গাজাকে যেভাবে শেষ করে ফেলা হচ্ছে
গাজা - ছবি সংগৃহীত
জাতিসঙ্ঘ বলেছে, ২০২০ সালেই মানুষের বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে ফিলিস্তিনের গাজা। গাজাকে দশকের পর দশক ধরে এমনভাবে ‘ট্রিটমেন্ট’ করা হয়েছে যে অধিবাসীদের আর একটি ‘মার’ দেয়ার আগেই তারা ওখান থেকে পালানোর আয়োজন করছে। হিসাব মতে, এই সময়ের মধ্যেই পুরো গাজা ইসরাইলের দখলে চলে গেলেও কেউ উচ্চবাচ্য করবে না। ইসরাইল যে গাজা দখল করে নেবে এ বিষয়টি ১৪ ডিসেম্বর ২০১৭, নয়া দিগন্তে আমার লেখা ‘জেরুসালেমে ফিলিস্তিনিদের রাজধানীর স্বপ্ন’ কলামে বিস্তারিত উল্লেখ করেছিলাম। আরব বিশ্বের কোনো কার্যকরী প্রতিরোধ নেই বিধায় এসব ঘটনা পরিকল্পনামতো ঘটে চলেছে।
১৯৪৮ সালে আরব-ইসরাইল যুদ্ধের পর মিসর গাজা দখল করে, ১৯৬৭ সালে ছয় দিনের যুদ্ধের সময় ইসরাইল তা দখল করে নিয়ে নিজের জমি বলে দাবি করে। গাজাকে বলা হয় হাশেমের গাজা। তিনি আমাদের নবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর প্রপিতামহ ছিলেন। হাশেম বিন আবদুল মান্নাফ ষষ্ঠ শতাব্দীতে এই নগরে ব্যবসা করতে এসে মৃত্যুবরণ করেন। গাজাকে ‘ঘাজাহ’ ও হিব্রুতে ‘আজা’ বলেও উচ্চারণ করা হয়। কেনানি আরবরা খ্রিষ্টপূর্ব ৩০০০ সালে এই শহরের পত্তন করেন এবং গাজা নামকরণ করেন। শহরটির অবস্থান ভূকৌশলগত দিক দিয়ে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এখানে ফেরাউন, আসিরীয়, পার্সি, গ্রিক, রোম, ক্রুসেড যোদ্ধারা এসেছে এবং প্রথম মহাযুদ্ধে যুদ্ধের প্রান্তর হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। হজরত উমরের রা: শাসনামলে এখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয় সেটি উমরি মসজিদ নামে পরিচিত। ইসরাইল এখন পুরো গাজা উপত্যকা দাবি করে এবং ফিলিস্তিনিরাও পূর্ব জেরুসালেমকে রাজধানী করে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের অংশ হিসেবে গাজা ছাড়তে চায় না। কিন্তু পূর্ব জেরুসালেম দখল হয়েছে দুই বছর হয়। এখন যারা রয়েছেন তাদের সকাল-বিকেল ডাণ্ডাপেটা করা হচ্ছে। প্রতিদিন খবরের কাগজে এসব দেখতে দেখতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে মানুষের চোখ।
গাজাবাসীরা কৃষির ওপর নির্ভরশীল। ড্রোন থেকে বিষাক্ত ওষুধ ছিটিয়ে ফিলিস্তিনি শস্য ধ্বংস করছে ইসরাইল। গাজা উপত্যকার পূর্বাঞ্চলীয় এলাকায় এসব তৎপরতা চালাচ্ছে বেশি। ফিলিস্তিনি কৃষকরা বলেন, ইসরাইলের নিরাপত্তা চৌকিগুলোর আশপাশে তরমুজ, গমসহ শস্য ক্ষেতের ওপর এসব ওষুধ নির্বিচারে ছিটিয়ে দেয়া হয়। এতে ফিলিস্তিনি নিরীহ কৃষকদের ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। শস্যক্ষেতে রাসায়নিক ওষুধ ছিটানো ছাড়াও তা জ্বালিয়ে দেয়া হয়। অবরুদ্ধ গাজার ৩০ শতাংশ কৃষিজমি এমন সব এলাকায় অবস্থিত যেখানে ইসরাইলিরা রাসায়নিক দ্রব্য ছিটায়। কৃষি প্রধানত ভূগর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরশীল। অনেক কুয়া ইসরাইলিরা মাটি ফেলে বন্ধ করেছে, তাই চাষের পানি ও সুপেয় পানি পান করাও কষ্টসাধ্য।
