ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে বিপর্যয়ে ফেলে দিচ্ছেন?
ট্রাম্প - ছবি : সংগৃহীত
আসন্ন মার্কিন নির্বাচনে হেরে গেলে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফলাফল মেনে নেবেন না। আর এতে করে গোটা নির্বাচনই সঙ্কটে পড়ে যাবে। আর তা আমেরিকার যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকেই ভেঙ্গে ফেলতে পারে। এমনই আশঙ্কা প্রকাশ করছে আমেরিকার গণমাধ্যম ।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, চলতি বছরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর তিনি শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন না।
বুধবার সাংবাদিকরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে জানতে চান, নির্বাচনে হেরে গেলে তিনি শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন কিনা। জবাবে ট্রাম্প বলেন, “কী হয় তা দেখার জন্য আমরা অপেক্ষা করছি।”
নির্বাচনে পরাজয় মেনে না নেয়ার কথা ট্রাম্প এই প্রথম বলেননি বরং ২০১৬ সালে নির্বাচনী প্রচারণার প্রথমদিন থেকে ট্রাম্প একথা বলে আসছেন।
সম্প্রতি মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল ফক্স নিউজ ট্রাম্পের কাছে জানতে চেয়েছিল, ৩ নভেম্বরের নির্বাচনের ফলাফল তিনি মেনে নেবেন কিনা। জবাবে ট্রাম্প বলেন, “না, আমাকে দেখতে হবে। দেখুন….আমাকে দেখতে হবে। আমি হ্যাঁ বলতে চাইছি না, আমি না-ও বলতে চাইছি না। গতবারও আমি বলিনি।”
এর আগে তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখার আকাঙ্ক্ষার কথা জানিয়েছেন।
ডেইলি আটলান্টিক পত্রিকার ভাষ্য
আমেরিকার ডেইলি আটলান্টিক পত্রিকায় ২৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত এক সাক্ষাতকারভিত্তিক প্রতিবেদনে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে, এবার আমেরিকার নির্বাচনীব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়বে। প্রতিবেদনটি পূর্ণাঙ্গ আকারে নভেম্বরের ম্যাগাজিনে প্রকাশের জন্য তৈরী হলেও সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক বার্টন গেলম্যানের সাক্ষাতকার নিয়ে মূল বিয়গুলো সংক্ষিপ্ত আকারে বুধবার প্রকাশ করা হয়েছে।
যদি ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়তে রাজি না হন তাহলে কী হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে বার্টন গেলম্যান বলেছেন, এখানে ‘যদি’ বলে কিছু নেই। আসন্ন প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে ৫৩৮ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচক মণ্ডলীর (ইলেক্ট্ররাল কলেজ) কাছ থেকে প্রয়োজনীয় সমর্থন আদায় করতে ব্যর্থ হলে ট্রাম্প ওই ফলাফল মানবেন না এবং সেটা ভণ্ডুল করার জন্য সবরকম কৌশল অবলম্বন করবেন।
ট্রাম্পের এসব অপকৌশল হচ্ছে নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে আদালতে, রাজপথে, ইলেক্ট্ররাল কলেজ ও কংগ্রসের ভেতরে সন্দেহ তৈরী করা। ট্রাম্পের এ দুষ্টুবুদ্ধির লক্ষ্য হচ্ছে “কী জানি কী হয়েছে” এমন একটা সন্দেহের জন্ম দিয়ে অস্থিরতা সৃষ্টি করা। এবং তা থেকে উদ্ধারের জন্য তাকেই ক্ষমতায় থাকা প্রয়োজন- এমন জনমত গড়ে তোলা।
