মক্কা নগরীর মর্যাদা
মক্কা নগরীর মর্যাদা - ছবি সংগৃহীত
মক্কা-মদিনা বললেই যেন হৃদয়ে শিহরণ জেগে ওঠে। মনে এক স্পন্দন দোলা দেয়। কী যেন মধুর আমেজ সৃষ্টি হয়। এক অদৃশ্য আকর্ষণ যেন মক্কা-মদিনার দিকে নিয়ে যায়। পৃথিবীতে যত স্থান আছে তন্মধ্যে সবচেয়ে উত্তম স্থান হলো মক্কা-মদিনা। এই শহরে অবস্থিত পবিত্র মসজিদে হারাম। এটি পৃথিবীর সর্বপ্রথম নির্মিত মসজিদ। হজরত আবু জর গিফারি রা: থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! পৃথিবীতে সর্বপ্রথম কোন মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে? তিনি বললেন, মসজিদে হারাম। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এরপর কোনটি? তিনি বললেন, মসজিদে আকসা।’ (বুখারি : ৬/৪৫৮) এই মসজিদে এক রাকাত নামাজের সওয়াব এক লাখ রাকাতের সমপরিমাণ। হজরত জাবের রা: থেকে বর্ণিত, রাসূল সা: বলেন, ‘আমার এই মসজিদে (মসজিদে নববী) এক রাকাত নামাজ আদায় করা মসজিদে হারাম ব্যতীত অন্য যেকোনো মসজিদে এক হাজার রাকাত নামাজ আদায় করার চেয়ে উত্তম, আর মসজিদে হারামে এক রাকাত নামাজ আদায় করা মসজিদে নববী ব্যতীত অন্য যেকোনো মসজিদে এক লাখ রাকাত নামাজ আদায় করার চেয়ে উত্তম।’ (মুসনাদে আহমদ : ৩/৩৪৩)
আজ কত আফসোস! আমার ধনী মুসলমান ভাইদের জন্য শত আফসোস! তাদের হাতে যখন ভ্রমণের জন্য কিছু সময় বের হয়, তখন তারা আমেরিকা, লণ্ডন, চীন, জাপান ঘুরতে বের হয়ে পড়ে। অথচ তার দরকার ছিল মক্কা-মদিনায় ভ্রমণ করা।
এই শহর অন্যান্য শহরের মতো নয় যে, সেখানে যা ইচ্ছা তা করা যাবে। এর রয়েছে স্বতন্ত্র মর্যাদা। হজরত ইবনে আব্বাস রা: থেকে বর্ণিত, নবী করিম সা: মক্কা বিজয়ের দিন ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা এই শহরের জন্য হারাম করে দিয়েছেন (সম্মানিত করেছেন) না এই হারামের পাতা কাটা যাবে, না শিকারী দেখানো যাবে, না পড়ে যাওয়া বস্তু কুড়ানো যাবে, তবে যে হারানো বস্তুর ঘোষণা দেবে সে ব্যতীত।’ (বুখারি : ১/২১৬) হজরত ইবনে আব্বাস রা: বর্ণিত অপর হাদিসে এসেছে, নবী করিম সা: মক্কা বিজয়ের দিন ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ তায়ালা এই শহরকে হারাম করে দিয়েছেন যখন থেকে তিনি আসমান-জমিন সৃষ্টি করেছেন। এই নগরী হারাম থাকবে আল্লাহ হারাম করার দ্বারা কিয়ামত পর্যন্ত। আমার আগে কারো জন্য এখানে যুদ্ধ করা বৈধ ছিল না। আমার জন্যও বৈধ নয়, তবে দিনের কিছু সময় বৈধতা দেয়া হয়েছিল। এখন থেকে কিয়ামত পর্যন্ত তা হারাম হিসেবে থাকবে।’ (মুসলিম : ১/৪৩৭)
উল্লেখিত হাদিসে হারাম অর্থ সম্মান, অর্থাৎ মক্কা শরিফ হারামের সীমানা সৃষ্টির প্রথম থেকে সম্মানিত। তাতে কোনো ধরনের পাপের কাজ করা যাবে না।
পবিত্র মক্কা জ্ঞানের শহর। এটা এমন এক বরকতময় শহরের নাম যেখান থেকে ইসলামের আলো প্রজ্বলিত হয়েছিল এবং সেখানেই এসে শেষ হবে। হজরত ইবনে ওমর রা: থেকে বর্ণিত, রাসূল সা: বলেন, স্বল্পসংখ্যক ও অপরিচিত অবস্থায় ইসলামের সূচনা হয়েছিল, অচিরেই তা আবার সূচনালগ্নের মতো গরিবি অবস্থায় ফিরে আসবে এবং তা উভয় মসজিদের (মক্কা ও মদিনার) মধ্যবর্তী এলাকায় গুটিয়ে আসবে যেমন সাপ তার গর্তের দিকে গুটিয়ে আসে।’ (মুসলিম : ১/১৩৩) আরেক হাদিসে তো ইমান মদিনার দিকে ফিরে আসবে বলা হয়েছে। হজরত আবু হুরায়রা রা: সূত্রে বর্ণিত, রাসূল সা: ইরশাদ করেন, ‘নিশ্চয়ই (কিয়ামতের পূর্বক্ষণে) ইমান মদিনার দিকে এমনভাবে প্রত্যাবর্তন করবে, যেমন সাপ তার গর্তের দিকে ফিরে আসে।’ (বুখারি : ১৮৭৬)
পবিত্র এ শহরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী দাজ্জাল ঢুকতে পারবে না। তার নৈরাজ্য ও অরাজকতা থেকে মক্কা নগরী নিরাপদ থাকবে। হজরত আনাস ইবনে মালেক রা: সূত্রে বর্ণিত, রাসূল সা: ইরশাদ করেন, ‘এমন কোনো শহর নেই, যেখানে দাজ্জাল প্রবেশ করবে না, তবে মক্কা মোকাররমা ও মদিনা মোনাওয়ারা ছাড়া। কেননা মক্কা ও মদিনার প্রতিটি প্রবেশপথে ফেরেশতারা সারিবদ্ধভাবে পাহারারত থাকবেন। তারপর মদিনা শরিফ তিনবার ভূমিকম্পে কেঁপে উঠবে। এতে সেখান থেকে সব কাফের ও মুনাফিক বের হয়ে যাবে।’ (বুখারি : ১৮৮১)
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সঠিকভাবে সঠিক পদ্ধতিতে সপরিবারে মক্কা-মদিনা জিয়ারত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া আরাবিয়া দারুল উলুম বাগে জান্নাত, চাষাঢ়া, নারায়ণগঞ্জ