গাজায় একসময় নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হতো। এখন এসব অতীত ইতিহাস। ইসরাইল বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্র ধ্বংস করে দেয়ার পর ইসরাইল থেকে গাজার অধিবাসীরা বিদ্যুৎ পায়। এই বিদ্যুতের জন্য ইসরাইলকে নিয়মিত অর্থ পরিশোধ করতে হয়। কোন পরিস্থিতিতে গাজার লোকজন বিদ্যুৎ ব্যবহার করবে বা অন্ধকারে থাকবে, তা ইসরাইল নির্ধারণ করে। বৈদেশিক অর্থসহায়তা কমে গেলে, গাজার লোকজন অর্থ পরিশোধ করতে পারে না, ফলে ইসরাইল লাখ লাখ গাজার অধিবাসীকে অন্ধকারে রাখে। মাঝে মধ্যে মাসের পর মাস কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎ দেয়া হয়। বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, বিদ্যুৎ ঘাটতি ও ইসরাইলি অবরোধের ফলে অঞ্চলটিতে তীব্র মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
এসবের পরও ভূমধ্যসাগরের উপকূলে গাজার সন্নিকটে একটি কৃত্রিম দ্বীপ নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে ইসরাইল। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর প্রস্তাব অনুসারে এ দ্বীপ নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। নেতানিয়াহু বলেছেন, দ্বীপ নির্মাণের ফলে ইসরাইলে জনসংখ্যার চাপ কমবে এবং ইসরাইলের দখলে থাকা ভূমির পরিমাণ বাড়বে। নেতানিয়াহু আরো বলেছেন, আমাদের একটি উপকূল আছে এবং সেখানে আমরা পানি শোধনাগার ও বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ নানা ধরনের স্থাপনা গড়ে তুলতে পারি। পাশাপাশি এ দ্বীপ আমাদের বাড়তি ভূমি দেবে। ১৯৯৯ সালে ইসরাইল ও হল্যান্ডের একটি যৌথ কমিটি উপকূলের কাছে কৃত্রিম দ্বীপ নির্মাণের সম্ভাব্যতা নিয়ে রিপোর্ট দেয়। দ্বীপ নির্মাণ হলে তা মূলত সামরিক কাজেই ব্যবহৃত হবে। সাবমেরিন ও যুদ্ধজাহাজে ছেয়ে যাবে কৃত্রিম দ্বীপ বন্দর। সমুদ্রপথে কাছাকাছিও কোনো নৌজাহাজ ভিড়তে পারবে না।
গত আগস্ট ১৬ তারিখ ইসরাইলি নেভি গাজার সমুদ্র এলাকাকে ‘ক্লোজড মিলিটারি জোন’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। মাছ ধরা ও বিক্রি করে জীবন বাঁচানোর তাগিদে মৎস্যজীবী কয়েকজন সমুদ্রে মাছ ধরতে গেলে তাদের নৌকাগুলোকে গুলি করে ঝাঁঝরা করে দেয়া হয়। এর মধ্যে একজন ছিলেন ফাতিহ। তিনি কেঁদে বলছিলেন, সংসার চালাব কিভাবে? বর্তমানে গাজায় ৯৫ শতাংশ মৎস্যজীবী নিঃস্ব ও দারিদ্র্যসীমার নিচে।
