কেন আলোচনায় নেই গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার

ফাজেল মিনাল্লাহ কাজিজাই | Sep 27, 2020 05:31 pm
গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার

গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার - ছবি সংগৃহীত

 

আফগান সরকার ও বিদ্রোহী তালেবান দোহায় শান্তি আলোচনায় নিয়োজিত। সহিংসতা গৃহযুদ্ধ অব্যাহত থাকায় সেখানে বড় ধরনের অগ্রগতির আশা অনেকটাই কম।

আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানির সরকার গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় প্রবেশের আগ্ যুদ্ধবিরতির ওপর জোর দিলেও তালেবান বন্দুক তুলে রাখার আগে যে কারণে যুদ্ধ হচ্ছে তা নিয়ে আলোচনা ও সমঝোতার ওপর গুরুত্বারোপ করছে।
আলোচনার লক্ষ্য ১৯ বছরের যুদ্ধ অবসান ঘটানো এবং সম্ভাব্য ক্ষমতা ভাগাভাগির চুক্তিসহ যুদ্ধ-পরবর্তী সমাজ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা করা। এখন পর্যন্ত আলোচনা কেন্দ্রীভূত রয়েছে এজেন্ডা নির্ধারণ ও কিভাবে আলোচনা হবে তা নিয়ে।
তালেবান দাবি জানাচ্ছে যে সঙ্ঘাতটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘জিহাদ’ হিসেবে স্বীকার করত হবে, আলোচনা হতে হবে হানাফি মাজহাবের চিন্তাধারা অনুযাযী এবং দুই পক্ষের আলোচনার ভিত্তি হবে ফেব্রুয়ারিতে সই হওয়া যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান চুক্তি।

মার্কিন চুক্তির ফলে ২০২১ সালের মে মাস নাগাদ আফগানিস্তান থেকে সব বিদেশী সৈন্যের প্রত্যহারের পথ সৃষ্টি করেছে। যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান চুক্তিতে থাকা বন্দি বিনিময় নিয়ে মতপার্থক্য থাকায় আলোচনা শুরু হতে দেরি হয়।
আন্তঃআফগান আলোচনা শুরু হয় ১২ সেপ্টেম্বর। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা বক্তৃতা করেন। অবশ্য কোভিড-১৯-এর বিধিনিষেধের কারণে তা হয় ভার্চুয়াল মাধ্যমে।
এর পর থেকে আফগানদের দল দুটি প্রতিদিন বৈঠক করছে। তবে তারা অভিন্ন অবস্থানে না থেকে নিজ নিজ অবস্থান অটল থাকছে। এদিকে মিডিয়ায় অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের মধ্যে যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে।
তালেবান আলোচনার টেবিলে তাদের কঠোর নেতা ও ইসলামি বিশেষজ্ঞ শেখ আবদুল হাকিম হাক্কানিকে পাঠিয়েছে।
তালেবানের প্রধান আলোচকের দায়িত্ব পালনকারী শেখ হাক্কানি তালেবান আন্দোলনের প্রধান ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত। তিনি ইসলামি আইনশাস্ত্র ও হাদিসশাস্ত্র নিয়ে উচ্চমানের বেশ কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেছেন।
তিনি পাকিস্তানের কোয়েটার ইশাকাবাদ মাদরাসার প্রধান। এই প্রতিষ্ঠান থেকে বেশ কয়েকজন কট্টরপন্থী তালেবান সামরিক কমান্ডার গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেছে।

মরহুম তালেবান নেতা মোল্লা মোহাম্মদ ওমরের ছেলে ও সামরিক কমিশনের বর্তমান প্রধান মোল্লা মোহাম্মদ ইয়াকুবও তার ছাত্রদের মধ্যে আছেন। তিনি অবশ্য নিরাপত্তাগত কারণে আত্মগোপনে রয়েছেন।
শেখ হাক্কানি ১৯৯৪ সালে তালেবান প্রতিষ্ঠাকারী মোল্লা মোহাম্মদ ওমরের ঘনিষ্ঠ ধর্মীয় ও রাজনৈতিক সহযোগী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ২০১৩ সালে যক্ষ্মায় তার মৃত্যুর খবর তিনিই প্রথমে পেয়েছিলেন।
ওয়াকিবহাল সূত্র জানায়, হাক্কানিই মৃত্যুর খবরটি গোপন রাখতে বলেন। ২০১৫ সালে নতুন তালেবান নেতা হিসেবে মোল্লা আখতার মোহাম্মদ মনসুরকে নিয়োগের আগ পর্যন্ত খবরটি চেপে রাখা হয়।

তালেবানের রাজনৈতিক ও সামরিক কৌশল নির্ধারণে তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণেই গ্রুপটি সংগ্রাম অব্যাহত রাখছে। তিনিই তালেবানকে স্থানীয় আন্দোলন থেকে বৈশ্বিক গ্রুপে পরিণত করেন।স্থানীয় কমান্ডার ও সেইসাথে প্রতিবেশী দেশের ইসলামপন্থী গ্রুপগুলোর সবাই তাকেই ধর্মীয় উস্তাদ হিসেবে মান্য করে।
তার সাবেক এক ছাত্র বলেন, তিনি এই অঞ্চলের সব মুসলিমকে ভাই হিসেবে ডাকেন। তার কাছে আফগান, পাকিস্তানি, ইরানি সুন্নি ও অন্য সবাই একই।

