ভারতে উৎপাদিত গোলাবারুদে গচ্ছা ৯৬০ কোটি রুপি
ভারতে উৎপাদিত গোলাবারুদে গচ্ছা ৯৬০ কোটি রুপি - ছবি : সংগৃহীত
গত পাঁচ থেকে ছয় বছরে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরি বোর্ড (ওএফবি) মানহীন গোলাবারুদ ও মাইন সরবরাহ করার কারণে ভারতয়ি কোষাগার ৯৬০ কোটি ডলার ক্ষতির মুখে পড়েছে। সেনাবাহিনীর একটি অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনী জানায়, ওএফবির তৈরী সরঞ্জামের কারণে ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত চার শতাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে, ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ওই নিরীক্ষা অনুযায়ী, ২০১৪ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৯ সালের এপ্রিল পর্যন্ত তারা ৬৫৮.৫৮ কোটি রুপির গোলাবারুদ তুলে রেখেছে। ৩০৩.২৩ কোটি রুপির মূল্যমানের মাইনও তুলে রাখা হয়েছে। ২০১৬ সালে মহারাষ্ট্রের পুলগাঁওয়ে একটি ডিপোতে বিস্ফোরণ ঘটার পর মাইনগুলো আর ব্যবহার করা হয়নি।
ভারতীয় সেনাবাহিনী জানায়, এসব সরঞ্জাম কেনায় যে অর্থের অপচয় হয়েছে, তা দিয়ে ১০০টি ১৫৫ এমএম মিডিয়াম আর্টিলাটি গান কেনা যেত।
প্রতিরক্ষা উৎপাদনের প্রতিরক্ষা বিভাগ মন্ত্রণালয়ের আওতায় কাজ করে ওএফবি। তারা প্রতিরক্ষা উৎপাদনের অন্যতম প্রাচীন রাষ্ট্রয়ত্ত প্রতিষ্ঠান।
ওবিএফের কারখানা রয়েছে ৪১টি। তাদের কার্যক্রম ৫টি ভাগে বিভক্ত : অ্যামুনেশন অ্যান্ড এক্সপ্লোসিভস ফ্যাক্টরিজ, ভেহেক্যাল অ্যান্ড উইপন্স, ম্যাটারিয়াল অ্যান্ড কম্পোন্যান্টস, আর্মার্ড ভেহিক্যালস, ইকুইপমেন্ট ফ্যাক্টরিজ।
সেনাবাহিনী তার মূল্যায়ন প্রতিবেদনে জানায়, তারা ওএফবিকে আরো কার্যকর করার সরকারি উদ্যোগকে স্বাগত জানায়।
অন্যান্য দেশের প্রত্যাখ্যান
সেনাবাহিনী আরো জানায়, ভারতীয় অস্ত্র কারখানার গোলাবারুদ ও অন্যান্য সরঞ্জাম বাকিতে বিক্রি করতে চাইলেও অনেক দেশ তা গ্রহণ করতে অস্বীকার করেছে। তারা জানায়, মান, কারখানার কার্যপ্রণালী ও বিক্রয়-পরবর্তী পরিষেবায় অকার্যকারিতার কারণেই এসব দেশ ভারতীয় পণ্য ক্রয় করতে চায় না।
ভারতীয় সেনাবাহিনী জানায়, ওএফবি স্থাপনাগুলোতে জবাবদিহিতার অভাব, উৎপাদনের মান না থাকায় ২০১৪ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত ৪০৩টি দুর্ঘটনা ঘটে। এতে বিমান প্রতিরক্ষা, সাজোয়াঁ বাহিনী, পদাতিক বাহিনী, গোলন্দাজ বাহিনী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসব দুর্ঘটনায় ২৭ জন প্রাণ হারায় বলেও প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
মূল্যায়ন প্রতিবেদনে ওএফবির উৎপাদিত পণ্যের অত্যাধিক দামের কথাও বলা হয়।
সূত্র : দি প্রিন্ট
ভারতে বন্ধ অ্যামনেস্টির কার্যক্রম
এনডিটিভি
ভারত সরকার অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেছে জানিয়ে দেশটিতে সব কার্যক্রম স্থগিত করেছে আন্তর্জাতিক এ মানবাধিকার সংস্থা। গতকাল মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, ভারতে তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার বিষয়টি তারা জানতে পারে গত ১০ সেপ্টেম্বর। দেশটির সরকারের এ পদক্ষেপের ফলে সেখানে অ্যামনেস্টির মানবাধিকার সংক্রান্ত সব প্রচারকাজ ও গবেষণা থমকে গেছে। বেশির ভাগ কর্মীকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে অ্যামনেস্টি।
