প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন আনোয়ার ইব্রাহিম!
সস্ত্রীক আনোয়ার ইব্রাহিম - ছবি : সংগৃহীত
মালয়েশিয়ার বিরোধীদলীয় নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম বলেছেন, নতুন সরকার গঠনের জন্য তার পক্ষে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আইনপ্রণেতাদের শক্তিশালী সমর্থন রয়েছে। সাত মাস আগে জোটের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জেরে ২০১৮ সালের মে মাসে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হয়।
গতকাল বুধবার সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, তিনি বিভিন্ন দলের অনেক এমপির সাথে আলাপ করেছেন। যারা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিন প্রশাসনের কর্মকাণ্ডে নাখোশ। সরকার গঠনের জন্য আমার পক্ষে জনগণের সমর্থন রয়েছে। মুহিউদ্দিন প্রশাসনের পতনের জন্য আমার পক্ষে প্রয়োজনীয় সংখ্যক আইনপ্রণেতাদের বিপুল ও জোরাল সমর্থন রয়েছে। আমি কেবল চার, পাঁচ বা ছয়টি আসন না, আরো বেশি সংখ্যকের কথা বলছি। এতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে ক্ষমতাচ্যুত করা সম্ভব।
তিনি বলেন, দেশ পরিচালনা করতে আমরা মজবুত ও টেকসই সরকার চাই। সেখানে ন্যাশনাল বারিসানের এমপিগণও থাকতে পারেন। পার্লামেন্ট ভেঙে দেয়ার ক্ষমতা রাজা আগোংয়ের কাছে। গত সোমবার রাতে আমি তার সাথে কথা বলেছি। এটি পেছনের দরজা দিয়ে আসা কোনো সরকার নয়, এটি এমন একটি সরকার যার ম্যান্ডেট এবং সমর্থন রয়েছে। আর তা অবশ্যই মালয়-পন্থী সরকার। কিন্তু প্রত্যেক গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব থাকবে।
সমর্থনকারী আইনপ্রণেতাদের নাম প্রকাশ করেননি আনোয়ার। তবে ২২২ আইনপ্রণেতার মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থন পাওয়ার দাবি করছেন। কত সংখ্যক সমর্থন পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পেয়েছেন, তা প্রকাশ করেননি। কুয়ালালামপুর ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনে চিকিৎসা নিচ্ছেন মালয়েশিয়ার রাজা। সুস্থ হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে রাজার সাথে কথা বলবেন বলেও জানান তিনি। আনোয়ার বলেন, মুহিউদ্দিন সরকার ৭০ জন মন্ত্রী নির্বাচন, পদ বণ্টন, তাদের নিয়োগে যথেষ্ট সময় ব্যয় করেছে। প্রশাসনিক ধীরগতির পাশাপাশি পার্লামেন্টে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতাও দুর্বল।
রাজনৈতিক অস্থিরতা নিরসনে মুহিউদ্দিনের পরামর্শে রাজা নির্বাচনেরও ডাক দিতে পারেন। পার্লামেন্টে মুহিউদ্দিনের সামান্য ব্যবধানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে। কাজেই জোরালো ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় আসতে তিনি নির্বাচনেরও আভাস দিয়েছেন। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে রফতানিমুখী অর্থনীতিকে ভেঙে পড়া থেকে রক্ষা করতে সরকারের পদক্ষেপ নেয়ার ক্ষেত্রে বিলম্ব ঘটতে পারে। করোনা মহামারীতে মালয়েশিয়ার অর্থনীতি ইতোমধ্যে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সপ্তাহব্যাপী রাজনৈতিক অস্থিরতার পর এ বছরের মার্চে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন মুহিউদ্দিন। সে সময় ক্ষমতাসীন পাকাতান হারাপান জোটের বেশ কয়েকজন আইনপ্রণেতা ২০১৮ সালের নির্বাচনে হেরে যাওয়া দলে যোগ দেয়। তাদের এ পদক্ষেপের কারণে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন ৯৫ বছর বয়সী মাহাথির মোহাম্মদ। মাহাথিরের পদত্যাগের পর রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন মুহিউদ্দিন। এর সাত মাসের মাথায় ফের ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখছেন আনোয়ার ইব্রাহীম।
এক বিবৃতিতে আনোয়ার জানিয়েছেন, মালয়েশিয়ার মানুষ এমন নেতৃত্ব চায় যারা করোনার মতো ভয়াবহ পরিস্থিতিতে দেশকে সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বর্তমান সরকারের করোনা মোকাবিলা, আর্থিক মন্দা ঠেকানো এবং জাতিগত উত্তেজনা নিরসনের মতো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো সমাধানের কোনো সক্ষমতা নেই।
সূত্র : রয়টার্স, দ্য স্টার, আনাদোলু ও আলজাজিরা