ইসরাইল রুক্ষ ও উগ্রবাদী দেশ, এটি এখন আর কেউই অস্বীকার করে না। তার পরও কিছু নেতা আছেন যারা অবৈধভাবে অন্যের জমি দখল করা, অবৈধ বসতনির্মাণ, জাতিবিদ্বেষ, অন্যের সম্পদ চুরি করা, গোষ্ঠী দলন-পীড়ন, অবরোধ, নিয়মিত মানুষ হত্যা এসব দেখেও বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইলই একমাত্র গণতান্ত্রিক দেশ। মানুষ হত্যার সিরিজে শেষ বড় ঘটনা হলো ৩০ মার্চ ২০১৮ তারিখে ইহুদিদের পবিত্র পাসওভার অনুষ্ঠানে ১৮ জন বেসামরিক মানুষকে হত্যা করা। কিন্তু সাংবাদিকদের পরিবেশিত তথ্যে প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি। আহতের সংখ্যা ১৭০০ জন। নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘এই সেনারা বিশ্বের সেরা নৈতিকতাসম্পন্ন সেনাদল’। এমনকি ইসরাইলি পত্রিকা হারেৎজ উল্লেখ করেছে, ‘ফিলিস্তিনি জনগণকে হত্যা ইসরাইল খুব হালকাভাবে নিয়েছে যেন কিছু মশা মারা হয়েছে।’
এই হত্যাকাণ্ডের ক্ষত না শুকাতেই এবং জাতিসঙ্ঘের নিন্দাবাদের পর, ৬ এপ্রিল আবার হামলা চালিয়ে ‘নৈতিকতাসম্পন্ন সেনারা’ আরো কিছু নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে। বিশ্ব মিডিয়া কিছুটা সরগরম হলে ট্রাম্পের নির্দেশে আফগানিস্তানের কুন্দুজে ১০১ জন শিশু হাফেজে কুরআনকে সনদ প্রদানের তারিখে বোমা মেরে হত্যা করে বিশ্বের দৃষ্টি সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। আরো দুঃখের বিষয়, ঠিক এ সময়ে সৌদি প্রিন্স সালমান ঘোষণা দিয়েছেন- ‘ইসরাইলের একটি রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকার অধিকার রয়েছে।’ সৌদি রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা বাদশা আবদুল আজিজ ৭৮ বছর আগে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য আমেরিকার সাথে আপস আলোচনা চালিয়েছিলেন এটা সবাই জানেন। সৌদি প্রিন্স আরো বলেছেন, ‘আমাদের উভয়ের (সৌদি আরব ও ইসরাইল) কমন শত্রু (ইরান) রয়েছে।’ তার ব্যবস্থা করা আমাদের বড় কাজ।
গত বছরের অক্টোবরের হিসাবে দেখা যায়, গাজা উপত্যকায় ইসরাইল গোলার আঘাতে যে অজস্র বাড়িঘর ভেঙে দিয়েছে, তা পুনর্নির্মাণের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা পাওয়া গেছে। কিন্তু ইসরাইলি বিভিন্ন বাধার জন্য এখনো ৪ হাজার বাড়ি নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি এবং এক হাজার ৫০০ বাড়ির পুনর্নির্মাণের কোনো খবর নেই। এসব মানুষ তিন বছর ধরে কিভাবে খোলা আকাশের নিচে, ধসে পড়া, বাসের অযোগ্য, পুড়ে যাওয়া ও ভেঙে পড়া বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে, তা কল্পনাই করা যায় শুধু! ওখানে নেই কোনো বিদ্যুৎ, পানি বা গ্যাস সরবরাহ। প্রায় ক্ষেত্রে একটি শুকনো রুটিই সম্বল। চিকিৎসাসেবা যেন সোনার হরিণ। কোথাও কোথাও চিকিৎসার জন্য পরিবারের মেয়েরা সাহায্যকারী সংস্থার সদস্যদের কাছে ‘ইজ্জত’ বিক্রি করে।
গত বছরের শুরু থেকে ইসরাইল অনবরত গাজায় আঘাত করে আসছে। চলতি আগস্ট মাসেও অসংখ্য বোমা বর্ষণ করা হয়েছে। এত আঘাত সত্ত্বেও গাজার প্রতিরোধবাহিনী কোনো প্রত্যাঘাত করতে পারেনি।
ইসরাইলিরা মারাত্মক ঘটনা করলেও জবাব দেয়ার কেউ নেই। গত বছর ইসরাইলিরা ২০ জন ফিলিস্তিনিকে মেরেছে এবং এক হাজার জনকে আহত করেছে। অনেকে বলেন, হামাস ও মাহমুদ আব্বাস নির্যাতনের টোপ মাত্র।
