যেভাবে সৌদি আরবে যেতে পারবেন প্রবাসী শ্রমিকেরা
সৌদি প্রবাসী শ্রমিক - ছবি সংগৃহীত
বাংলাদেশে সৌদি অভিবাসী শ্রমিকদের ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর কার্যক্রম শুরুর দিনেই এর প্রক্রিয়া নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে অভিবাসীদের মাঝে।
ঢাকার গুলশানের সৌদি দূতাবাসের সামনে রোববার সকাল থেকে জড়ো হন প্রবাসী শ্রমিকরা। এই শ্রমিকদের বেশিরভাগেরই জিজ্ঞাসা, আকামা ও ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে সেটি নবায়ন করা হবে কীভাবে।
করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সৌদি আরব ও বাংলাদেশের মধ্যে নিয়মিত বিমান চলাচল ব্যাহত হওয়ায় বাংলাদেশে আটকে পড়া অভিবাসী শ্রমিকদের অনেকেই বিপাকে পড়েছেন।
সপ্তাহখানেক ধরে সৌদি আরবে যাওয়ার বিমান টিকেটের দাবিতে কারওয়ানবাজারে সৌদি এয়ারলাইন্সের অফিসের সামনে প্রবাসী কর্মীরা বিক্ষোভ করছেন। সেখানে প্রবাসী শ্রমিকদের বিক্ষোভ অব্যাহত ছিল আজও।
তবে গুলশানের সৌদি দূতাবাস থেকে এই শ্রমিকদের জানানো হয়েছে যে দূতাবাস অনুমোদিত এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করে ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টির সমাধান করতে।
সৌদি এয়ারলাইন্সের অফিসে ও দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ করতে থাকা শ্রমিকদের অনেকেই করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর বাংলাদেশে ফেরত আসেন। এখন আবার সৌদি আরব ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতার মুখে পড়ছেন তারা।
কারওয়ান বাজারে বিক্ষোভ করতে থাকা শ্রমিকদের অনেকের ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার সময় চলে আসলেও করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সৌদি এয়ারলাইন্সের আরোপিত শর্ত মেনে টিকিট পাওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতার মুখে পড়ছেন তারা। ফলে তাদের সৌদি আরব যাওয়া নিয়েই সন্দেহ তৈরি হয়েছে।
বিমান যাত্রার আগে নির্দিষ্ট সময় কোয়ারেন্টিন করা, দূতাবাসের নির্ধারিত স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে কোভিড টেস্ট করা, বিমান ভ্রমণের আগে সৌদি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত ফর্ম পূরণ করা, সৌদি আরবে নামার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট অ্যাপ ডাউনলোড করে তথ্য নিবন্ধন করার মতো কিছু নির্দেশনা ওই সময় দেয় সৌদি কর্তৃপক্ষ।
যেভাবে ভিসার মেয়াদ বাড়ানো সম্ভব
গত বুধবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছিলেন সৌদি আরব থেকে ছুটি কাটাতে আসা বাংলাদেশীদের ভিসা এবং আকামার মেয়াদ বাড়ানোর কথা আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশকে জানিয়েছিল সৌদি আরব কর্তৃপক্ষ।
সেসময় তিনি জানিয়েছিলেন রোববার (২৭ সেপ্টেম্বর) থেকে ভিসা ও আকামার মেয়াদ বাড়ানোর কার্যক্রম শুরু করবে সৌদি কর্তৃপক্ষ। তবে ঠিক কীভাবে এই কার্যক্রম পরিচালিত হবে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
রোববার সকালে সৌদি দূতাবাসের সামনে জড়ো হওয়া শ্রমিকদের কাছে অনুমোদিত এজেন্সিগুলোর একটি তালিকা দেয়া হয় এবং সেখানে জড়ো হওয়ার শ্রমিকদের ঐ এজেন্সিগুলোর সাথে যোগাযোগ করে ভিসার মেয়াদ বাড়ানো নিয়ে যোগাযোগ করতে বলা হয়।
সেরকম একটি অনুমোদিত এজেন্সি মিডল ইস্ট কনসাল্টেন্সির ম্যানেজার এম এ বারি জানান ভিসা নবায়নের বিষয়ে সৌদি দূতাবাস থেকে তাদের কাছে 'নতুন' কোনো নির্দেশনা আসেনি।
বারি বলেন, "দূতাবাসের আনুষ্ঠানিক ঘোষণার জন্য আমরা অপেক্ষা করছি, নতুন কোনো নিয়মের বিষয়ে এখন পর্যন্ত তারা আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি।"
"করোনাভাইরাসের কারণে কোনো বিষয়ে ছাড় দেয়া হবে কি না, নাকি আগের পদ্ধতিতেই ভিসা নবায়ন করা হবে, সে সম্পর্কে এখনো নিশ্চিতভাবে কিছু জানায়নি তারা।"
পুরনো পদ্ধতিতে ছুটি কাটানোর ফর সৌদি আরবে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে তিন ধরণের নথিপত্র জমা দেয়ার প্রয়োজন হতো বলে জানান বারি।
"কফিল বা সৌদি আরবে নিয়োগকর্তার আনুষ্ঠানিক চিঠির মূল কপি যেটি চেম্বার ও সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সত্যায়িত, যাওয়াযাত (সৌদি আরবের পাসপোর্ট অফিস) এর অনুমতিপত্রের কপি এবং একামার ফটোকপি প্রয়োজন হত পুরনো নিয়মে", বলেন মিডল ইস্ট কনসাল্টেন্সির ম্যানেজার এম এ বারি।
"আর কারো ছুটির মেয়াদ যদি সাত মাস পার হয়ে যায়, অর্থাৎ সৌদি আরব থেকে ছুটি নিয়ে আসার পর সাত মাস এক দিন হয়ে গেলে, সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে রিএন্ট্রি এক্সটেনশন ভিসা নম্বর আনতে পারলে আবারো ভিসা নবায়ন সম্ভব হয়।"
এই ক্ষেত্রে প্রবাসী শ্রমিককে অনলাইনে ভিসার মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করতে হয় এবং তার কফিলের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন হয়।
"কফিল যদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে বলেন যে তার কোনো শ্রমিক ভিসার মেয়াদ বাড়াতে চাইছে এবং তিনি ঐ শ্রমিককে সুযোগ দিতে চান, তাহলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সাধারণত আবেদন গ্রহণ করে থাকে।"
এরপর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে একটি রিএন্ট্রি এক্সটেনশন নম্বর অনলাইনে পাঠানো হয়, যা সাধারণত এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে জানা যায় বলে জানান এম এ বারি।
সূত্র : বিবিসি