স্পষ্টভাবে বিজয়ী না হয়ে ট্রাম্প চাইলেই কী নির্বাচন ভণ্ডুল করতে পারবেন? কিভাবে?- এমন প্রশ্নের জবাবে বার্টন গেলম্যান বলেছেন, ট্রাম্পের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ রাজ্যগুলোতে তার রিপাবলিকান দলীয় সমর্থকদের প্রথা-বহির্ভূতভাবে নির্বাচক হিসেবে মনোনীত করা। আমেরিকায় জনগণের ভোটে নির্বাচকমণ্ডলী নির্বাচিত হবার প্রথা থাকলেও সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ে বলা আছে, রাজ্যের আইন পরিষদ জনগণের ওই ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে যাকে খুশি নির্বাচকমণ্ডলীর সদস্য মনোনীত করতে পারে।
ট্রাম্পের একজন আইন উপদেষ্টা ও পেনসিলভানিয়া অঙ্গ রাজ্যের তিন রিপাবলিকান নেতা এরকম একটি আপদকালীন পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছেন। তাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে ভোট গণনায় জালিয়াতি হয়েছে এমন জনমত সৃষ্টি করা। দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট মার্কিন কংগ্রেসের হাউস অব রিপ্রজেনটিভ ও সিনেটের নিয়ন্ত্রণ রিপাবলিকানদের হাতে। তাছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ছ’টি অঙ্গ রাজ্যে রয়েছে দোদুল্যমান অবস্থা রয়েছে। ফলে এবারের নির্বাচনী ফলাফল নিয়ে জনমনেও দোদুল্যমান মনোভাব সৃষ্টি করা সহজ হবে ট্রাম ও তার দলের জন্য।
প্রতিবেদক বার্টন বলেছেন, তার ভয় হচ্ছে যে গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টি (গওপ) বলে পরিচিত রিপাবলিকান দলের নির্বাচিত সদস্যদের সামান্য সহযোগিতা পেলেই ট্রাম্প নির্বাচনী ফলাফলকে সন্দেহের ধোঁয়ায় ঢেকে ফেলতে পারবেন। সেটা অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত মীমাংসাহীনভাবে ঝুলিয়ে রাখাও সম্ভব।
মার্কিন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নির্বাচনী ফলাফল গণনাবিষয়ক আইন এমনিতেই একটা বিশৃঙ্খল অবস্থায় আছে। তার সাথে যুক্তি-তর্কের বিস্ফোরণের সংযোগে বিষয়টি একটা অচল অবস্থায় পরিণত হতে পারে।
এ অবস্থায় আগামী নির্বাচনকে একটি প্রথাগত নির্বাচন হিসেবে না ভেবে অসাংবিধানিক চ্যালেঞ্জ বলে ভাবতে হবে এবং সেটাই হতে যাচ্ছে আগামী নভেম্বরের মার্কিন নির্বাচনে।
তা হলে কী হবে?
নভেম্বরের নির্বাচন স্থিতিশীলতার বদলে যদি একটা সামাজিক অস্থিরতা নিয়ে আসে তা হলে কী হবে? অবশ্যই গোটা আমেরিকার ডেমোক্র্যাট দলীয় নেতা-কর্মী-সমর্থকরা তা মেনে নেবেন না। তবে এটা এখন মানা না-মানার মধ্যে নেই। এখন তা নির্বাচনে পরাজিত হয়েও ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এ জন্য রাষ্ট্র ক্ষমতা ব্যবহার করে সকল প্রতিবাদকে থামিয়ে দিতে হবে। এভাবেই বিশ্লেষণ করেছেন ওয়াশিংটন মান্থলি পত্রিকার অনলাইন সম্পাদক মার্টিন লংম্যান।
তবে প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জো বাইডেন বিশ্বাস করেন, এরকম অবস্থায় সেনাবাহিনী ট্রাম্পকে বরং নিরাপত্তার সাথে হোয়াইট হাউস থেকে বের করে নেবে। কিন্তু সত্যি সত্যি যদি ফলাফল নিয়ে একটা মীমাংসাহীন জটিলতার সৃষ্টি হয় তা হলে কী হবে? এমন প্রশ্নের উত্তর পেতে একটি বৃহৎ সম্পদশালী ও বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ বলে দাবিদার আমেরিকার একটি জটিল রাজনৈতিক পালাবদল দেখার জন্য আমেরিকাবাসীর মতোই বিশ্ববাসীকে আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করতে হবে আগামী দুই মাস।