নতুন নির্বাচনের পথে মালয়েশিয়া!

আনোয়ার ইব্রাহিম ও মুহিউদ্দিন - ছবি সংগৃহীত
মালয়েশিয়ায় আবার নতুন সমীকরণ শুরু হয়ে গেছে। আকস্মিকভাবে মুহিউদ্দিন ইয়াসিন সরকারের নেতৃত্ব পাওয়ার পর এমন কিছু কাজ করেছেন যা পরিস্থিতিকে তার জন্য জটিল করে তুলেছে। তিনি চেয়েছিলেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী যারা রয়েছেন সবাইকে সাইডলাইনে ফেলে দিতে। মাহাথিরকে তিনি পূত্রসহ দল থেকে বের করে দিয়েছেন। নাজিব রাজাককে দুর্নীতি মামলায় শাস্তি নিশ্চিত করে রাজনীতি থেকে বিদায়ের ব্যবস্থা করেছেন। জাহিদ হামিদির মামলাও চলমান রয়েছে। যেকোনো সময় দণ্ড হতে পারে। আনোয়ার ইবরাহিমকে রাজা যে ক্ষমা প্রদর্শন করেছিলেন তার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে মামলা করার ব্যবস্থা হয়েছে। ডিএপির প্রধান গুয়াং এং-এর বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা নতুন করে চালু করে দিয়েছেন।
রাজনীতির এত এত ক্ষমতাধর ব্যক্তিকে কুপোকাত করতে গেলে পায়ের নিচের মাটি যে সরে যাবে সেই হিসাব মুহিউদ্দিন ইয়াসিন কতটা করতে পেরেছিলেন তা স্পষ্ট নয়। তবে এবার উমনো ও পাস সরকারের প্রতি আনুষ্ঠানিক সমর্থন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিলেও ভেতরে ভেতরে তাদের শীর্ষ নেতারা মুহিউদ্দিনের বিদায়ের আয়োজনের সাথে সরবে-নীরবে যুক্ত বলে মনে হয়। ফলে বলা যায়, মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে বড় ধরনের ঝাঁকুনি সমাগত।
নতুন পরিস্থিতিতে হয়তো বা আনোয়ার প্রধানমন্ত্রী হয়ে মালয় প্রধান অন্তর্ভুক্তিমূলক একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া সংহত করবেন। অথবা সাবাহ রাজ্যের মতো একটি অপরিপক্ব নির্বাচন আসন্ন হবে। কোভিড-১৯ এ বিপর্যস্ত অর্থনীতির কারণে এ রাস্তাটি অনভিপ্রেত মনে হতে পারে। তবে মালয়েশিয়ান ডিপ স্টেট যদি আনোয়ারকে কোনোভাবেই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে না চান তবে সেটি ঘটারই সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও আনোয়ার ঘনিষ্ঠ অনেকের মতে, মালয়েশিয়ার সুলতানরা এখন আনোয়ারের ক্ষমতার পথে সেভাবে বাধা হতে চাইছেন না। এটি আরো স্পষ্ট হবে রাজার ভবিষ্যত সিদ্ধান্তে।
রাজা নির্বাচনের দিকে যেতে চাইলেও দেশটির বর্তমান মেরুকরণ থাকবে বলে মনে হয় না। যুব উমনোর প্রধান যেদিকে ইঙ্গিত দিয়েছেন সেটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। উমনো এবং বেরাসাতুর ভোট ভিত্তি অভিন্ন মালয় ভোটাররা। উমনোর রয়েছে অর্র্ধশত বছরের একটি নেটওয়ার্ক, সেই তুলনায় বেরাসাতুর সমৃদ্ধ কোনো ভোট-ভিত্তি নেই। মাহাথিরের প্রভাবের ওপর ভিত্তি করে দলটি সংঘঠিত হয়েছিল। এখন তিনি নতুন একটি দল গঠন করেছেন। ফলে উমনো চাইবে বারিসানের জোটভুক্ত দলগুলোর সাথে পাসকে নিয়ে নির্বাচনী জোট বা সমঝোতা করে পরের নির্বাচনে যেতে। অন্যদিকে পাকাতান হারাপান তার জোটবদ্ধতা বজায় রাখার চেষ্টা করবে। সেটি হলে বেরাসাতু অনেকখানি নিঃসঙ্গ হয়ে পড়বে। দলটি চেষ্টা করবে তৃতীয় একটি জোট গঠন করতে।
এ ধরনের ত্রিমুখী অবস্থা সৃষ্টি হলে বারিসান-পাস জোট হয়তো ভালো ফল করতে পারে। তবে আনোয়ারের নেতৃত্বাধীন পাকাতান হারাপানের সম্ভাবনাও কমবে না যদি জোটের বর্তমান অবস্থা বজায় রাখা সম্ভব হয়। যাই হোক না কেন, সম্ভবত মুহিউদ্দিন সরকারের সময় ইতি ঘটার কাছাকাছি চলে এসেছে। মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে প্রতিদিনই যে পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে তাতে নির্বাচনই হয়ে উঠতে পারে অনিবার্য বাস্তবতা। তবে তার আগে আরো অনেক ঘটনাই ঘটতে পারে।
mrkmmb@gmail.com