যে গোপন প্রক্রিয়ায় লাদাখে সামরিক শক্তি বাড়িয়েছে চীন
সামরিক শক্তি বাড়িয়েছে চীন - ছবি : সংগৃহীত
শুধু লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা নয়। ভারতের নজর এড়িয়ে ডোকালামসহ একাধিক সীমান্ত অঞ্চলে অনবরত শক্তিবৃদ্ধি করে চলেছে চীন। ২০১৭ সালে ডোকালামে উত্তেজনা দানা বাঁধার পরেই সামরিক পরিকাঠামো তৈরির কাজ শুরু করে তারা। ইতিমধ্যে সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় বিমান ঘাঁটি, এয়ার ডিফেন্স, হেলিপোর্টের সংখ্যা দ্বিগুণ করে ফেলেছে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি। সম্প্রতি ‘স্ট্র্যাটফর’ নামে একটি আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনৈতিক বিষয়ক গোয়েন্দা সংস্থার হাতে এই চাঞ্চল্যকর তথ্য আসে।
উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণ করে তারা একটি বিস্তারিত রিপোর্টও প্রস্তুত করেছে। ওই রিপোর্টেই ধরা পড়েছে চীনের যাবতীয় সামরিক কৌশল। তাতে কপালের ভাঁজ চওড়া হয়েছে দিল্লির সাউথ ব্লকের। ‘স্ট্র্যাটফর’-এর বিশ্লেষক সিম ট্যাক জানিয়েছেন, লাল ফৌজের পরিকাঠামো নির্মাণ এখনো শেষ হয়নি। তাদের পরিকল্পনা দীর্ঘমেয়াদি। ভারতকে চাপে রাখতে যাবতীয় কর্মকাণ্ড আরো ছড়াতে চাইছে চীন। গত তিন বছরে সীমান্তবর্তী অঞ্চলে মোট ১৩টি নতুন ঘাঁটি গেঁড়েছে চীন। তার মধ্যে পাঁচটি করে এয়ার ডিফেন্স ও হেলিপোর্ট এবং তিনটি বিমান ঘাঁটি রয়েছে। শুধু তাই নয়, চারটি নয়া হেলিপোর্টের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে গালওয়ান উপত্যকায় সংঘাতের পর।
গালওয়ান-পর্বের অনেক আগে থেকেই চীনা বাহিনীর নজরে ছিল ডোকালাম। চীন-ভুটান সীমান্তের একাধিক সেক্টরে বহু দিন ধরেই তৎপর তারা। আপাতত সেখানকার পশ্চিম সেক্টরে ৩১৮ বর্গ কিমি এলাকা ও মধ্য সেক্টরের ৪৯৫ বর্গ কিমি এলাকাজুড়ে আধিপত্য বিস্তারে চীন উঠেপড়ে লেগেছে। ওইসব এলাকায় চলছে নিয়মিত টহলদারিও। পাশাপাশি সেনা মোতায়নে পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে বলে ওই রিপোর্টে প্রকাশ করা হয়েছে। ‘স্ট্র্যাটফর’-এর তথ্য বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের আসল উদ্দেশ্যই হচ্ছে ভারতীয় সেনার উপর চাপ বাড়ানো। আগামী দিনে সংঘর্ষ বাঁধলে এই পরিকাঠামোকে পুরোদস্তুর কাজে লাগাবে লাল ফৌজ। তাই বাড়তি নিরাপত্তা ও রসদ জোগাতেই আগেভাগে সামরিক ঘাঁটি তৈরিতে জোর দিয়েছে তারা।
ভারত-চীন সীমান্তজুড়ে এই পরিস্থিতির মধ্যেই ফের দু’দেশের সামরিক পর্যায়ে ষষ্ঠ দফার বৈঠক হয়। সোমবার লাদাখের পূর্বাঞ্চলের মোল্ডো এলাকায় দীর্ঘ ১৪ ঘণ্টা ধরে বৈঠক চলে। সকাল ন’টা থেকে রাত ১১টা। দু’দেশের লেফটেন্যান্ট জেনারেলদের মধ্যে সীমান্ত-সমস্যা নিয়ে কথাবার্তা হয়। ভারতের হয়ে বৈঠকে নেতৃত্ব দেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল হরিন্দর সিং। আলোচনার ফলাফল নিয়ে মুখ খোলেনি কোনো পক্ষই। তবে সূত্রের খবর, সীমান্তে সেনা প্রত্যাহারের মাধ্যমে শান্তি ফিরিয়ে আনার বিষয়ে নিজেদের মতামত জানিয়েছে ভারত ও চীন।
এর আগে ১৪ জুলাই এবং ২ আগস্ট যথাক্রমে চতুর্থ ও পঞ্চম দফার বৈঠক হয়েছিল দু’দেশের মধ্যে। তাতে সমাধানসূত্র বেরিয়ে আসেনি। ষষ্ঠ দফার বৈঠকের পর চীন ও ভারত তাদের অবস্থান বদল করবে কি না, সেটাই এখন দেখার।
সূত্র : বর্তমান