প্রচলিত ঘৃণ্য কাজ
প্রচলিত ঘৃণ্য কাজ - ছবি সংগৃহীত
মানুষ সামাজিক জীব। সমাজবদ্ধ হয়ে বসবাস করাটাই মূল লক্ষ্য। এরিস্টটলের মতে, যে সমাজে বাস করে না, সে হয়তো পশু নয়তো দেবতা। সমাজে চলতে ফিরতে আমাদের একে অপরের সহযোগিতা কামনা করতে হয়। কেননা, দশে মিলে করি কাজ, হেরে যেতে নাহি লাজ। কিন্তু এই চলাফেরার মধ্য দিয়ে কত অন্যায় কাজে লিপ্ত হচ্ছি তার কোনো ইয়ত্তা নেই। আমাদের সমাজে কথা বলার মাধ্যমে মানুষ গীবত ও গালমন্দ করে থাকে। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায়, মুখে, কলমে, ইশারা-ইঙ্গিতে কিংবা অন্য কোনো উপায়ে কারো অনুপস্থিতিতে তার এমন কোনো দোষের কথা আলোচনা করা, যা শুনলে সে মনে কষ্ট পেতে পারে তাকে গীবত বলে। যদি এমন কোনো দোষের কথা আলোচনা করা হয়, যা আদৌ ওই ব্যক্তির মধ্যে নেই। তবে সেটা গীবত নয় বরং অপবাদ। আর এসব কিছুই আমাদের সমাজে বিদ্যমান বা প্রচলিত।
আমরা একজনের কথা অন্যজনের কাছে প্রকাশ করে থাকি। যা মোটেও কাম্য নয়। আল কুরআন ও হাদিসে এসব ব্যাপারে অনেক আলোচনা রয়েছে। পবিত্র আল কুরআনে গীবত ও গালমন্দের ব্যাপারে ইরশাদ হয়েছে যে,
* হে মুমিনগণ, তোমরা বেশি ধারণা ও অনুমান করা থেকে বিরত থাকো। কারণ কোনো ধারণা ও অনুমান করা গুনাহের কাজ এবং দোষ অন্বেষণ করো না। আর তোমাদের কেউ যেন গীবত না করে। এমন কেউ কি তোমাদের মধ্যে আছে যে তার নিজের মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়া পছন্দ করবে? অথচ তোমরা তা অপছন্দ করো। সুতরাং,আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী ও পরম দয়ালু। ( সূরা আল হুজরাত : ১২)
আল্লাহ অন্য আয়াতে গালমন্দ সম্পর্কে বলেছেন,
* আল্লাহ মন্দ কথা প্রকাশ করা ভালোবাসেন না তবে কারো ওপর জুলুম করা হয়ে থাকলে অন্য কথা। জেনে রাখো, আল্লাহ সবকিছু শুনেন ও জানেন। (সূরা নিসা : ১৪৮)
গীবত বা পরনিন্দার ব্যাপারে হাদিস শরিফে এরশাদ হয়েছে যে, হজরত আবু সাঈদ রা: হতে বর্ণিত, রাসূল সা: বলেছেন, গীবত হলো ব্যভিচারের চেয়েও মারাত্মক। তখন সাহাবিরা বলতে লাগল, হে আল্লাহর রাসূল সা: গীবত কী করে ব্যভিচারের চেয়ে মারাত্মক? তখন রাসূল সা: বললেন, কোনো ব্যক্তি যদি যেনা করার পর তওবা করে, আল্লাহ তার তওবা কবুল করেন। কিন্তু গীবতকারীকে যার গীবত করা হয়েছে, সে যদি মাফ না করে তাহলে আল্লাহ মাফ করবেন না। (বায়হাকি)
* গীবতের কাফফারা
গীবতের কাফফারা ব্যাপারে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত আনাস রা: হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সা: বলেছেন, গীবতের কাফফারা হলো এই যে, তুমি যার গীবত করেছ তার জন্য মাগফিরাতের দোয়া করবে। (হে আল্লাহ তুমি আমার এবং তার গুনাহ মাফ করে দাও।) (বায়হাকি)
দুনিয়াতে গীবতের সবচেয়ে বড় কুফল হচ্ছে, মানুষের মধ্যে একতা বিনষ্ট হয়। প্রত্যেকের অন্তরে অন্যের প্রতি সন্দেহ ও অবিশ্বাস সৃষ্টি হয়। ভালোবাসা ও সম্প্রীতি বিলুপ্ত হয়। ফলে, সমাজ ও রাষ্ট্রে অশান্তি, বিশৃঙ্খলা পূর্ণ পরিবেশ ও মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়। সুতরাং, আমাদের প্রত্যেকের উচিত এরূপ ঘৃণিত কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখা এবং একে অপরের জন্য মঙ্গল কামনা করা। কেননা, ইসলাম কখনো এরূপ ঘৃণিত কাজ করার সুযোগ দেয়নি। তাই ইসলামের আলোকে আমাদের সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। তাহলে সম্ভব ভ্রাতৃত্বের বন্ধন গড়ে তোলা।
লেখক : শিক্ষার্থী, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা