শিগগিরই ক্ষমতাচ্যুত হবেন মুহিউদ্দিন!
মহিউদ্দিন ইয়াসিন - ছবি সংগৃহীত
মালয়েশিয়র সাবাহ রাজ্যে জেতার পর দৃশ্যত প্রধানমন্ত্রী মহিউদ্দিন ইয়াসিনের অবস্থান মজবুত হয়েছে বলে মনে হতে পারে। কিন্তু সাবাহর মুখ্যমন্ত্রী পদ নিয়ে বারিসান ন্যাশনাল আর পেরিকাতান ন্যাশনালের মধ্যে যে টানাপড়েন দেখা দেয় তা একপর্যায়ে জোটের মধ্যে নতুন ভাঙনের ইঙ্গিত সৃষ্টি করে। এর মধ্যে উমনোর যুবপ্রধান আশরাফ ওয়াজদি দুসুকি পেরিকাতান সরকারে থাকা এবং তাদের সাথে জোটবদ্ধ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি ফেডারেল সরকার ও বিভিন্ন রাজ্য সরকার গঠনের উদাহরণ টেনে বলেছেন, উমনো জোটের মধ্যে সবচেয়ে বড় দল হওয়ার পরও বেরাসাতুই মূলত সরকারের সব সুবিধা পাচ্ছে। অথচ দলটির নির্বাচিত সংসদ সদস্য মাত্র ছয়জন। বাকিরা উমনো থেকে অথবা পিকেআর দিয়ে লম্ফ দিয়ে দল পাল্টে সেখানে আশ্রয় নিয়েছেন। বর্তমান ফেডারেল সরকার গঠন এবং এর পরের উপনির্বাচনগুলোতে উমনোর সমর্থনের ওপর ভিত্তি করে জয়ী হয়ে বেরাসাতুই ক্ষমতার মূল সুবিধা ভোগ করছে।
যুব উমনো প্রধান আশরাফ ওয়াজদি দুসুকি যে বক্তব্য দিচ্ছেন সেই যুক্তিতেই মহিউদ্দিন ইয়াসিনের সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে ২০ থেকে ২২ জন উমনো এমপি আনোয়ারকে সমর্থন দেয়ার কথা বলছিলেন। এসব এমপির পেছনে দলের প্রভাবশালী নেতা নাজিব রাজাক ও আহমদ জাহিদ হামিদির সমর্থন রয়েছে বলেও ধারণা করা হয়।
এর আগে আনোয়ারের সরকার গঠনের মতো সমর্থন থাকার কথা ঘোষণার পর উমনো ও বারিসান জোট প্রধান আহমদ জাহিদ হামিদি বলেছিলেন, আনোয়ারের সরকার গঠনের ব্যাপারে অনেক উমনো ও বিএন এমপির সমর্থন রয়েছে। তিনি এও বলেছেন, অনেক সংসদ সদস্য আনোয়ারকে নতুন সরকার গঠনের জন্য তাদের মধ্য থেকে সমর্থন জানিয়েছেন। এটি যারা করেছেন তাদের অবস্থানকে তিনি সম্মান করছেন। জাহিদ জোর দিয়ে বলেন, উমনো ও বিএন আনুষ্ঠানিকভাবে পেরিকাতান ন্যাশনাল (পিএন) জোটের অংশ নয়। যদিও তার পরের অবস্থান জোরালোভাবে এর সাথে মেলে না।
আনোয়ার ইবরাহিম তার বক্তব্যে সঠিক সংখ্যা এবং সংসদ সদস্যদের নাম উল্লেখ না করেই বলেন, তারা বেশির ভাগই মালয়-মুসলিম এবং ইয়াং ডি-পার্টুয়ান আগোংয়ের সাথে দেখা করে তাদের কথা বলতে চান। আমানাহ এবং ডিএপি আনোয়ারের পক্ষে আগেই সমর্থন ঘোষণা করে, তবে সারওয়াকের গাবুনগান পারটি সারাওয়াক বা জিপিএস বলেছে, তারা দৃঢ়ভাবে মুহিউদ্দিনের পেছনে রয়েছে।
আনোয়ারের ঘোষণার পর ইয়াং ডি-পার্টুয়ান আগোং জাতীয় হার্ট ইনস্টিটিউটে হাসপাতালে ভর্তি হন। এ কারণে আনোয়ারের সাক্ষাত প্রার্থনার আবেদনে তিনি সম্মতি দিয়েও তা স্থগিত রেখেছেন বলে রাজপ্রাসাদ থেকে বলা হয়। কিন্তু রাজা রাজপ্রাসাদে ফেরার পর তিনি আনোয়ারকে সাক্ষাতকার দেবেন এমন কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না। বরং একটি বক্তব্য প্রাসাদ থেকে আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে যেখানে বলা হতে পারে, সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনাস্থা প্রস্তাব সংসদেই উত্থাপিত হতে পারে। এ ছাড়া সরকারের উত্থাপিত বিল পাস না হলে সেটিও সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর একটি বিবেচনা হতে পারে। মাহাথির মোহাম্মদ আগে থেকেই প্রধানমন্ত্রীর ব্যাপারে অনাস্থা প্রস্তাব আনার কথা বলছিলেন। কিন্তু সংসদের মুহিউদ্দিন সমর্থক স্পিকার সে সুযোগ দিচ্ছেন না। সংসদে সরকারের কোনো বিল পাস না হওয়ার মতো অবস্থা দেখা দিলে সে ধরনের বিল তোলা থেকেও সরকার বিরত থাকতে পারে।
আনোয়ার ইবরাহিম সংসদে তার সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকার দাবি করার পর আইনি পথে সরকার গঠন এবং দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী তিনি হতে পারবেন কি না তা নিয়ে সংশয় এখন আরো বেড়েছে। মালয়েশিয়ার সাংবিধানিক আইন কমিটির সহ-সভাপতি অ্যান্ড্রু খু বলেছেন, ‘রাজা তাকে সাক্ষাতকার দেয়ার আগ পর্যন্ত আনোয়ারকে অপেক্ষা করতে হবে।’ রাজা হাসপাতাল থেকে ফেরার পর মনে হচ্ছে তিনি আনোয়ারকে সাক্ষাতকার দেয়ার বিষয় বিবেচনা করছেন না।
আগেই ধারণা করা হয়েছিল, আনোয়ারের ঘোষণা কার্যকর করার ক্ষেত্রে যেকোনো বিলম্বে মুহিউদ্দিনের সমর্থন ফিরে পাওয়ার অবকাশ সৃষ্টি হবে। এর জন্য তাকে প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাথে বোঝাপড়ায় যেতে হবে। অন্য দিকে, অপেক্ষার সময় দীর্ঘায়িত হলে আনোয়ারের সমর্থন পিছলে যাওয়ার একটি আশঙ্কা থেকে যেতে পারে। গত এক সপ্তাহের প্রতিদিনের ঘটনা পর্যবেক্ষণে তেমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।