জ্বরকে অবহেলা করলেই মহাবিপদ!
জ্বরকে অবহেলা করলেই মহাবিপদ! - ছবি : সংগৃহীত
করোনাভাইরাস প্রতিষেধক টিকা যত দিন না বাজারে আসছে, সংক্রমণ এড়িয়ে থাকাই উচিত৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকে শুরু করে পাড়ার ডাক্তার, প্রত্যেকেই এক কথা বলছেন৷ এবং সারা বিশ্বে কোভিডের টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ যে স্তরে রয়েছে, ২০২১ সালের আগে তা হাতে আসার সম্ভাবনা প্রায় নেই৷ এই পরিস্থিতিতে হামলা শুরু করেছে ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়ার মতো মওশুমি মশাবাহিত রোগ, ঠিক সময়ে যার চিকিৎসা না হলে একই রকম প্রাণঘাতী হতে পারে৷ মানুষ স্বাভাবিক কারণেই বিভ্রান্ত ও আতঙ্কিত৷
কোভিড পরিস্থিতিতে হাসপাতাল, বা ওই ধরনের কোনও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে সামান্য জ্বরের চিকিৎসা করানোটা কতটা নিরাপদ, সেটাও তারা বুঝে উঠতে পারছেন না৷ কিন্তু ভাইরাসবাহিত সংক্রামক রোগ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ যারা, সেই চিকিৎসকেরা বলছেন, চিকিৎসা না করিয়ে ফেলে রাখা, বা ‘আর কটা দিন দেখি’ ভেবে অপেক্ষা করাটাই এক্ষেত্রে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে৷ বরং শুরুতেই রোগ ধরা পড়লে, চিকিৎসা হলে নিরাময়ের সম্ভাবনা অনেক বেশি৷
কলকাতার স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনের সাবেক কর্মকর্তা ডা. অমিতাভ নন্দী বোঝালেন, কেন দ্রুত চিকিৎসা করা জরুরি৷ কারণ, প্রথমত রোগ শনাক্ত করা জরুরি৷ নয়তো, সাধারণ জ্বর, এমনকী পেটখারাপের ক্ষেত্রেও, সেটা কোন রোগের উপসর্গ, তা রক্ত পরীক্ষা না করে বোঝার উপায় নেই৷ কোভিড ও ডেঙ্গু অনেক ক্ষেত্রেই সামান্য জ্বর বা পেট খারাপ দিয়ে শুরু হতে পারে৷
ম্যালেরিয়ার মতো পুরনো রোগের ক্ষেত্রেও উপসর্গ অনেকটাই বদলেছে৷ এবং কোভিড, ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া, তার সঙ্গে সোয়াইন ফ্লু— এই চার মারণ রোগের উপসর্গ এখন অনেকটাই একরকম হতে পারে৷ এমনকি শরীরের ভেতরে রক্তক্ষরণের মতো বাইরে থেকে বুঝতে না পারা উপসর্গগুলোও এই চারটি রোগের ক্ষেত্রে অনেক সময়ই এক হতে পারে৷ কাজেই সঠিক রোগ শনাক্ত করা সবার আগে দরকার৷ অসুস্থ হলেই কাছাকাছি যে ডাক্তার আছেন, তার কাছে যান এবং তার পরামর্শ মতো রক্ত পরীক্ষা করুন৷ বলছেন ডাঃ নন্দী৷ এবং কোভিড বা ডেঙ্গুর এখনো কোনো ওষুধ না থাকলেও তার নির্দিষ্ট চিকিৎসা পদ্ধতি আছে, যা অনেক রোগীকেই সুস্থ করে তুলছে৷ আর ম্যালেরিয়া এবং সোয়াইন ফ্লু'র ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট, কার্যকর ওষুধ আছে, যা ঠিক সময়ে প্রয়োগ করাটা জরুরি৷ কাজেই সামান্য জ্বর হলেও এই পরিস্থিতিতে, এক দিনও দেরি না করে ডাক্তার দেখাতে হবে৷
এই প্রসঙ্গে একটা অত্যন্ত জরুরি পরামর্শ দিয়েছেন ডাঃ অমিতাভ নন্দী৷ বলেছেন, ‘‘নিজেরা ডাক্তারি করবেন না৷ নিজেরা কারিকুরি করবেন না৷ ওই একটু গরম পানি খেলাম, বা পেঁপে পাতার রস খাচ্ছি, বা কেউ বলল, আমি দু'ঘণ্টা রোদ্দুরে দাঁড়াচ্ছি, কেউ বলল চায়ের ‘কাড়া’ খেয়ে আমি কোভিড তাড়াব, কেউ বলল পেঁপে পাতা খেয়ে আমি ডেঙ্গু তাড়িয়ে দেবো— সম্পূর্ণ ভুল এগুলো৷ কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই এসবের৷ এগুলো সবই বুজরুকির দলে পড়ে৷ সুতরাং এগুলো মাথা থেকে দূর করে দিন, ডাক্তারকে দেখান, যথাযথ ব্যবস্থা নিন৷’’
ডা. নন্দী সাহস জুগিয়েছেন এক রোগীর কথা বলে, কোভিড থেকে কিছুটা সেরে ওঠার পর যিনি ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিলেন৷ তাকে যখন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, পাল্স খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না৷ অত্যধিক অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের কারণে প্রায় মৃত্যুর কাছাকাছি চলে গিয়েছিলেন৷ সদ্য তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন৷
সূত্র : ডয়চে ভেলে