সামরিক বাহিনীকে চ্যালেঞ্জ দেয়া নিয়ে বিপাকে পাকিস্তানের বিরোধী জোট
সামরিক বাহিনীকে চ্যালেঞ্জ দেয়া নিয়ে বিপাকে পাকিস্তানের বিরোধী জোট - ছবি : সংগৃহীত
পাকিস্তানের বিরোধী দলের নেতৃত্বাধীন অল পার্টিজ কনফারেন্স (এপিসি) সোমবার দেশের রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করার পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করে।
অবশ্য, বিরোধী দলের সদস্যদের মধ্যেই ইস্যুটি নিয়ে মারাত্মক বিভাজন দেখা দেয়ায় বোঝা যাচ্ছে যে পাকিস্তানের রাজনীতিবিদেরা দেশের রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর ভূমিকা নাকচ করে দেয়ার আইডিয়ার ব্যাপারে কৌশল নির্ধারণ বা দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করতে পারেননি।
এখন পর্যন্ত সামরিক বাহিনীর ভূমিকা বাড়ানো ও নিরাপত্তা এস্টাবলিশমেন্টের আশীর্বাদ নিয়ে নির্মম জবাবদিহি অভিযান চালানোর জন্য পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফকে (পিটিআই) টার্গেট করেছে। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও পাকিস্তান মুসলিম লিগ নওয়াজের (পিএমএলএন) প্রধান নওয়াজ শরিফ এপিসির সভায় বলেন, আমাদের সংগ্রাম প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে নয়, বরং তা হলো তার অবৈধ সরকারকে ক্ষমতায় বসানো বাহিনীর বিরুদ্ধে। আমরা চাই নির্বাচিত নেতারা দেশ পরিচালনা করুক, অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা করুক, পররাষ্ট্রনীতির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিক।
অবশ্য, ক্রমবর্ধমান প্রমাণে দেখা যাচ্ছে, পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলো দেশে বেসামরিক শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নয়। এ ব্যাপারে তাদের অন্যতম বাধা হলো অন্য কারো সাথে না করে বরং সামরিক বাহিনীর সাথে তাদের কাজ করার ইচ্ছা। পাকিস্তানের রাজনীতিবিদেরা নিরাপত্তা এস্টাবলিশমেন্টকে তোয়াজ করতে, তাদের মৌলিক শাসন ও রাজনৈতিক প্রয়োজন মেটাতে তাদের আশীর্বাদ নিতে অভ্যস্ত।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, নওয়াজ শরিফ বলেছেন যে সামরিক এস্টাবলিশমেন্টের সাথে কোনো আপস নয় এবং বেসামরিক শ্রেষ্ঠত্বই এগিয়ে যাওয়ার একমাত্র পথ। শরিফের মেয়েও দাবি করেছেন যে জাতীয় নিরাপত্তা এস্টাবলিশমেন্টের কাছ থেকে পিএমএলএন স্বস্তি চাচ্ছে বলে দেয়া বক্তব্যে কোনো সত্য নেই।
তবে বুধবার সামরিক বাহিনীর মিডিয়া শাখার মহাপরিচালক প্রকাশ করেন যে পিএমএলএনের এক সিনিয়র নেতা সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার সাথে সাক্ষাত করেছেন। তিনি গত দুই সপ্তাহের মধ্যে দুবার বৈঠক করে শরিফ ও তার মেয়ের রাজনৈতিক ও আইনগত ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা করেন। ডিজি বলেন, উভয় সভাতেই পিএমএলএন নেতা নওয়াজ শরিফ ও মরিয়ম নওয়াজ সম্পর্কে কথা বলেছেন। নওয়াজের ছোট ভাই শাহবাজ শরিফের বাজওয়া ও দেশটিরর প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়র মহাপরিচালকের সাথে সাক্ষাত করার কথা স্বীকার করার পর ওই বক্তব্য দেয়া হয়।
সাংবিধানিক বিষয়াদি নিয়ে আলোচনার জন্য রাজনীতিবিদদেরকে সামরিক বাহিনীর সদরদফতরে আহ্বান করার পর সামরিক বাহিনীকে টার্গেট করে শরিফের মেয়ের বক্তব্যের পর আইএসপিআর এ বক্তব্য দেয়। বাজওয়ার সাথে বিরোধী নেতার সাম্প্রতিক বৈঠক সম্পর্কে বলতে গিয়ে মরিয়ম নওয়াজ বলেন, আমি যতটুকু বুঝতে পেরেছি, তা হলো এই যে আলোচনা হয়েছে গিলগিট-বাল্টিস্তান নিয়ে। এটি একটি রাজনৈতিক ইস্যু। জনগণের প্রতিনিধিরাই এটি সমাধান করতে পারেন।
মরিয়ম বলেন, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদরদফতরে নয়, বরং এসব আলোচনা হওয়া উচিত পার্লামেন্টে।
কেবল পিএমএলএনই রাজনৈতিক ও আইনগত ইস্যুতে সামরিক বাহিনীর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছে না। পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) নেতা বিলওয়াল ভুট্টোও গত সপ্তাহে তার দলের নেতাদের নিয়ে বাজওয়ার সাথে সাক্ষাত করেছেন। গত দুই বছরে পিপিপির নেতারা পিটিআই সরকারের প্রতি সামরিক বাহিনীর সমর্থনের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। পিপিপি ২০১৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করা, সিন্ধু প্রদেশে পিপিপির বিরুদ্ধে জবাবদিহি অভিযান পরিচালনার জন্য সামরিক বাহিনীর সমালোচনা করেছে। জুলাই মাসে বাজওয়ার সাথে তার দলের সিনিয়র এক নেতার বৈঠকেরও সমালোচনা করেছিলেন।
অবশ্য, সামরিক নেতৃত্বের সাথে বৈঠকের পর সামরিক বাহিনীর প্রতি দলটির দৃষ্টিভঙ্গি আপসমূলক মনে হয়েছে। বাজওয়ার অবস্থানকে ইতিবাচক ঘটনা হিসেবে অভিহিত করে ভুট্টো বলেন, সামরিক বাহিনী গিলগিট-বাল্টিস্তানে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। তিনি আরো উল্লেখ করেন, শেষশ সাধারণ নির্বাচন প্রশ্নে সামরিক নেতৃত্বের সাথে পিপিপি একমত নয়। তবে এগিয়ে যাওয়ার জন্য পাকিস্তানে স্বচ্ছ নির্বাচন হবে।
বিরোধী দলের নেতাদের সাথে সামরিক নেতৃত্বের সাম্প্রতিক বৈঠক হওয়ায় বোঝা যাচ্ছে, চাপ হ্রাস পেয়েছে, বিরোধী দল আসলে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেছে। পাকিস্তানের সব প্রধান রাজনৈতিক দল গোপনে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার জন্য গোপনে সামরিক বাহিনীর সাথে যোগাযোগ করছে।
ফলে সরকারের বিরুদ্ধে ঘোষিত বিক্ষোভ কর্মসূচিতে বিরোধী দলগুলো কতটা গণসমর্থন পাবে, তা অস্পষ্ট। পিএমএলএনের দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ভাঙন নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত। আর পিপিপির চিন্তা করা উচিত, সিন্ধুতে কেন্দ্রীয় সরকারের ক্রমবর্ধমান উপস্থিতির বিরুদ্ধে তারা কী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
সূত্র : দি ডিপ্লোম্যাট