হামাস মিসরের গাজা সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করত। ফিলিস্তিনিদের বিভিন্ন দল-উপদল রাজনীতি ও সমরে পৃথকভাবে কখনো যৌথভাবে কাজ করে। অর্থাৎ এদের মধ্যে একটি স্থায়ী বিরোধ চলমান। বিরোধ ছাড়া এসব এলাকার লোকজন যেন বেঁচে থাকতে পারে না। গাজায় ২০১৭ সালে পিএ নিয়ন্ত্রণ করে। ওই সালে বিভিন্ন দল-উপদলের মধ্যে একটি ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়। তাই বর্ডার থেকে পিএর লোকজনকে বের করা ঐক্যের ওপর বড় একটি আঘাত। আবার ইসরাইল খান ইউনুছে, উত্তর গাজায় রকেট হামলা চালায়, হামাসও রকেট চালায়। মূলত এগুলো কোনো কাজে আসেনি। ইসরাইল ছুতা পেয়ে গাজায় প্রচণ্ড হামলা চালায়। আল জয়তুন ও জাবালিয়া উদ্বাস্তু শিবির মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উল্লেখ্য, যে হামাসের কোনো অবস্থানে হামলা করা হয়নি। তা ছাড়া কাতার ১৫ মিলিয়ন ডলার সহায়তা বন্ধ করে দেয়। ইসরাইল কাতারকে জানায় যে, হামাসের মাধ্যমে ক্যাশ সহায়তা প্রদান করা যাবে। এভাবে সমঝোতা হওয়ার পরও পরদিন ইসরাইলিরা এক ফিলিস্তিনি জেলেকে গুলি করে হত্যা করে। অহরহ এমনই হচ্ছে।
ইসরাইলি পরিকল্পনায় পশ্চিম তীরের ৩০ শতাংশ দখল করা হয়েই আছে এখন ঢাকঢোল পিটিয়ে সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগ, সোজা কথায় ইসরাইলিকরণ। ২০ লাখ মানুষ, যার অর্ধেক শিশু, গাজায় অবরুদ্ধ। জাতিসঙ্ঘের মতে, বসবাসের অযোগ্য এলাকা। তাদের কোথাও পালানোর জায়গাও নেই, এখন ৯৭ শতাংশ পানি সম্পূর্ণ খাওয়ার অযোগ্য, দিনরাত মাত্র ৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ, বেকারত্বের হার বিশ্বের সর্বোচ্চ।
ইসরাইলি দখলদারিত্বের মুখে গাজার সশস্ত্র দলগুলো যুদ্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। হামাস ও আল কাসেম ব্রিগেড। অধিনায়ক আবু ওবায়দা বলেন, সার্বভৌমত্ব ঘোষণা যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। কেননা এরপর গাজা দখল হতে কোনো সময়, প্রস্তুতি ও শক্তির প্রয়োজন হবে না। তাই ফাতাহ ও হামাস জুলাই মাসের ২ তারিখ রামাল্লায় একত্রিত হয়ে যুদ্ধ ঘোষণা দেয়। তারা আরো বলে, পূর্বের সব চুক্তি বাতিল করা হলো, অসলো চুক্তিরও আর প্রয়োজন নেই। উল্লেখ্য, ২০১৮ সাল থেকে গাজাকেন্দ্রিক ফিলিস্তিনিরা কিছুটা শক্তি সঞ্চয় করেছে। যেমন খান ইউনুছে, দক্ষিণ গাজায় ইসরাইলিরা যুদ্ধে পরাজিত হয়েছে। ফলে প্রতিরক্ষামন্ত্রী এভিগডোর লিবারম্যান পদত্যাগ করেন। ২০১৪ সালে ঘরবাড়ি মাটির সাথে মিশিয়ে দেয় ইসরাইল, সেগুলো পুনর্বাসনের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা পাওয়া গিয়েছিল কিন্তু ইসরাইলি অসহযোগিতার কারণে এক হাজার ৫০০ ঘরবাড়ি এখনো তৈরি করা সম্ভব হয়নি। ওই সময় ৪০০ জন নিহত হয়। এক মেজরসহ ১৭ ইসরাইলি সেনা হত্যা ও বেশ কয়েকটি ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান এক দিনে ধ্বংস করে ফিলিস্তিনিরা। এগুলো হঠাৎ স্ফুলিঙ্গ!
