কূটনীতিতে ভারতকে যেভাবে হারিয়ে দিয়েছে শ্রীলঙ্কা
রাজাপাকসা ও মোদি - ছবি : সংগৃহীত
শ্রীলঙ্কার তামিল সমস্যার ঐতিহাসিক ভূরাজনৈতিক মাত্রা রয়েছে।কূটনৈতিক ময়দানে ভারত হলো স্টার পারফরমার। ভারতের হস্তক্ষেপ বিভিন্ন সময়ে নানা অবয়ব লাভ করেছে। ১৯৭০-এর দশকের শেষ দিক থেকে পাশ্চাত্যপন্থী শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট জে আর জয়াবর্ধনের (১৯৭৮-৮৯) ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য তামিল সমস্যাকে ব্যবহার করেছে।
কিন্তু শ্রীলঙ্কা বেশ কূটনৈতিক দক্ষতার সাথে ভারতের অনাধিকারচর্চামূলক নীতি এড়িয়ে যেতে সমর্থ হয়।১৯৮০-এর দশকের মধ্যভাগে জয়াবর্ধমনে অত্যন্ত মেধার সাথে তামিল জঙ্গি গ্রুপগুলোর গুরুর ভূমিকা ত্যাগ করে তাদের খতম করতে ভারতকে প্রলুব্ধ করতে সক্ষম হন।
পরের দুই দশকে ভারতের হিসাবে ভূরাজনীতি গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে, যা ২৬ বছরের লড়াইয়ের পর ২০০৮ সালে তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপগুলোতে সফলভাবে পরাজিত করতে কলম্বোর জন্য সহায়ক হয়।
মোদি সরকারের প্রবেশ। ২০১৪ সালে ভূরাজনীতি প্রায় রাতারাতি ফিরে আসে। এর প্রধান কারণ মোদি সরকারের পররাষ্ট্রনীতিতে চীনের বিরুদ্ধে বৈরিতা প্রবেশ করে। ২০১৫ সালের জানুয়ারি শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিদেশী শক্তিগুলো রাজাপাকসার কট্টর জাতীয়তাবাদী নেতৃত্ব উৎখাতের জন্য জোট বাঁধে। দিল্লি ও ওয়াশিংটনের দৃষ্টিতে রাজাপাকসা ছিলেন চীনপন্থী।
এই সরকার পরিবর্তন ছিল অনন্য ঘটনা। এতে তামিল ন্যাশনাল অ্যালায়েন্সের (টিএনএ) অধীনে তামিলরা কলম্বোতে সিংহলি-নেতৃত্বাধীন প্রতিষ্ঠিত সরকারকে উৎখাত করে ফেলে। তবে ভূরাজনৈতিক প্রকল্পের আদর্শ উপমা এই পরিবর্তন কিন্তু তামিলদের স্বার্থে হয়নি। ২০১৫ সালের সরকার পরিবর্তন অল্প সময়ের মধ্যেই তামিলদের সমস্যায় ফেললেও দিল্লি ও ওয়াশিংটন শ্রীলঙ্কার মাটিতে তাদের অবস্থান জোরদার করার সিদ্ধান্ত নেয়।এর একটি কারণ চীনকে সংযত করতে যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল গ্রহণ।
নতুন এজেন্ডা হলো রাজাপাকসা সরকারকে কোয়াডে (যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, ভারত ও অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে জোট) অন্তর্ভুক্ত করা। কিন্তু শ্রীলঙ্কার জাতীয়তাবাদীরা এশিয়ার বেশির ভাগ দেশের মতো কোয়াড বা বেইজিংয়ের মধ্যে কোনো পক্ষ নিতে আগ্রহী হয়নি।
এই প্রেক্ষাপটে কলম্বোর ওপর তামিল সমস্যার চাপ উপস্থিত হয়। শ্রীলঙ্কার মানবিক হস্তক্ষেপ হলো একটি ভূরাজনৈতিক এজেন্ডার অনুসরণ। কিন্তু মহিন্দা রাজাপাকসা গণতন্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার। তিনি ৭১ ভাগ ম্যান্ডেট পেয়ে সরকার গঠন করেছেন। তিনি তার ক্ষমতায় ফেরার জন্য দিল্লি বা ওয়াশিংটনের কাছে ঋণী নন।
গত সপ্তাহের ভার্চুয়াল শীর্ষ বৈঠক প্রকাশ করে যে শ্রীলঙ্কার জাতীয়তাবাদ দিল্লির অনধিকার হস্তক্ষেপ নীতির বিরুদ্ধে কঠিন অবস্থানে রয়েছে। দিল্লি অবশ্য বৌদ্ধবাদী সম্পর্ক বিকাশের জন্য ১৫ মিলিয়ন ডলারের মঞ্জুরির টোপ ফেলেছে।কিন্তু শক্তিশালী বৌদ্ধবাদ বিকাশে ভারতীয় উদ্দেশ্য নিয়ে কলম্বো এখনো বেশ সতর্ক। ২০১৪-১৫ সময়কালের ক্ষমতাসীন সরকারকে অস্থিতিশীল করার স্মৃতি এখনো সজীব রয়ে গেছে।
শ্রীলঙ্কার অভ্যন্তরীণ বিষয়াদিতে যুক্তরাষ্ট্র-ভারতীয় হস্তক্ষেপ সামাল দিয়ে অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে কলম্বো এখন অনেক ভালো অবস্থানে আছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলে কলম্বোকে অন্তর্ভুক্ত করা কোয়াডের জন্য খুবই দরকারি বিষয।শ্রীলঙ্কায় আমেরিকান সামরিক উপস্থিতি ভারত মহাসাগরের নৌচলাচল রুট নিয়ন্ত্রণ (যা চীনের বৈদেশিক বাণিজ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ) করতে তথাকথিত আইল্যান্ড চেইন কৌশলকে এগিয়ে নেবে।
গত বছর থেকে শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তারা শ্রীলঙ্কা সরকরকে হুমকি দিয়ে আসছে যে কলম্বো যদি ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতে সহযোগিতা না করে, তবে ২০০৭-০৮ সময়কালে তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মানবাধিকার রেকর্ড তাদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হবে।