এখন কি আনোয়ারকে সমর্থন করবেন মাহাথির?
আনোয়ার ও মাহাথির - ছবি সংগৃহীত
মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের জের ধরে বিশ্লেষকদের মতে, সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সরকার গঠনের ঘোষণার পর দুটি বিষয় ঘটার সম্ভাবনা এখনো রয়েছে। যদি উমনোর একটি অংশ অথবা পুরো বারিসান ন্যাশনাল পেরিকাতান সরকার থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে তাহলে প্রধানমন্ত্রী সংসদ ভেঙে দিতে রাজাকে বলতে পারেন। রাজা সংসদ বিলুপ্তিতে সম্মতি দিতে পারেন। অথবা রাজা এই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে সংসদের আস্থাভাজন নতুন একজনকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ করতে পারেন। অবশ্য বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেষ পর্যন্ত চাইবেন ক্ষমতা ধরে রাখতে। সংসদ সদস্যদের সমর্থন পেতে তিনি বিকল্প পথে হাঁটতে পারেন। সেরকম রাস্তা এখন অবশ্য তেমন দেখা যাচ্ছে না।
মোদ্দাকথা হলো, পাকাতানের পতনের জন্য ‘শেরাটন মুভ’ যেভাবে ঘটেছিল আনোয়ার ইবরাহিম একইভাবে সরকার গঠন করতে পারেন। নৈতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হোক বা না হোক ‘শেরাটন মুভ ’ আবার ঘটতে পারে এ কারণে যে তাতে আইনি কোনো বাধা নেই। এটি সরকার পরিবর্তনের একটি নজিরে পরিণত হতে পারে। গত ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে, তৎকালীন পিকেআর উপ-প্রধান আজমিন আলী পিএনকে সমর্থন করার জন্য দলটির ১০ জন সংসদ সদস্যকে বের করে এনে এ ঘটনায় তাদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তখন এক ভয়াবহ রাজনৈতিক সঙ্কট শুরু হয় এবং পিএইচের শাসনের পতন ঘটে এবং মুহিউদ্দিনের নেতৃত্বে বর্তমান জোট ক্ষমতায় বসে। শেরাটন মুভের সময় রাজা এমপিদের মতামত নিয়ে মুহিউদ্দিন ইয়াসিনকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছিলেন। রাজা শেষ পর্যন্ত এবারো সেটি করতে পারেন। সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব অনুমোদন অথবা কোনো বিল পাসে সরকারের ব্যর্থতা অথবা বারিসান ন্যাশনাল বা উমনো/বারিসানের একদল এমপি প্রকাশ্য সংবাদ সম্মেলন করে তাদের সমর্থনের কথা ঘোষণা করলেও রাজা নতুন কাউকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করতে পারেন।
তবে এই হিসাব-নিকাশও নানা কারণে জটিল হয়ে গেছে। মাহাথির মোহাম্মদ আনোয়ারের এই ঘোষণাকে ২০০৮ সালের ঘোষণার সাথে তুলনা করেছেন। তিনি আনোয়ারের ক্ষমতায় যাওয়ার পথে বাধা সৃষ্টির ঘুঁটি এখনো সাজিয়ে চলেছেন বলে মনে হয় তার এই কথায়। তবে ৯৫ বছর বয়সী এই নেতা তার বিশ্বাসযোগ্যতার অনেকখানি ক্ষতি করেছেন। তিনি ক্ষমতায় আসা-যাওয়া নিয়ন্ত্রণে তার হাতে থাকা অনেক ঘুঁটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন এর অতি ব্যবহারের কারণে। এবার মাহাথির মোহাম্মদ তার ব্লকের ১৮ জন এমপির সমর্থন আনোয়ার পাবেন না এমন ইঙ্গিতই দিয়েছেন। ডিএপি বলেছে, দলটি বারিসানের সাথে কাজ করবে না। তার অর্থ হলো- উমনো বা বারিসান আনোয়ারকে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন দিলে সে ক্ষেত্রে ডিএপি এই সমীকরণে থাকবে না। এক্ষেত্রে মুহিউদ্দিন ডিএপি ও ওয়ারিসানকে নিয়ে নতুন এক জোট গঠন করার চেষ্টা নিতে পারেন। সেটি সংখ্যাগরিষ্ঠতার পর্যায়ে চলে যেতেও পারে। তবে এ ধরনের মেরুকরণে কে সরকার গঠন করবে তা নির্ভর করবে পাস অথবা জিপিএসের ওপর। দুই দলেরই ১৮ জন করে সদস্য রয়েছে। নতুন সরকার গঠনে এসব জটিল সমীকরণের কারণে নির্বাচনই অনিবার্য হয়ে উঠতে পারে বলে মনে হয়।
আর মালয়েশিয়ানদের সামনে একটি নতুন নির্বাচন দেয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। সেটি হলে অবশ্য ঘটনা ভিন্নদিকে মোড় নেবে। অনেকের মতে, বর্তমান সময়ে সর্বোত্তম হলো- একটি নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠান করা এবং জনগণকে সরকার বেছে নেয়ার সুযোগ দেয়া।