মনে রাখতে হবে, দোহায় যেসব বিরোধের মীমাংসা করতে হবে, সেগুলোর কিছু কিছু রাজনৈতিক ও সেইসাথে গবেষণাবিষয়কও।

একটি উদ্বেগজনক বিষয় হলো, হানাফি মাজহাব পুরোপুরি অনুসরণ করা। চারটি মাজহাবের অন্যতম এটি। ভারতীয় উপমহাদেশ, মধ্য এশিয়া ও তুরস্কে এই মাজহাব ব্যাপকভাবে অনুসরণ করা হয়।
এখন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে, আফগান আইনি ব্যবস্থায় শিয়াদের জাফরি মাজহাবকে আইনের উৎস হিসেবে বহাল রাখা হবে কিনা।
উত্তরাধিকার, ধর্মীয় কর, বাণিজ্য, ব্যক্তি মর্যাদা, মুতা বা সাময়িক বিয়ের মতো অনেক বিষয়ে সুন্নি আইনের সাথে জাফরি মাজহাবের ভিন্নতা রয়েছে। ২০০১-পরবর্তী সংস্কারের সময় জাফরি মাজহাবকে গ্রহণ করা হয়েছিল।

উভয়পক্ষই আলোচনা অব্যাহত রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। কিন্তু ব্যাপকভিত্তিক ও অর্থপূর্ণ আলোচনার কাজটিই বিলম্বিত হচ্ছে।

দোহায় আফগান সরকারের কারিগরি দলের সদস্য মুজিবুর রহমান লেমার বলেন, অগ্রগতি কিছু হয়েছে এবং তালেবান নেতৃত্ব আমাদের বিকল্প প্রস্তাবগুলো নিয়ে এখন আলোচনা করছেন। আমরা অপেক্ষা করছি। তারা শিগগিরই আমাদের কাছে ফিরে আসবেন।
তবে সমালোকেরা বলছেন, বর্তমান আফগান সরকারি দল বড় ধরনের কোনো চুক্তিতে আসতে পারবে না। কারণ তাদের মধ্যে কার্যকর কর্তৃত্ব নিয়ে কথা বলার মতো শক্তিশালী কোনো রাজনীতিবিদ বা প্রভাবশালী ব্যক্তি নেই।

কাবুলভিত্তিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক নাসরাতুল্লাহ হাকপাল বলেন, সরকারি দলটি গঠিত হয়েছে বিভিন্ন পক্ষকে নিয়ে তাদের চিন্তা ও কাজের মধ্যে ঐক্য নেই।তাদের ক্ষমতা শূন্য।
এদিকে আফগানিস্তানের যুদ্ধক্ষেত্র এখনো রক্তস্নাত রয়ে গেছে। ১৯ সেপ্টেম্বরে কুন্দুজে আফগান বাহিনীর বিমান হামলায় ১১ জনের বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে।
তালেবান দাবি করেছে, ওই বিমান হামলায় ২৩ জন নিহত হয়েছে।

আরেক খবরে বলা হয়েছে, দক্ষিণ আফগানিস্তানে নিরাপত্তা বাহিনীর চেক পয়েন্টগুলোতে হামলা শুরু করেছে তালেবান। তারা ২৮ আফগান পুলিশকে হত্যাও করেছে।
উরুজগানের গভর্নরের মুখপাত্র জেলাগাই ইবাদি বলেন, তালেবান যোদ্ধারা ২৮ স্থানীয় ও জাতীয় পুলিশ কর্মকর্তাকে অস্ত্র সমর্পণ করে ২২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে স্থান ত্যাগ করতে বলেছিল।কিন্তু তারা অস্ত্র তুলে নিলে তাদের সবাইকে হত্যা করা হয়।

আলোচকেরা অবশ্য সহিংসতার জন্য আলোচনা ভণ্ডুল করে দিতে নারাজ।
এই আলোচনায় অন্যান্য প্রভাবশালী ব্যক্তি দূরে আছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই, সাবেক মুজাহিদিন নেতা ও শক্তিশালী হেজবে ইসলামি নেতা গুলবুদ্দিন হেকমতিয়ার।
উভয়েই হাই কাউন্সিল ফর ন্যাশনাল রিকনসিলিয়েশনে যোগ দিতে অস্বীকার করেছেন। প্রেসিডেন্ট গানির ঘোষিত ডিক্রি থেকে দূরত্ব বজায় রাখছেন।
কাজরাই এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, তিনি শান্তির জন্য ব্যক্তিগত প্রয়াস অব্যাহত রাখবেন। তবে সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের সাথে থাকবেন না।

২০১৬ সালে সরকার ও হেজবে ইসলামির মধ্য শান্তিচুক্তি সই হওয়ার পর আফগান রাজনৈতিক দৃশ্যপটে ফিরে আসা হেকমতিয়ার কাউন্সিলের মুজাহিদিন সদস্যপদ ও রাজনৈতিক নেতাদের প্রতীকী ও অকার্যকর হিসেবে অভিহিত করেছেন।
শান্তি প্রতিষ্ঠা নির্ভর করছে সব পক্ষের আপস ও অভিন্ন ভিত্তি পাওয়ার আগ্রহের ওপর।গানি সরকার ও তালেবান এখন আলোচনায় বসেছে। তবে আফগানিস্তানের ভবিষ্যতের ওপর ঝুলে থঅকা মেঘ এখনো সরেনি।

সূত্র : এশিয়া টাইমস


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us