রাখাইনে কি শান্তি আসবে?
রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনী - ছবি সংগৃহীত
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব কোণের সীমান্ত ঘেঁষে অস্থিরতা ক্রমেই ঘনিয়ে উঠছে। মিয়ানমার রাখাইন স্টেটে নজিরবিহীন সমরসজ্জা করছে। সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের হস্তক্ষেপের জন্য বৈঠক ডাকার আহ্বান জানিয়েছে। আরাকান আর্মির সাথে সেনাবাহিনীর সঙ্ঘাতও উদ্বেগজনকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। বিচ্ছিন্নতাবাদী যুদ্ধে মিয়ানমারের সেনাক্ষয় এখন রাখাইন স্টেটে নিত্যকার ঘটনা। রোহিঙ্গা ইস্যুতে গণহত্যার যে অভিযোগ আন্তর্জাতিক আদালতে চলমান রয়েছে তা নিয়ে চাপে রয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী ও সু চির সরকার। সামনের নভেম্বরে রয়েছে জাতীয় নির্বাচন।
সব মিলিয়ে অস্থির মিয়ানমার। এর প্রভাবে পুরো অঞ্চলে অস্তিরতা ছড়িয়ে পড়ার আলামত স্পষ্ট হয়ে উঠছে। অস্থিরতার এই চাপকে কাজে লাগিয়ে ভারত এখন রাখাইনে চীনের বিপরীতে একটি বিশেষ অবস্থান তৈরি করতে চাইছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে আন্তর্জাতিক রাজনীতির নানা সমীকরণ।
সর্বশেষ প্রাপ্ত খবর অনুসারে, বাংলাদেশ সীমান্তের এক কিলোমিটারের মধ্যে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ সেনা ক্যাম্প স্থাপন করছে। এর মধ্যে দু’টি ফ্রিগেড, একটি কর্ভেড ও একটি সাবমেরিন রাখাইন পানিসীমায় নিয়ে আসার খবর পাওয়া গেছে। একই সাথে মাল্টিপল রকেট লাঞ্চার সিস্টেম ও এন্টি এয়ারক্রাফট সিস্টেম রাখাইনে নিয়ে আসা হয়েছে বলে জানা গেছে। একটি সূত্র উল্লেখ করেছে হেলিকপ্টারে করে মিয়ানমার বাহিনী অবৈধ ফসফরাস বোমা নিয়ে এসেছে রাখাইনে।
ডি-এসকালেশনের কোনো সম্ভাবনা নেই!
ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ মনে করছে, নিকট-মেয়াদে ডি-এসকালেশনের কোনো সম্ভাবনা নেই রাখাইনে। আরাকান আর্মি মনে করে যে, সুবিধাজনক অবস্থানের মধ্যে থেকে তারা সাফল্যের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। তাতমাদো স্বীকার করবে না যে তারা রাখাইনে জিতছে না আর তারা লড়াইয়ে আরো সেনা, ভারী অস্ত্র এবং বিমানবাহিনীর শক্তি নিয়ে আসছে।
ক্রাইসিস গ্রুপের মতে, মিয়ানমারকে অবশ্যই বুঝতে হবে যে অনেক রাখাইন মানুষ গভীর বিভ্রান্তি সত্ত্বেও সশস্ত্র সংগ্রামে সমর্থন দিচ্ছে এবং বৃহত্তর রাজনৈতিক অধিকার এবং স্বায়ত্তশাসন অর্জনের জন্য তাদের কাছে অন্য কোনো বিকল্প নেই। এই অবস্থায় সরকারের এমন একটি কৌশল দরকার যা রাখাইনের জনগণের অভিযোগগুলোর স্বীকৃতি দেয় এবং তাদের লক্ষ্যগুলো শান্তিপূর্ণভাবে অনুসরণ করার জন্য একটি বিশ্বাসযোগ্য এবং কার্যকর পথের প্রস্তাব দেয়। রাখাইন রাজ্যের পরিস্থিতি পরিচালনায় সামরিক বাহিনীকে প্রধান ভূমিকা দেয়ার সরকারের বর্তমান পদ্ধতির সম্ভাবনা, আশা বা প্রত্যাশা নিয়ে, সময়ের সাথে সাথে পরিস্থিতি আরো উন্নত হবে, এমনটি গভীর সঙ্কটের প্রতিকারের মতো কৌশল নয়।
বলার অপেক্ষা রাখে না যে, কোনো নিষ্পত্তি না হলে রাখাইন রাজ্যের ভবিষ্যৎ অন্ধকারই দেখা যাবে। ইসরাইল-ভারত এখানে সমন্বিত কৌশল নিলে চীনের সাথে সঙ্ঘাত বাড়বে। আর এতে সঙ্কট মোকাবেলা করা আরো কঠিন হয়ে উঠবে।
ফলে যুদ্ধের ময়দানে বিরোধের সমাধান হতে পারবে না। রাখাইনের অভিযোগগুলোর সুরাহা এবং জনগোষ্ঠীকে নতুন আশা দেয়ার জন্য সরকারের একটি রাজনৈতিক কৌশল প্রয়োজন। এটি নির্বাচনী গণতন্ত্র এবং তাদের আকাক্সক্ষা অর্জনে সহায়তা করতে পারে। রোহিঙ্গাদের নির্মূলের চিন্তা না করে তাদের নাগরিক অধিকার দিয়ে সমন্বয়ের কার্যকর চেষ্টা নিতে হবে একই সাথে। তা না হলে এখানকার পরিস্থিতি সবপক্ষের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে।
mrkmmb@gmail.com