২০০৫ সালে ইসরাইল এককভাবে গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার করেছিল, তখন অ্যারিয়েল শ্যারনের সময়। তিনি গাজার মূল্য বুঝতেন, বলতেন, ‘গাজা মধ্যপ্রাচ্যের হংকং’। ইসরাইলি ও ফিলিস্তিনি উভয় এখন এই সেনা প্রত্যাহারের দিনটি পালন করে! এমন কাজ ইসরাইলিরা পশ্চিম তীরে করেছে, গোলান হাইটসেও করেছে। এখন জর্দানের অন্যান্য সীমান্তে বাকি। ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি তো আছেই। ইসরাইলিরা এখন বলছে, এই সেনা প্রত্যাহার বোকার মতো কাজ হয়েছে। ইসরাইলের লক্ষ্যের সাথে এর কোনো মিল নেই। সেনা প্রত্যাহারের ১৫ বছর পরও ইসরাইল বুঝতে পারছে না এই কাজ থেকে কী পেল? লাভ না লোকসান? এ দিকে আরব রাষ্ট্রগুলো লাইন ধরে ইহুদিদের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করছে। মিসর, জর্দান, আমিরাত, বাহরাইন। অন্যরা ফরোয়ার্ড মার্চ করে ব্যারাক থেকে বের হচ্ছে। এটিই এখন বুদ্ধিমানের কাজ। ৬০ বছর সম্পর্ক ছাড়াই বেদম মার খেয়েছে, এখন সম্পর্ক করার পরও একই মার খাচ্ছে। পত্র-পত্রিকাগুলো এর প্রমাণ।
অতীত থেকে আজতক কোনো ইসরাইলি নেতা ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্রের কথা বলেননি। ইহুদি ডারউইনের তত্ত্ব ‘জোর যার মুল্লুক তার’ এই নিয়মই মেনে চলছে। নির্যাতনকলার প্রয়োগ করে কিভাবে নির্জীব করা যায় তা নিয়ে ইসরাইল গবেষণা ও প্রয়োগ করেছে গাজাবাসীদের ওপর। নির্যাতনের বিচিত্র কৌশল নিয়ে লিখিত হয়েছে অনেক দামি বই। দেয়া হচ্ছে ডক্টরেট ডিগ্রি।
গাজা এক্কেবারে শেষ হতে বেশি কিছু বাকি নেই। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ইমার্জেন্সি চলছে। হামাস
গোলাগুলি চালিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব প্রচার করছে এবং
কাতার থেকে আর্থিক সহায়তা নিয়ে দিনযাপন করছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ইসরাইল প্রতি বছর গাজায় ৫০০-৮০০ বার আক্রমণ চালিয়ে মানুষ হত্যা করে। অথচ আরব বিশ্ব
নীরব, মঙ্গলগ্রহে উপগ্রহ পাঠাচ্ছে অর্থহীন উদ্দেশ্যে। ইসরাইল গাজায় একটি সর্বাত্মক যুদ্ধ চায়, যুদ্ধ মানে গাজার পতন।
এখন ইসরাইল যখনই প্রয়োজনবোধ করবে তখনই গাজা অধিকার করতে সক্ষম। কেননা গাজার কোনো প্রাণরস অবশিষ্ট নেই।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব ও গ্রন্থকার