মার্কিন হেলিকপ্টার বাদ দিয়ে রুশ চপার কেন চায় আফগানিস্তান!
রুশ হেলিকপ্টার! - ছবি : সংগৃহীত
আফগানিস্তানে সামরিক বাহিনীর আধুনিকায়নের কাজ চললেও বিশেষ করে বিমান বাহিনীর (এএএ) জন্য দেশটি রাশিয়ার তৈরি ইউটিলিটি ও কমব্যাট রোটোক্রাফটগুলো সার্ভিসে রেখে দিতে পারে।
২০১৪ সালে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ (ডিওডি) এএএ’র উন্নয়নের জন্য ৭ বিলিয়ন ডলারের কর্মসূচি হাতে নেয়। ১৯৮০’র দশক থেকে কাবুল সেসব সোভিয়েত তৈরি এমআইএল গানশিপ ও পরিবহন হেলিকপ্টার ব্যবহার করে আসছিলো সেগুলোর বদলে সিকোরস্কি ইউএইচ-৬০এ মাল্টিমিশন হেলিকপ্টার (ব্লাক হক) কেনার প্রস্তাব দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এর দুই বছর পর ডিওডি ঘোষণা করে যে তারা আফগান বিমান বাহিনীর বহর থেকে সোভিয়েট/রাশিয়ানদের তৈরি সব হেলিকপ্টার বিদায় করতে চায়।
ওয়াশিংটন কাবুলের কাছে ১৫৯টি ইউএইচ-৬০এ+ বিক্রি করতে চেয়েছিলো। তবে আর্থিক কারণে চলতি বছরের মাঝামাঝি ওই সংখ্যা ৫৩টিতে নামিয়ে আনা হয়। তখন ডিওডি সিদ্ধান্ত নেয় যে আফগান সেনাবাহিনীর স্পেশাল মিশন উইং (এসএমডব্লিউ)-কে রাশিয়ান হেলিকপ্টারের বদলে ২০টি বোয়িংয়ের সিএইচ-৪৭ চিনুক দেয়া হবে।
ডিওডি’র এক রিপোর্টে বলা হয় যে আফগান বিমান বাহিনীকে আধুনিকায়নের পরিকল্পনায় কোনো রদবদল হয়নি এবং এসএমডব্লিউ ২০২৩ সালের মধ্যে সোভিয়েত এমআই-১৭ হেলিকপ্টারের বদলে চিনুক গ্রহণের পরিকল্পনা করেছে।
আফগানিস্তানের মতো পার্বত্য এলায় ইউএইচ-৬০এ+ ততটা কার্যকর নয়। তাই নির্ভরযোগ্য এমআই-১৭ পরিবারের ইউটিলিটি হেলিকপ্টারের বদলে যুক্তরাষ্ট্র কেন পুরনো (রিফারভিশ) ব্লাক হক সরবরাহ করতে চাচ্ছে তা অনেকের বোধগম্য নয়।
এমআইএল প্লাটফর্মগুলো ১৯৮০’র দশক থেকে আাফগানিস্তানের দুর্গম পার্বত্য এলাকার লড়াইয়ে পারদর্শিতা দেখিয়ে আসছে। এর সর্বশেষ সংস্করণ এমআই-১৭ভি ‘হিপ-এইচ’ ৪,০০০ কেজি কার্গো বা পুরোপুরি অস্ত্রসজ্জিত ৩৬ জন সেনা বহন করতে পারে।
তাছাড়া এমআই-১৭ভি-৫ অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য ও কার্যক্ষম।
গত বছর ডিসেম্বরে কংগ্রেসকে দেয়া মার্কিন প্রতিরক্ষা দফতরের ভারপ্রাপ্ত ইন্সপেক্টর জেনারেল সিয়ান ডব্লিউ ও’ডোনেল-এর এক রিপোর্টে বলা হয় যে, আফগান টেকনিশিয়ানরা এমআইএল প্লাটফর্মগুলো রক্ষণাবেক্ষণ, মেরামত ও ওভারহল কাজে ৯৫% দক্ষতা অর্জন করেছে। রিপোর্টে বলা হয়, এমআই-১৭ভি-৫ রক্ষণাবেক্ষণ অনেক সহজ। আফগানরাই এগুলোর কারিগরি কাজের ৯৫% করতে পারে।
একই রিপোর্টে আরো বলা হয়, ২০১৮ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২০ সালের মার্চের মধ্যে ইউএইচ-৬০এ+ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য এএএফের একজনও দক্ষ টেকনিশিয়ান ছিলো না। আফগানরা এখনো ইউএইচ-৬০ হেলিকপ্টারের কোনো রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করছে না বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।
ফলে আফগান বাহিনীর এমআই-১৭ভি-৫ এর বদলে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি রোটারি-উইং প্লাটফর্ম সরবরাহ করা লজিস্টিকস-এর বিবেচনায় অর্থহীন।
আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের ব্লাক হক সরবরাহের কিছু সমস্যাও আছে। ২০২০ সালের শুরু পর্যন্ত এএএফ ১৭-১৮টি ইউএইচ-৬০এ+ হাতে পেয়েছে। আফগান পাইলটরা অভিযোগ করেন যে এগুলোর ভারবহন ক্ষমতা কম, দুর্বল নির্ভরযোগ্যতা, চালানো কঠিন, জ্বালানি খরচ বেশি এবং পার্বত্য এলাকায় তেমন কোনো কাজে আসে না।
পাশাপাশি এমআই-১৭ আফগানিস্তানে জটিল আবহাওয়া পরিবেশে প্রায় সব ধরনের কাজ করতে পারঙ্গম। তাছাড়া এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ সহজ।
একবিংশ শতকের শুরু থেকে নর্দান এলায়েন্সের পাইলটরা একটি এমআই-১৭ ইউটিলিটি হেলেকপ্টার চালাচ্ছে যার একটি ইঞ্জিন এমআইএল এমআই-২৪ গানশিপ থেকে নেয়া। অথচ কোনরকম দুর্ঘটনা ছাড়াই এই হেলিকপ্টার অনেক বছর কাজ করায় অবাক হন অনেকে।
এএএফ কিছু এমআই-২৪ ট্রান্সপোর্ট-কমব্যাট হেলিকপ্টারও চালাচ্ছে। ডিওডি চাচ্ছে এমআই-২৪ হেলিকপ্টারগুলো এ-২৯ সুপার টুকানো লাইট গ্রাউন্ড-অ্যাটাক এয়ারক্রাফট দিয়ে পরিবর্তন করতে। তবে এখনো এই চেষ্টা সফল হয়নি। সুপার টুকানোর অপারেশনাল কস্ট অনেক বেশি। এগুলোর জন্য অত্যাধিক দক্ষ পাইলট ও টেকনিশিয়ান দরকার, যা এমআই-২৪ এর জন্য দরকার নেই।
এরই প্রেক্ষাপটে আফগান বিমান বাহিনীর সোভিয়েট আমলের ও রাশিয়ার তৈরি কমব্যাট ও ইউটিলিটি হেলিকপ্টারগুলো বদলে ফেলার মার্কিন প্রচেষ্টাকে অনেকেই বলছেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। তাছাড়া আফগানিস্তানের পরিবেশের সঙ্গে ইউএইচ-৬০এ+ ও এ-২৯ মানানসই নয়। আফগান বাহিনীর জন্য এমআই-১৭ ও এমআই-২৪ ব্যবহার অব্যাহত রাখাই ভালো হবে।
সূত্র : ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস/এসএএম