শিশুরা ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার পর সম্ভাব্য স্বাস্থ্য জটিলতাগুলো বিবেচনা করার প্রয়োজন’।
বিশ্বের অন্যান্য দেশে মহামারী চলাকালীন সময়ে বহু শিশুর মধ্যে টাইপ ১ ডায়াবেটিস ধরা পড়েছিল। তবে করোনার সঙ্গে এর যোগসূত্র এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
টাইপ ১ ডায়াবেটিস আক্রান্ত শিশুরা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। গবেষণার সহ-গবেষক রেবেকা আনসওয়ার্থ বলেন, ‘টাইপ ১ ডায়াবেটিসের চিকিৎসা ইনসুলিন ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে দেওয়া হয়। তবে, রোগটি প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করে চিকিত্সা না করা হলে শিশুরা দ্রুত অসুস্থ হতে পারে। রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়লে ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস (ডিকেএ) রোগের ঝুঁকি থাকে। এই প্রাণঘাতী অবস্থায় শরীর খুব দ্রুত ফ্যাট ভাঙতে শুরু করে।
গবেষক আনসওয়ার্থের মতে, ‘এজন্য টাইপ-১ ডায়াবেটিসের প্রাথমিক লক্ষণগুলি সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। শিশু খুব তৃষ্ণার্ত বোধ করছে, ঘনঘন প্রস্রাবের জন্য বাথরুমে যাচ্ছে, ক্লান্ত বোধ করছে ও ওজন কমছে— এই লক্ষণগুলির ব্যাপারে মনোযোগী হওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে প্রাথমিক অবস্থায় টাইপ ১ ডায়াবেটিস শনাক্তকরণ ও চিকিৎসা সম্ভব হবে।
ডাঃ লোগান আরো বলেন, ‘আমাদের গবেষণায় করোনা মহামারীকালে শিশুদের টাইপ-১ ডায়াবেটিস গত বছরের তুলনায় অস্বাভাবিক বেশি পাওয়া গিয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু শিশু করোনায় আক্রান্ত ছিল’।
তবে গবেষণাটি যেহেতু কেবল যুক্তরাজ্যের একটি অঞ্চলে সীমাবদ্ধ ছিল, তাই শিশুদের ডায়াবেটিসের সঙ্গে কোভিড ১৯ রোগের নির্দিষ্ট সংযোগ রয়েছে কি না, তা প্রমাণের জন্য আরো গবেষণার প্রয়োজন। ‘ডায়াবেটিস কেয়ার’ জার্নালে সম্প্রতি গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে।
সূত্র : বর্তমান
ডায়াবেটিস এবং উচ্চরক্তচাপে খাবার স্যালাইন
ডা: আব্দুল হাফিজ
ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে শরীর পানি ও লবণ হারায়। খাওয়ার স্যালাইন সেই পানি-লবণের ঘাটতি পূরণ করে। খাবার স্যালাইনে (ওআরএস) নিম্নলিখিত উপাদান নির্দিষ্ট পরিমাণে থাকে : ১. পানি, ২. সোডিয়াম, ৩. পটাশিয়াম ও ৪. গ্লুকোজ বা শর্করা।
এই সোডিয়াম (লবণ) এবং গ্লুকোজ থাকায় অনেক সময় উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের রোগীরা ডায়রিয়ায় এই খাওয়ার স্যালাইন খাবেন কি না, তা নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েন।
কেননা উচ্চচাপের বা প্রেশারের রোগীদের লবণ কম খেতে বলা হয়। পাশাপাশি ডায়াবেটিসের রোগীদের গ্লুকোজ বা চিনি খেতেও নিষেধ করেন। কিন্তু খাওয়ার স্যালাইনের প্যাকেটে তো লবণ ও গ্লুকোজের মিশ্রণ থাকে।
এখানে গ্লুকোজের প্রধান কাজ অন্ত্রে এ লবণ শোষণে সাহায্য করা। প্রতি লিটার খাওয়ার স্যালাইনে গ্লুকোজের পরিমাণ ২০ গ্রামের বেশি নয় এবং এর প্রায় পুরোটাই অন্ত্রে লবণ শোষণে ব্যবহৃত হয়। তাই ডায়রিয়ায় স্যালাইন খেলে ডায়াবেটিসের রোগীর রক্তে শর্করা বাড়বে এমন ধারণা ঠিক নয়। এ ক্ষেত্রে স্যালাইন মূলত লবণের ঘাটতি পূরণ করার কাজে ভূমিকা রাখে। শরীরের স্বাভাবিক কাজকর্ম বজায় রাখতে লবণের ভারসাম্য রক্ষা করাটা খুবই জরুরি। আর ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে আমরা প্রচুর লবণ হারাই। তাই উচ্চরক্তচাপের রোগীরও ডায়রিয়া হলে স্যালাইন খেতে হবে, এতে লবণের আধিক্য হবে না বা রক্তচাপও বাড়বে না।
ডায়রিয়া হলে স্যালাইন খাওয়ার মাধ্যমে পানি ও লবণের ঘাটতি দ্রুত পূরণ না করলে শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়বে, লবণের অভাবে নিস্তেজ হয়ে পড়বে। পানিশূন্যতা থেকে কিডনি অকার্যকারও হতে পারে। যেসব ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপের রোগীর আগে থেকেই কিডনিতে সামান্য সমস্যা আছে, ডায়রিয়ায় তাদের আরো বেশি জটিলতা হতে পারে। তাই ডায়রিয়া হলে সবাইকেই স্যালাইন খেতে হবে। এ নিয়ে কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্বের অবকাশ নেই। ডায়াবেটিসের রোগীরা সেই সাথে বারবার রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করে দেখবেন ও উচ্চরক্তচাপের রোগীরা রক্তচাপ মাপবেন।