ভারত : কৃষিবিলে কৃষকের গলায় ফাঁস!

ভারত : কৃষিবিলে কৃষকের গলায় ফাঁস! - ছবি : সংগৃহীত
ভারতের সর্বশেষ কৃষি সংস্কারকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করতে সহায়ক হবে বলে জানলেও তা ব্যাপক আন্দোলন উস্কে দিয়েছে, বিরোধী দল ও চাষিরা একে কৃষকবিরোধী হিসেবে অভিহিত করেছে।
প্রধানত উত্তর ভারতীয় রাজ্য পাঞ্জাব ও হরিয়ানার কৃষকদের প্রতিবাদের মুখে চলতি সপ্তাহে ভারতীয় পার্লামেন্ট কৃষি খাতকে উদারিকরণের লক্ষ্যে তিনটি বিল অনুমোদন করে। সরকার মনে করছে, এর ফলে কৃষি খাতের সরবরাহ চেইন ও কৃষি অবকাঠামোতে বেসরকারি বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হবে, গ্রামীণ এলাকায় নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে।
ভারতের মোট কর্মশক্তির প্রায় অর্ধেক কৃষিতে নিয়োজিত। এই খাতটি দেশের জিডিপিতে ১৫ ভাগ অবদান রাখে। কৃষকেরা পরিবর্তনশীল মওসুমি বৃষ্টিপাতের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে থাকে। তাদের উৎপাদনশীলতা ও মুনাফা বেশ কম। অনেকেই ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
নতুন সংস্কার অনুযায়ী কৃষকেরা সরাসরি খাদ্য প্রক্রিয়া শিল্প ও সংস্থা, পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা ও রফতানিকারকদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হতে পারবে। তারা দেশের যেকোনো স্থানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে তাদের পণ্য প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে বিক্রি করতে পারবে। তাদেরকে আর সরকার-নিয়ন্ত্রিত পাইকারি বাজারে বিক্রি করতে হবে না। উল্লেখ্য, মান্ডি নামে পরিচিত এসব বাজারে বিক্রি করতে হয় সরকার নির্ধারিত দামে।
কৃষকেরা আশঙ্কা করছে, এই সংস্কারের ফলে মান্ডি ও এমএসপিগুলো ভেঙে যাবে। এতে করে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর দয়ার ওপর তাদেরকে নির্ভর করতে হবে। এসব প্রতিষ্ঠান পরিকল্পিতভাবে বাজারদর হ্রাস করে ফেলবে। অবশ্য সরকার আশ্বাস দিয়েছে যে মান্ডি ও এমএসপিগুলো অব্যাহত থাকবে। কৃষকেরা শুক্রবার দেশব্যাপী গণবিক্ষোভের ডাক দিয়েছে।
অন্যতম কৃষক সংস্থা ভারতীয় কৃষান ইউনিয়নের মুখপাত্র ধর্মেন্দ্র মালিক বলেন, শুক্রবারের বিক্ষোভে শতাধিক কৃষি ইউনিয়ন যোগ দেবে।
তিনি বলেন, সারা দেশে তিন থেকে চার হাজার প্রতিবাদ স্থল থাকবে। এসবের মধ্যে রয়েছে হরিয়ানা, পাঞ্জাব, মধ্য প্রদেশ, রাজস্থান, কর্নাটক, তামিল নাড়ু রাজ্য। প্রতিটি প্রতিবাদে হাজারের বেশি অংশগ্রহণকারী থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তিনি নিক্কিই এশিয়ান রিভিউকে বলেন, বর্তমান বিলটি করপোরেট হাউসগুলোকে লাভবান করবে। এসব প্রতিষ্ঠান অবাধে তখন শস্য ক্রয় করতে পারবে।
ভারতে কোভিড-১৯ ব্যাপকভাবে সংক্রমিত করার মধ্যেই এসব সংস্কার আনা হচ্ছে। ভারতে ৫৫ লাখের বেশি লোক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত মারা গেছে ৯০ হাজার লোক। গত এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে দেশটির অর্থনীতি ২৩.৯ ভাগ হ্রাস পেয়েছে। গত সিকি শতাব্দীর মধ্যে এটিই সবচেয়ে খারাপ অবস্থা।
বিল পাসকে ভারতের কৃষি ইতিহাসে যুগান্তকারী ঘটনা হিসেবে অভিহিত করে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছেন, অনেক দশক ধরে ভারতে কৃষকেরা নানা সীমাবদ্ধতা ও দালালদের পীড়নের শিকার হয়েছে। এসব বৈরী অবস্থা থেকে কৃষকদের মুক্তি প্রদান করার জন্য বিলটি আনা হয়েছে।
তিনি বলেন, বিলটি কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করবে, তাদের সমৃদ্ধি নিশ্চিত করবে।
প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস এই উদ্যোগের তীব্র সমালোচনা করে একে কৃষ্ণ আইন হিসেবে অভিহিত করেছে। তারা জানায়, এটি জনগণের স্বার্থবিরোধী আইন।
দলের নেতা রাহুল গান্ধী বলেন, সরকার এই বিল পাসের মাধ্যমে কৃষকদের বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেছে। যে পন্থায় তা করা হয়েছে, তা গণতন্ত্রের জন্য লজ্জার বিষয়।
কৃষকদের ছাড়াও ক্ষমতাসীন শিবিরেও এই বিলের প্রতিবাদ দেখা যাচ্ছে।
ক্ষমতাসীন জোটের অন্যতম অংশীদার, পাঞ্জাবের প্রতিনিধি ও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রী হরসিমরাত কাউর বাদল এই বিলের প্রতিবাদে গত সপ্তাহে পদত্যাগ করেছেন।
পাঞ্জাব ও হরিয়ানার কৃষকেরা কেন বেশি এই বিলের বিরুদ্ধে সোচ্চার- এমন প্রশ্নের জবাবে নয়া দিল্লিভিত্তিক কৃষি বিশেষজ্ঞ সন্দ্বীপ দাস বলেন, এসব রাজ্যে কৃষকদের ওপর দালালদের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। তারা চায় না, বিদ্যমান ব্যবস্থার অবসান হোক।
সূত্র নিক্কিই এশিয়ান রিভিউ/এসএএম