চীনকে থামাতে যুক্তরাষ্ট্র-মালদ্বীপ-ভারত
চীনকে থামাতে যুক্তরাষ্ট্র-মালদ্বীপ-ভারত - ছবি : সংগৃহীত
চলতি মাসে মালদ্বীপের সাথে যুক্তরাষ্ট্র সরকার যে প্রতিরক্ষা চুক্তিতে সই করেছে তা দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান শক্তি ভারতের আধিপত্য থাকা ভারত মহাসাগরের কৌশলগত দিগন্তরেখার ভূরাজনৈতিক ধারায় পরিবর্তনের ইঙ্গিতবহ।
এটি সাত বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র ও মালদ্বীপের মধ্যে সই হওয়া নতুন সহযোগিতা কাঠামোর মতো নয় এটি। এবার ভারতের কাছ থেকে কোনো আপত্তি আসেনি। উল্লেখ্য, ভারত হলো দক্ষিণ এশিয়ার গ্রেম গেমের সর্বশেষ সংস্করণের শীর্ষ খেলোয়াড়, যেখানে প্রভাব বিস্তারের জন্য চীন, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চুক্তি সই করার পর মালদ্বীপের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এটি ইন্দো-প্যাসিফিক ও ভারত মহাসাগরে জলদস্যূতা ও সন্ত্রাসের মতো হুমকি প্রতিরোধে কার্যকর হবে।
মালদ্বীপের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে ইন্দো-প্যাসিফিক শব্দটির উল্লেখ বেশ তাৎপর্যমণ্ডিত। এটি ভারত মহাসাগর ও প্যাসিফিকে যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনার সাথে সামঞ্জস্য বিধানের ইঙ্গিত দেয়।
আর ভারতও অস্ট্রেলিয়া, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে গঠিত এই পরিকল্পনার আরেক রূপ কোয়াডের সদস্য।
মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত আলিয়ানা তেপলিজের মতে, এই চুক্তি অবাধ ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিকের নিয়মনীতি ও মূল্যবোধ সমুন্নত রাখার কার্যক্রম অন্যান্য দেশের সাথে মালদ্বীপের যোগদানের পথ দেখাবে।
এই চুক্তির ফলে মালদ্বীপের জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী ব্যাপকভাবে লাভবান হবে। দ্বীপ দেশটির সৈন্য মাত্র ২০ হাজার। দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে তাদের সেনাবাহিনীই সবচেয়ে ছোট।
মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিক্কিই এশিয়ান রিভিউকে বলেন, এই চুক্তির ফলে উচ্চ পর্যায়ের সংলাপ, পার্টনারশিপ সক্ষমতা নির্মাণের পথ সৃষ্টি হবে।
দক্ষিণ এশিয়ার বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভারতের পথ পরিবর্তনের ফলেই মালদ্বীপের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রতিরক্ষা চুক্তি করা সম্ভব হয়েছে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক হাডসন ইনস্টিটিউটের ইনিশিয়েটিভ অন দি ফিউচার অব ইন্ডিয়া অ্যান্ড সাউথ এশিয়ার পরিচালক অপূর্ণা পান্ডে বলেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার গভীর কৌশলগত বন্ধন পরিলক্ষিত হয় ভারতের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের কেন্দ্রবিন্দুতে।
তিনি নিক্কিইকে বলেন, ঘনিষ্ঠতর সামরিক সম্পর্ক ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের কৌশলগত স্বার্থর প্রতি মার্কিন সমর্থনের ফলে দিল্লি এই অবস্থান গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, এখন শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, বাংলাদেশ বা নেপালে ওয়াশিংটনের উপস্থিতিকে ভারতের স্বার্থের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিবেচনা করে।
মালদ্বীপের সাবেক প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ ইয়ামিন ২০১৮ সাল পর্যন্ত তার ক্ষমতায় থাকার সময় চীনের দিকে প্রবলভাবে ঝুঁকেছিলেন। ওই সময় চীনের কাছ থেকে অবকাঠামো খাতে বিপুল পরিমাণে অর্থ সংগ্রহ করেছিলেন। এর ফলে বিপুল অঙ্কের ঋণের সৃষ্টি হয়। ৫ বিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিটির ঋণের পরিমাণ ১.৪ বিলিয়ন ডলার। তবে প্রেসিডেন্ট সলির মিত্ররা বলেন, চীনা ঋণের পরিমাণ ৩.৫ বিলিয়ন ডলার। তবে চীনা সরকার এ ব্যাপারে আপত্তি দিয়েছে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর নেভাল এনালাইসিসের পরিচালক নিলানথি সামারানায়েকে নিক্কিইকে বলেন, চীন ভারত মহাসাগরে ভিন্ন ধরনের নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। তিনি বলেন, ভারতের যুক্তরাষ্ট্র-মালদ্বীপ চু্ক্তিকে সমর্থন বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে এসেছে।
তিনি বলেন, এই চুক্তির ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও মালদ্বীপের মধ্যে ব্যাপকভিত্তিক দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সংলাপের ব্যবস্থা করবে।
মালদ্বীপের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের এই সম্পর্কের বিষয়টি চীনের অগোচরে নেই।
বেইজিং ফরেন স্টাডিজ ইউভার্সিটির অ্যাকাডেমি সিনিয়র রিসার্চ ফেলো লং জিনচুয়ান বলেন, পরাশক্তিগুলোর উচিত হবে না তাদের প্রভাববলয় প্রতিষ্ঠার কাজে নিয়োজিত থাকা। তিনি গ্লোবাল টাইমসে বলেন, একুশ শতকে দেশগুলোর উচিত অবাধ, সাম্য ও পারস্পরিক কল্যাণমূলক সহযোগিতা করা।
সূত্র : নিক্কিই এশিয়ান রিভিউ