কঠোর শীতে ভারত-চীনের যুদ্ধপ্রস্তুতি!
কঠোর শীতে ভারত-চীনের যুদ্ধপ্রস্তুতি! - ছবি সংগৃহীত
গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ সীমান্ত বিরোধে আটকে পড়া চীন ও ভারতীয় সেনাবাহিনী সহসা অচলাবস্থা নিরসনের আশা ত্যাগ করে এখন সীমান্তে মোতায়েন হাজার হাজার সেনা জন্য লজিস্টিক সহায়তা ও রসদ পাঠানোর দিকে মনযোগ দিয়েছে। হিমালয় অঞ্চলে এগিয়ে আসছে নির্দয় শীত। এর মধ্যে টিকে থাকতে হলে প্রয়োজনীয় রসদের সরবরাহ নিশ্চিত করা একমাত্র বিকল্প।
গত সোমবার দুই পক্ষের সেনা কমান্ডারদের মধ্যে ষষ্ঠ দফা বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে ওই এলাকায় কোন পক্ষই আর নতুন করে সেনা পাঠাবে না। সীমান্ত উত্তেজনা হ্রাসসহ ওই বৈঠকে আলোচনার বিষয় ছিলো ৪,৫০০ মিটার উচ্চতায় যেখানে অক্সিজেন কম এবং অক্টোবর থেকেই তাপমাত্রা কমতে থাকে সেখানে সেনাদের টিকে থাকা নিয়ে উদ্বেগ।
কিন্তু সেনাপ্রত্যাহারে সিদ্ধান্ত না হওয়ায় এখন এগিয়ে আসা রূঢ় শীতের মধ্যে টিকে থাকার প্রস্তুতি নিচ্ছে দুই পক্ষ। তিব্বত সীমান্ত সংলগ্ন লাদাখ অঞ্চলে রসদ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। গত মে মাসে ওই অঞ্চলে চীন ও ভারতীয় সেনাদের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়ার পর থেকেই দুই পক্ষ সেখানে হাজার হাজার সেনা পাঠিয়েছে।
নয়া দিল্লীর কৌশলগত বিশ্লেষক রাজেশ্বরী পিল্লাই রাজগোপালান বলেন, ভারতের সামরিক নেতারা শীতকালে লাদাখের পূর্বাঞ্চলে ৩০,০০০ সেনা মোতায়েন রাখতে চান। সেজন্য আগেভাগে শীতের রসদ মজুত করা হচ্ছে। এর মধ্যে খাবার, জ্বালানি, গোলাবারুদ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে দ্রুতগতিতে।
বেইজিংয়ের সামরিক বিশেষজ্ঞ ঝাও চেনমিং বলেন, লজিস্টিকস সহায়তার ক্ষেত্রে পিপলস লিবারেরশ আর্মির (পিএলএ) বাড়তি সুবিধা রয়েছে। প্রত্যন্ত সীমান্ত এলাকায় অবাঠামো নির্মাণের পেছনে চীন বিপুল বিনিয়োগ করায় এই সুবিধা তৈরি হয়েছে। গত কয়েক দশক ধরে দেশব্যাপী দারিদ্র বিমোচন কার্যক্রমের আওতায় এগুলো তৈরি করা হয়েছে।
২০১৭ সালে দোকলাম সমস্যা সৃষ্টি পর থেকে ভারত সীমান্তে চীন অন্তত ১৩টি নতুন সামরিক স্থাপনা নির্মাণ করেছে। এর মধ্যে তিনটি বিমান ঘাঁটি, পাঁচটি স্থায়ী বিমান প্রতিরক্ষা ঘাঁটি ও পাঁচটি হেলিপ্যাড।
ঝাও উল্লেখ করেন যে কঠোর শীতের মধ্যে সেনাদের টিকে থাকতে হবে। শীতকালে ওই এলাকা প্রবেশের অযোগ্য হয়ে পড়ে।
তিনি বলেন, শীতকালে হিমালয় অঞ্চলের তাপমাত্রা হিমাঙ্কের ৪০ ডিগ্রি নিচে নেমে যায়। বাইরের বিশ্বের সঙ্গে সবরকম সড়ক যোগাযোগ অন্তত অর্ধেক বছরের জন্য বন্ধ থাকে। শীত শুরু হয়ে গেলে দুই পক্ষ কোনভাবেই আর মারামারি করার অবস্থায় থাকবে না। তখন টিকে থাকাই হবে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার।
চীনের রাষ্ট্রীয় মিডিয়ার খবরে বলা হয়, ভারতের সঙ্গে সীমান্ত এলাকার সামরিক স্থাপনার সঙ্গে যুক্ত করে তিব্বতের শহরগুলাতে হেলিপ্যাড ও বেশ কিছু হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে।
চীনা সেনাবাহিনীর মুখপত্র পিএলএ ডেইলি এর আগে জানিয়েছিলো যে নতুন ওয়াই-৯ পরিবহন বিমানকে এমনভাবে সাজানো হয়েছে যেন সেগুলো ‘উড়ন্ত হাসপাতাল’ হিসেবে ব্যবহার করা যায়। সেনাদেরকে উন্নত চিকিৎসা সেবা দিতে এটা করা হয়েছে। অন্যদিকে সাম্প্রতিক মহড়ায় পার্বত্য অঞ্চলে ড্রোন দিয়ে সেনাদের কাছে গরম খাবার ও অন্যান্য সরঞ্জাম পাঠানোর অনুশীলন করা হয়েছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর সরবরাহ করা রসদের মধ্যে বিশেষ শীত নিবারক পোশাক, আর্কটিক তাঁবু, খাবার ও জ্বালানি রয়েছে, যাতে অন্তত পরবর্তী ছয় মাস সেনারা কঠিন পরিবেশে টিকে থাকতে পারে।
নয়া দিল্লীভিত্তিক সামরিক বিশেষজ্ঞ রাজিব রঞ্জন চতুর্বেদী বলেন, এরপরও কোন পক্ষই সেনাপ্রত্যাহারের মনোভাব দেখাচ্ছে না। তারা জানে যে শীতকালে তাদেরকে যে অবস্থার মুখোমুখি হতে হবে তা হলো ‘হতাশার যুদ্ধ’।
তিনি বলেন, লাদাখ অঞ্চলের সিয়াচেনে বেশ কয়েক বছর ধরে ভারতীয় সেনারা ঘাঁটি গেড়ে আছে এবং সেনাবাহিনী কষ্টকর জীবনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। চীন শক্তি প্রয়োগের চেষ্টা করলে উপযুক্ত জবাব পাবে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রতি পূর্ণ রাজনৈতিক সমর্থন রয়েছে।
গত ১৫ জুন সীমান্ত পরিস্থিতির গুরুতর অবনতি ঘটে লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় চীনা সেনাদের সঙ্গে সংঘর্ষে এক কর্নেলসহ ২০ ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার পর। গত অর্ধ শতাব্দির মধ্যে এ ধরনের প্রাণঘাতি ঘটনা ঘটেনি।
সূত্র : এসসিএমপি