এ সংস্থার ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জুলি ভেরার বলেন, ‘ভারত সরকারের এ ভয়ঙ্কর ও লজ্জাজনক পদক্ষেপের ফলে সেখানে মানবাধিকার বিষয়ক আমাদের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো আপাতত থমকে গেছে। তবে ভারতে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে আমাদের অঙ্গীকার এবং সম্পৃক্ততার অবসান তাতে হয়নি। সামনের দিনগুলোতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল কিভাবে ভারতের মানবাধিকার আন্দোলনে ভূমিকা রাখতে পারে, তা আমরা খুঁজে বের করব।’
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ভারতের ‘ফরেইন কন্ট্রিবিউশন অ্যাক্টের’ আওতায় নিবন্ধন নেয়নি- এই যুক্তিতে সরকার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। ভারতে কোনো এনজিওর বিদেশী তহবিল নিতে গেলে ওই আইনে নিবন্ধিত হতে হয়। তবে অ্যামনেস্টি দাবি করেছে, ভারতীয় ও আন্তর্জাতিক সব নিয়ম মেনেই তারা সেখানে কাজ করে আসছে। “উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও অলীক অভিযোগের ভিত্তিতে ভারত সরকার মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মধ্যে যে ‘ডাইনি শিকারে’ নেমেছে, এটা তার সর্বশেষ উদাহরণ।”
অ্যামনেস্টি বলছে, গত ফেব্রুয়ারিতে দিল্লির দাঙ্গায় মানবাধিকার লঙ্ঘনে সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল তাদের রিপোর্টে। জম্মু ও কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা তুলে দেয়া নিয়েও তারা প্রশ্ন তুলেছিল। তারই পাল্টায় ভারত সরকারের এসব পদেক্ষেপ। ‘গত দুই বছরে ভারতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের বিরুদ্ধে একের পর এক ব্যবস্থা এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ করার এ পদক্ষেপ আকস্মিক কোনো ঘটনা নয়। দিল্লির দাঙ্গা এবং জম্মু ও কাশ্মিরে সরকারের ভূমিকায় স্বচ্ছতা দাবি করায় সরকার এবং সরকারি সংস্থাগুলোর ক্রমাগত হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।’
ভারতে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের নির্বাহী পরিচালক অবিনাশ কুমার বলেছেন, অবিচারের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ হওয়া ছাড়া আর কিছুই তারা করেননি। বিদেশী তহবিল নেয়ার ক্ষেত্রে অনিয়মের অভিযোগে অ্যামনেস্টির বিরুদ্ধে তদন্ত করছে ভারত সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, অ্যামনেস্টি সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ আকারে অর্থ নিয়েছে, যা ভারতীয় আইনে অলাভজনক কোনো প্রতিষ্ঠান নিতে পারে না।
এর আগেও ২০১৭ সালে একবার অ্যামনেস্টির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট অবরুদ্ধ করেছিল ভারত সরকার। সে সময় আদালতে গিয়ে অ্যামনেস্টি কার্যক্রম চালানোর অনুমতি পেলেও তাদের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়া হয়। গত বছর অ্যামনেস্টির বিরুদ্ধে একটি মামলাও দায়ের করে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো। সেই মামলায় বলা হয়েছে, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের যুক্তরাজ্য শাখা ভারত সরকারের অনুমতি না নিয়েই এফডিআই আকারে ১০ কোটি পাউন্ড তাদের ভারত শাখায় পাঠিয়েছে। এ ছাড়া আরো ২৬ কোটি পাউন্ড অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ভারত শাখায় পাঠানো হয়েছে যুক্তরাজ্য থেকে, সেখানেও ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ করা হয়েছে মামলায়।