১১ নম্বর খুঁটি এবং চীন-নেপাল বিরোধ
১১ নম্বর খুঁটি এবং চীন-নেপাল বিরোধ - ছবি সংগৃহীত
নেপাল ও চীনের মধ্যে সাম্প্রতিক বিরোধের কারণ নিখোঁজ হওয়া ১১ নম্বর সীমান্ত খুঁটির খোঁজ পাওয়া গেছে। বুধবার এই খুঁটিটি খুঁজে পাওয়ার কথা জানিয়েছেন হুমলার মুখ্য জেলা কর্মকর্তা চিরঞ্জীব গিরির নেতৃত্বাধীন পরিদর্শক দলের সদস্য নামখা পৌরসভার প্রধান বিষ্ণু বাহাদুর লামা।
লামা বলেন, তাকুলি পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডে এটি খুঁজে পাওয়া গেছে। তুষার ও আবর্জনার নিচে এটি চাপা পড়েছিলো।
চীন নেপাল সীমান্তের একটি বিতর্কিত এলাকায় ১১টি ভবন তৈরি করছে বলে খবর প্রকাশের পর দুই দেশের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। পরে জানা যায় একটি সীমান্ত খুঁটির খোজ না থাকায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
লামা বলেন, খুঁটিটি খুঁজে পাওয়ার কারণে এখন চীনের নির্মাণ করা অবকাঠামোগুলো কোনো ভূখণ্ডে পড়েছে তা চিহ্নিত করা সহজ হবে।
ওই খুঁটিতে এটি বসানোর বছর হিসেবে নেপালি বছর বিক্রম সামবাত ২০১৯ ও চীনা দিকে ইংরেজি বছর ১৯৬২ সাল লেখা রয়েছে।
১১ নম্বর হলো নেপাল-চীন সীমান্তের পশ্চিম দিক থেকে বসানো সীমান্ত খুঁটির ক্রম।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে নিয়মিত সীমান্ত খুঁটি পরিদর্শন না করায় প্রায়ই বিভ্রান্তি তৈরি হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ২০০৫ সালের পর উত্তর সীমান্তে বিস্তারিত পরিদর্শনের কাজটি হয়নি। পাঁচ বছর আগেও ১২ নং খুঁটি নিয়ে একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিলো। পরে সেটি মেটানো হয়।
সাধারণত প্রতি ১০ বছর পরপর খুঁটিগুলো পরিদর্শন করার কথা।
এক ইমেইলের জবাবে কাঠমান্ডুর চীনা দূতাবাস এই পত্রিকাকে জানায় যে তারা নেপালি অংশে চীনা অবকাঠামো নির্মাণের ব্যাপারে খবর সম্পর্কে অবহিত।
দূতাবাসের মুখপাত্র ঝাং সি বলেন, মিডিয়ায় যেসব ভবনের কথা বলা হচ্ছে সেগুলো চীনা অংশে পড়েছে। নেপালি পক্ষ সেটা যাচাই করতে পারে। নেপালি পক্ষের কোন প্রশ্ন থাকলে আমরা যৌথভাবে যাচাই করতে পারি। তবে আমি জোর দিয়ে বলতে চাই যে চীন ও নেপালের মধ্যে কোন সীমান্ত বিরোধ নেই। বন্ধুত্বপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে যেকোন সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করা যায়।
নেপালি ভূখণ্ডে চীনা অবকাঠামো নির্মাণের খবর নাকচ কাঠামান্ডুর
নেপালের ভূখণ্ডে চীন কোনো নির্মাণকাজ করেনি বলে নেপাল সরকারের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) নেপালি ভূখণ্ডে ঢুকে অবকাঠামো নির্মাণ করছে বলে গত কয়েক দিন ধরে মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে কাঠমান্ডুর পক্ষ থেকে ওই ব্যাখ্যা দেয়া হলো।
যেখানে এই নির্মাণ কাজ হচ্ছে বলে উলেখ করা হয় সেটি নেপাল-চীন সীমান্তের কাছে নেপালের কারনালি প্রদেশের হুমলা জেলার গ্রামীণ পৌরসভা নামখার লাপচা লিমি’র মধ্যে পড়েছে।
নামখা রুরাল মিউনিসিপ্যালিটির চেয়ারম্যান বিষ্ণু বাহাদুর লামা ওই এলাকা সফরের পর চীনের কথিত ভূখণ্ড দখলের খবর পত্রিকায় আসে। তিনি ওই এলাকায় গিয়ে চীনের ভবনগুলো চিহ্নিত করেন। তিনি বিষয়টি মুহলা জেলা কর্তৃপক্ষকে জানান।
পরে ৩০ আগস্ট স্থানীয় প্রশাসনের একটি টিম ওই এলাকা পরিদর্শনে যায় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে এ ব্যাপারে প্রতিবেদন পেশ করে।
বুধবারের বিবৃতিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বলে, নেপালি ভূখণ্ডে চীনের যেসব ভবন নির্মাণ করা হয়েছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে সেগুলো সীমান্ত খুঁটি ১১ ও ১২ এর মধ্যে পড়েছে এবং তা নেপালি ভূখণ্ডের মধ্যে নয়। ওই এলাকা চীনের ভূখণ্ড।
সরকারি নথি, যৌথ মাঠ পরিদর্শন নিপোর্ট ও সীমান্ত মানচিত্র পর্যালোচনা করা হয়ছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।
বিবৃতিতে আরো বলা হয় যে, ২০১৬ সালেও ভবন নির্মাণের প্রশ্ন উঠেছিলো এবং তখন একটি আন্ত:মন্ত্রণালয় টিম পরিদর্শনের পর নিশ্চত হয় যে ওইসব ভবন নেপাল-চীন সীমান্ত থেকে এক কিলোমিটার দূরে চীনা ভূখণ্ডে পড়েছে।
তবে নেপালের বিরোধী দল নেপালি কংগ্রেস এ ব্যাপারে তড়িঘড়ি ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য সরকারের সমালোচনা করেছে।
নেপালি কংগ্রেসের মুখপাত্র বিশ্ব প্রকাশ শর্মা বলেন, মুখ্য জেলা অফিসার, নেপাল সেনাবাহিনী ও নেপাল পুলিশের যৌথ দল ওই এলাকা সফরে গিয়ে পরিস্থিতি মুল্যায়ন করার আগে কোন বিবৃতি দেয়া সরকারের ঠিক হয়নি। বিবৃতিটিকে যথাযথ মনে হচ্ছে না।
এদিকে দীর্ঘদিন নিখোঁজ থাকা ১১ নং সীমান্ত খুঁটিটি খুঁজে পাওয়া গেছে বলে নেপাল সরকার জানিয়েছে।
সূত্র : টিএনএন/এসএএম